সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩
ক.বি.ডেস্ক: বাংলাদেশের বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তন করে তার জায়গায় ভিন্ন একটি আইন আনার সিদ্ধান্তে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এই নতুন আইনটির নামকরণ করা হয়েছে সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশ কয়েকটি ধারায় পরিবর্তন এনে এই আইনটি করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত নতুন আইনে সাজা যেমন কমানো হয়েছে, তেমনি অনেকগুলো অজামিনযোগ্য ধারাকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে।
বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নাম বাদ দিয়ে বিষয়বস্তুতে বড় পরিবর্তন এনে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ নামে নতুন একটি আইন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে এই অপরাধের জন্য কারাদণ্ড বাদ দিলেও জরিমানার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এখন এই অপরাধের জন্য অনধিক ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি সংশোধন করে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ হিসেবে চালু করা হবে। গতকাল সোমবার (৭ আগস্ট) অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, নতুন আইনে মোট ধারা ৬০টি। এটি আগামী সেপ্টেম্বরে সংসদে বিল আকারে পাসের জন্য উত্থাপন করা হবে। সেখানে এটি অনুমোদিত হবে বলেও আশা করছি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার রোধ করার জন্য এই আইনের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। সাংবাদিকদের একটা কথা ছিল, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট থাকলে একটা মানসিক চাপের মধ্যে থাকতে হয়। সেটাকেও আমরা ধর্তব্যের মধ্যে নিয়েছি এবং সেই কারণে এই পরিবর্তনগুলো আনা হয়েছে। এর ফলে সাংবাদিকদের হয়রানি অবশ্যই বন্ধ হবে বলে আশা করছি।
আনিসুল হক আরও বলেন, আগের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের যে খবর প্রকাশ করা হয়েছে সেটি সত্য নয়, পরিবর্তন করা হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, বাতিল করা হয়নি। নামটা নতুন করে দেয়া হয়েছে, কিছু ধারা পরিবর্তন করা হয়েছে। পরিবর্তনটা এতটাই করা হয়েছে, সেখানে যাতে কোন দ্বিধা তৈরি না হয়, সেজন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নাম রহিত করে তার পরিবর্তে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট করা হয়েছে।
ব্যাপারটা হচ্ছে, আইনের পরিবর্তন আনা হয়েছে, নামে পরিবর্তন আনা হয়েছে, অনেক জায়গায় সাজার পরিমাণ বেশি ছিল, সেটা কমানো হয়েছে, যেখানে উপধারা দিয়ে পুনরায় অপরাধ করলে সাজা ডবল হয়ে যেতো, সেটা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করা হয়েছে। কোন সংশয় যাতে তৈরি না হয়, সেই কারণে রহিতকরণ ও হেফাজত করণের বিধান রেখে সাইবার নিরাপত্তা আইন করছি।
তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এর অধীনে যেসব মামলা করা হয়েছিল সেগুলো চলবে, কিন্তু মামলার কার্যক্রম সাইবার নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী হবে। সাইবার নিরাপত্তা আইনে সাইবার নিরাপত্তার জন্য যেসব ধারাগুলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ছিল, সেই ধারা প্রস্তাবিত আইনে অক্ষুণ্ন রাখা হয়েছে। তবে অনেকগুলো ধারা, যেমন মানহানির ধারায় আগে শাস্তি ছিল কারাদণ্ড। প্রস্তাবিত আইনে সেটি পরিবর্তন করে করা হয়েছে জরিমানা। মানহানি মামলার জন্য কারাদণ্ডের বিধান বাদ দিয়ে শুধু জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। মানহানির অভিযোগে মামলা হলে গ্রেপ্তার করা হয় না।
উল্লেখ্য, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৯ ধারায় মানহানির বিষয়টি রয়েছে। এতে বলা আছে, যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে পেনাল কোডের (দণ্ডবিধি) সেকশন ৪৯৯-এ বর্ণিত মানহানিকর তথ্য প্রকাশ বা প্রচার করেন, সে জন্য তিনি অনধিক তিন বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আর যদি কোনো ব্যক্তি উপধারা (১)-এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয়বার বা পুনঃ পুনঃ সংঘটন করেন, তাহলে ওই ব্যক্তি অনধিক পাঁচ বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
