সাম্প্রতিক সংবাদ

সাইবার সচেতনতায় দিনব্যাপী যুব কর্মশালা ও আলোচনা সভা

ক.বি.ডেস্ক: সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) উদ্যোগে এবং সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) ‘‘সাইবার সুরক্ষা কী, কেন এবং কীভাবে’’ শীর্ষক দিনব্যাপী যুব কর্মশালা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিটিআরসি’র প্রধান সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। বক্তব্য রাখেন বিটিআরসি’র ভাইস-চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র, সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগে. জেনা. মো. নাসিম পারভেজ, ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সি’র পরিচালক (অপারেশন) তারেক এম. বরকতউল্লাহ, বাংলাদেশ পুলিশ’র অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার নাজমুল ইসলাম, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র সিএসই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. তৌহিদ ভূঁইয়া। সভাপতিত্ব করেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার এবং সঞ্চালনা করেন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজী মুস্তাফিজ।

মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ব্যক্তি সচেতন না থাকলে সাইবার জগতকে নিরাপদ রাখা খুব কঠিন। সম্প্রতি সরকার কর্তৃক জারিকৃত ২৯টি ক্রিটিক্যাল অবকাঠামো রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও এসব প্রতিষ্ঠান থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের তথ্য প্রাপ্তিতে কোনো বাধা নেই। শিশু-কিশোরদের অনলাইনে নিরাপদ রাখতে অভিভাবকদের প্যারেন্টাল গাইডলাইন অনুসরণের পরামর্শ দেন তিনি। দেশ যত বেশি ডিজিটাল হবে, ডিজিটাল অপরাধ তত বেশি বাড়বে। ডিজিটাল যন্ত্র ব্যবহারকারীদেরও ডিজিটাল অপরাধ মোকাবেলার প্রস্তুতি থাকতে হবে। ডিজিটাল অপরাধ মোকাবেলায় অভিভাবকদের নির্দেশনা অনুসরণ ও প্রয়োগের পাশাপাশি ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে তোলা এবং প্রাথমিক স্তরে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিষয় পাঠ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ এক সময় পর্নো ব্যবহারকারীর তালিকায় শীর্ষ দশের তালিকায় ছিলো। সে অবস্থা এখন পাল্টেছে, শত দেশের তালিকাতেও এখন বাংলাদেশের নাম নেই। প্রত্যেক থানায় ডিজিটাল ক্রাইম ইউনিট থাকা উচিত। আজকে যে সব অপরাধ নিয়ে চিন্তা করতে হয়, ২০ বছর আগে সেগুলোর অস্তিত্ব ছিল না। এখন এই অপরাধের পরিধি যুদ্ধ-বিগ্রহ পর্যন্ত পৌঁছেছে। তার মানে যুদ্ধের একটি হাতিয়ার হয়ে গেছে ডিজিটালি আক্রমণ করা। এক দেশ অস্ত্র দিয়ে যেমন হামলা করে,তেমনি করে ডিজিটাল অস্ত্র দিয়ে হামলা করে তাকে বিপর্যস্ত করার চেষ্টা করে।

শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, বাংলাদেশের বিশাল সংখ্যক মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রযুক্তি বিষয়ে তেমন দক্ষ না হওয়ায় সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছে। সাইবার সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সপ্তাহে সচেতনতা ক্যাম্পেইন করলে তা ফলপ্রসু হবে এবং এ জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসতে হবে। সাইবার সিকিউরিটি, সাইবার অ্যাওয়ারনেস ও সাইবার সেফটি-এই তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

তারেক এম বরকতউল্লাহ বলেন, আগামীতে সক্ষম ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে নিজস্ব প্রযুক্তি ও  প্রযুক্তি সংক্রান্ত গবেষণা ও উন্নয়নের জোর দেয়া হচ্ছে। বিদেশি প্রযুক্তির অনুকরণ কমিয়ে নিজস্ব সক্ষমতা বাড়ানো সাইবার সিকিউরিটির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে পাইরেটেড সফটওয়্যার বেশি ব্যবহার হওয়ায় সাইবার আক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। সাইবার সুরক্ষায় সাইবার ইনসিডেন্ট রিসপন্স টিমের (সিআইআরটি) পরিধি প্রতিটি সেক্টরে বাড়ানোর কাজ চলছে।

নাজমুল ইসলাম বলেন, কলেজগামী শিক্ষার্থীরা ফিশিং, হ্যাকিং এবং সাইবার পর্নোগ্রাফি শিকার বেশি হচ্ছে। বিগত বছরগুলোতে মোবাইলে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত ঘটনায় অপরাধের হার বেশি হলেও বর্তমানে তা অনেকাংশ কমে গেছে। মোবাইল স্ফুফিং তথা মোবাইল নাম্বার ক্লোনের মাধ্যমে সন্দেহজনক কোনো কল আসলে কল কেটে দিয়ে কলব্যাক করলে মোবাইল স্ফুফিং প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। উন্নত দেশের মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসটেন্স ট্রিটির (এমএলএটি) বাস্তবায়ন করা হলে দেশে বসে বিদেশী অবস্থান করা অপরাধীদের সনাক্ত ও গ্রেপ্তার সহজ হবে বলেও জানান তিনি।

ড. তৌহিদ ভূঁইয়া বলেন, দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানসমূহ সাইবার আক্রমণের সম্মুখিন হলে সুনাম ক্ষুন্ন হওয়ার ভয়ে ঘটনাটি গোপন রাখে, ফলে সমস্যাগুলো চিহ্নিত ও সমাধানে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করা যায়না। ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সিকে এ সংক্রান্ত বিষয়ে এগিয়ে আসার পাশাপাশি সাইবার নিরাপত্তায় দক্ষ জনশক্তি তৈরি ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। 

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *