প্রতিবেদন

‘জিরো ডিজিটাল ডিভাইড’ নিয়ে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে বাংলাদেশের দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গি

গত তিন দশকে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে প্রযুক্তিগত বিপ্লবের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক ডিজিটাল বিভাজন মোকাবেলায় বাংলাদেশ ‘ই-কোয়ালিটি সেন্টার ফর ইনক্লুসিভ ইনোভেশন’ নামে একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ নিয়েছে। যেহেতু ডিজিটাল বিপ্লব সারা বিশ্বে মানব জীবনকে সহজ করার পাশাপাশি সামগ্রিক বৈষম্য নিরসনের ক্ষেত্রে অবদান রাখতে এই ডিজিটাল বিভাইড তৈরি করেছে, তাই বাংলাদেশ ‘জিরো ডিজিটাল ডিভাইড’ শিরোনামের একটি প্রচারণার নেতৃত্ব দিচ্ছে যা সকলের জন্য সকল ডিজিটাল সুযোগের সমান সুযোগসহ একটি বিশ্বের কল্পনা করছে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অ্যাসপেয়ার টু ইনোভেট (এটুআই) এর সহযোগিতায় এবং ইউএনডিপি সমর্থিত আইসিটি ডিভিশন, ‘ই-কোয়ালিটি সেন্টার ফর ইনক্লুসিভ ইনোভেশন’ প্রতিষ্ঠার নেতৃত্ব দিচ্ছে। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি), অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ) এবং পিপল-সেন্টার ইন্টারনেট (পিসিআই) এর সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্বের সঙ্গে বাস্তবায়িত এই উদ্যোগের লক্ষ্য হল বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল বিভাজন মোকাবেলা এবং তার বিরুদ্ধে লড়াই করা।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে ৭৮তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে একটি উচ্চ-পর্যায়ের ইভেন্ট চলাকালীন আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ই-কোয়ালিটি সেন্টার ফর ইনক্লুসিভ ইনোভেশন’ উদ্যোগের সূচনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এর সূচনা এমন একটি বিশ্বের দিকে একটি সাহসী এবং উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির ইঙ্গিত দেয় যেখানে ডিজিটাল সুযোগ সকলের জন্য সমানভাবে অ্যাক্সেসযোগ্য হবে। যা ‘জিরো ডিজিটাল ডিভাইড’কে বাস্তবে পরিণত করার প্রতিশ্রুতি দেয়।

আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা ডিজিটাল বিভাজন মোকাবেলা এবং বৈশ্বিক অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রচারের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হিসাবে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। ইউএনডিপি’র সমর্থনে এই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং আইসিটি বিভাগের এটুআই বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী #ZeroDigitalDivide প্রচার শুরু করেছে। এই প্রচারাভিযানটিকে সাহসিকতার সঙ্গে ডিজিটাল ব্যবধানকে সংকুচিত করা এবং ডিজিটাল পরিষেবাগুলোর বিশ্বব্যাপী অন্তর্ভুক্তিকে উন্নীত করার একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ হিসেবে দেখা হয়।

বৈষম্য বোঝার জন্য রোডম্যাপে কঠোর গবেষণা পরিচালনা; স্বল্পোন্নত দেশ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সমর্থন করা এবং ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী উদ্ভাবনের দক্ষিণ-দক্ষিণ (সাউথ সাউথ) প্রযুক্তি স্থানান্তরকে সহজতর করার উদ্যোগ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

নিউইয়র্কে ৭৮তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে একটি উচ্চ-পর্যায়ের ইভেন্ট চলাকালীন আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ই-কোয়ালিটি সেন্টার ফর ইনক্লুসিভ ইনোভেশন’ উদ্যোগের সূচনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন

এটুআই প্রকল্প পরিচালক মো. মামুনুর রশিদ ভূঁইয়া বলেন, ‘‘ই-কোয়ালিটি সেন্টার প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, লিঙ্গ সমতা, প্রতিবন্ধী অন্তর্ভুক্তি এবং অত্যন্ত দরিদ্রদের পাশাপাশি ছোট ব্যবসার জন্য সহায়তার উপর ফোকাস করার চেষ্টা করে। একসঙ্গে, আমরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল বিশ্ব তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যেখানে কাউকে পিছিয়ে না রেখে প্রযুক্তি সকলের জন্য দরজা খুলে দেয়। জিরো ডিজিটাল ডিভাইডসহ বিশ্বের অনুসরণে লক্ষ্য অর্জনের জন্য কেন্দ্রের একটি পরিষ্কার রোডম্যাপ রয়েছে। ২০২৭ সালের মধ্যে আমরা বৈষম্য পরিমাপের জন্য একটি ব্যাপক ই-গুণমান সূচক তৈরি করার লক্ষ্য নির্ধারিন করেছি।’’

সমালোচনামূলক বৈশ্বিক ডিজিটাল চ্যালেঞ্জগুলোর প্রতি আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। কারণ, এটি ডিজিটাল বর্জনের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করতে, বিশ্বব্যাপী সমতা সূচক অন্বেষণ, দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং ভূমিকা পরীক্ষা করার বিষয়ে আলোচনায় বিশ্ব নেতাদের নিযুক্ত করেছে এবং ইন্টারন্যাশনাল আইসিটি ইনোভেশন (আই-৩) মিলে ফান্ড সুবিধা যাচাই করতে ই-কোয়ালিটি সেন্টারের সূচনা হয়েছে। ২০২৭ সালের মধ্যে ই-কোয়ালিটি সূচক তৈরির জন্য গবেষণা করা হচ্ছে। যা ৭০টি দেশকে এর আওতায় নিয়ে আসবে।

এই কেন্দ্রের নীতি এবং গবেষণা উদ্যোগগুলো সঠিকভাবে ডিজিটাল বিভাজনের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করবে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে এগিয়ে নিতে ডেটা-চালিত ইন্টাভেনশনের পক্ষে সমর্থন করবে। এ ছাড়াও কেন্দ্রটি দক্ষিণ-দক্ষিণ প্রযুক্তি স্থানান্তর উদ্যোগের অধীনে উন্নয়নশীল দেশ এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অনুন্নত সম্প্রদায়ের কাছে প্রমাণিত ডিজিটাল সমাধান স্থানান্তর করতে মিতব্যয়ী কিন্তু অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল রূপান্তরে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করবে। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ-দক্ষিণ দেশগুলোর মধ্যে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে এবং সেসব দেশে অনেক প্রযুক্তি হস্তান্তর করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে মো. মামুনুর রশিদ ভূঁইয়া বলেন, ‘‘অন্যান্য দেশগুলোও তাদের সেরা সমাধান আমাদের দেশে হস্তান্তর করে বাংলাদেশে ডিজিটাল বিভাজন দূর করতে অবদান রাখতে পারে। এ ছাড়া ই-কোয়ালিটি সেন্টারের অধীনে আমরা ইতোমধ্যেই আই-৩ ম্যাচিং ফান্ডের সুবিধা পেতে শুরু করেছি। আমরা পাঁচটি দেশ- গাম্বিয়া, উগান্ডা, সাও টোমে এবং প্রিন্সিপে, সোমালিয়া এবং ঘানা-কে প্রযুক্তিগত সহায়তা থেকে উদ্ভাবন তহবিলের অধীনে আর্থিক সহায়তা প্রদান শুরু করেছি। এই দেশগুলো ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের উদ্ভাবিত প্রযুক্তিগুলো পুন:উন্নয়ন না করে বাস্তবায়ন শুরু করেছে। আমরা অন্যান্য দেশের কাছ থেকেও সমাধান নিতে পারি যদি তাদের প্রযুক্তি আরও ভালো হয়। উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তি ভাগ করে নেয়ার মাধ্যমে ই-কোয়ালিটি সেন্টারটি দেশগুলোর ডিজিটাল বিভাজন দূর করতে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করতে সক্ষম হবে বলে আশা করি।’’

কৃতজ্ঞতায়: বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *