প্রতিবেদন সাম্প্রতিক সংবাদ

ভাঁজযোগ্য স্মার্টফোনের ভবিষ্যত উন্মোচনের পথে স্যামসাং

২০১১ সালে স্যামসাং তাদের উন্নতমানের ডিসপ্লের প্রথম সংস্করণ উন্মোচন করে। এটি ব্যবহারকারীদের মোবাইল শিল্পখাতের একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের ইঙ্গিত প্রদান করে। এক দশক পরেই স্যামসাংয়ের ফোন বিক্রির অপ্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি হয়। বাজারে আসার পর, ২০২০ সালে গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড৩ এবং জেড ফ্লিপ৩ স্যামসাংয়ের ভাঁজযোগ্য ডিভাইসগুলোর মোট বিক্রির পরিমাণকে ছাড়িয়ে গেছে। কাউন্টারপয়েন্টের গবেষণা অনুযায়ী, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠানটি চার গুণ বেশি ভাঁজযোগ্য ডিভাইস রপ্তানি করে, যা বিশ্লেষকদের আগাম প্রত্যাশা অনুযায়ী বাজার প্রবৃদ্ধি তিনগুণ ছাড়িয়ে গেছে বলে গবেষণাটিতে উঠে আসে।

গ্যালাক্সি জেড সিরিজের বিপুল সাফল্যই ক্রেতাদের মাঝে স্যামসাংয়ের ভাঁজযোগ্য ফোনগুলোর যে বিপুল চাহিদা রয়েছে সে বিষয়টিকেই প্রমাণ করে। যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সেরা উদ্ভাবন এবং জরুরি অংশীদারিত্ব ভাঁজযোগ্য ফোনকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে তা নিচে আলোচনা করা হলো-

ক্রেতাদের কাছে ভাঁজযোগ্য ফোন পৌঁছে দেয়া: ২০১১ সালে স্যামসাং প্রথম ভাঁজযোগ্য ফোনের ধারণাটি চালু করে। পরে তারা গ্যালাক্সি ফোল্ডের মাধ্যমে ভাঁজযোগ্য ফোনকে বাস্তবে রূপান্তর করে। একমাত্র ভাঁজযোগ্য ফোন হিসেবে স্যামসাং ২০১৯ সালে এটিকে বাজারে নিয়ে আসে। এর পরেই বাজারে আসে গ্যালাক্সি জেড ফ্লিপ। নান্দনিক ডিজাইনের এ ফোনটি ক্রেতাদের ফোন ব্যবহারের পুরনো ধারণায় বদল আনে এবং গ্যালাক্সি জেড ফ্লিপকে একটি আইকনে পরিণত করেছে। এক দশকের অগ্রগতি এবং তিন প্রজন্মের উদ্ভাবনের পর গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড৩ এবং জেড ফ্লিপ৩  স্থায়িত্ব এবং ব্যবহারকারীর ভাঁজযোগ্য ফোন ব্যবহারের উন্নত অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছে। নতুন মানদণ্ড তৈরি করার মাধ্যমে তারা সাধারণভাবে স্মার্টফোনের প্রতি ভোক্তাদের আগ্রহকে পুনরুজ্জীবিত করেছে।

প্রাযুক্তিক উদ্ভাবন: যান্ত্রিক চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে নতুন উপকরণ এবং পদ্ধতি নিয়ে আসার মাধ্যমে ভাঁজযোগ্য ক্যাটাগরি তৈরি করার জন্য স্যামসাংকে নতুন করে ভাবতে হয়। ডিভাইসগুলো তার গ্রাহকদের প্রয়োজনীয়তা যেনো পূরণ করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য বিস্তৃত পরিসরের নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে স্যামসাং। স্যামসাংয়ের আল্ট্রা-থিন গ্লাসসহ ইনফিনিটি ফ্লেক্স ডিসপ্লে বিশ্বের প্রথম ভাঁজযোগ্য গ্লাস ডিসপ্লে। এর অনন্য কাঠামোটি দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট পাতলা নকশা বজায় রেখে ডিজাইন করা হয়। যার জন্য প্রকৌশলীদের অভ্যন্তরীণ উপাদানগুলো সঠিকভাবে স্থাপনের বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে পুনর্বিবেচনা করতে হয়। এর মধ্যে একটি নতুন অভ্যন্তরীণ কুলিং সিস্টেমের পাশাপাশি একটি ডুয়াল-ব্যাটারি সিস্টেম ডিজাইন করা হয়েছে, যা একাধিক শক্তির উতসকে এক হিসেবে অপ্টিমাইজ করে।

ডিভাইসগুলো যেনো কয়েক হাজার ভাঁজ সহনীয় হয় তা নিশ্চিত করার জন্য এবং ধুলো ও ময়লা কণাগুলোকে দূর করতে সুইপার প্রযুক্তির সঙ্গে একটি হাইডওয়ে হিঞ্জ মেকানিজম নকশা করা হয়। হিঞ্জ ডিভাইসগুলোকে এমনভাবে তৈরি করে, যা ফোল্ডেবল ডিভাইসকে কনটেন্ট উপভোগ্য করে তুলতে, ভিডিও কল করা বা হ্যান্ডস-ফ্রি সেলফি তোলার জন্য উপযুক্ত করে তোলে। তৃতীয় প্রজন্মের গ্যালাক্সি ভাঁজযোগ্য ফোনের মাধ্যমে নতুন ভাঁজযোগ্য ফোন উদ্ভাবনের মাধ্যমে স্যামসাং নতুন মাইলফলক অর্জন করে। এ ফোনগুলোতে আইপিএক্স৮ ব্যবহার করা হয়েছে, যা পানি ও ধুলা প্রতিরোধক। অ্যাপ কন্টিনিউটির মতো ফিচারগুলো ফোল্ড বা আনফোল্ডেড মোড, মাল্টি-অ্যাকটিভ উইন্ডো এবং ফ্লেক্স মোডের মধ্যে সহজে রূপান্তর ঘটায়।

ভাঁজযোগ্য ডিভাইসের প্রতি ক্রেতাদের চাহিদা: এ ধরনের উদ্ভাবন ভাঁজযোগ্য ডিভাইসগুলোর প্রতি ক্রেতাদের একটি ক্রমবর্ধমান চাহিদা তৈরি করেছে, যা গ্যালাক্সি পরিবারে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি ব্যবহারকারীকে নিয়ে এসেছে। অন্যান্য স্মার্টফোন থেকে গ্যালাক্সি জেড ফ্লিপ৩ এ উল্লেখযোগ্যভাবে ক্রেতাদের ধাবিত হওয়াই এ বিষয়টিকে প্রমাণ করে। গ্যালাক্সি জেড সিরিজের দুটি ডিভাইসেরই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা নির্দিষ্ট গ্রাহকদেরকে  এমনভাবে আকর্ষণ করে, যা অন্য কোনও স্মার্টফোনে নেই।

স্যামসাংয়ের একটি জরিপ অনুযায়ী, চমককার নকশা, সহজে বহনযোগ্যতা এবং উদ্ভাবনী ভাঁজযোগ্যতার বিষয়টি গ্যালাক্সি জেড ফ্লিপ৩ কেনার পিছনে মূল বিষয় হিসেবে কাজ করে। যারা গোপনীয়তাকে গুরুত্ব দেন এবং স্ক্রিনের সময় নিয়ন্ত্রণ করতে চান তাদের জন্য ডিভাইসটি না খুলে কভার স্ক্রিন ব্যবহারের বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড৩  এর ক্রেতারা এসপেনসহ কন্টেন্ট, মাল্টিটাস্কিং ক্ষমতা এবং অধিক সময় ধরে ফোন ব্যবহারের জন্য এর বড় স্ক্রিনের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। ব্র্যান্ড বা অপারেটিং সিস্টেম পরিবর্তন করা হলেও গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড এবং ফ্লিপ ক্রেতাদের ভাঁজযোগ্য ফোনে যাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে

ভবিষ্যতের ভাঁজযোগ্য ফোনের পথপ্রদর্শক: বিভিন্ন ধরনের উদ্ভাবন নিয়ে এসে স্যামসাং আরও অগ্রগামী প্রযুক্তির মাধ্যমে ভাঁজযোগ্য স্মার্টফোন বিভাগে নেতৃত্ব দিতে চায়। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য স্যামসাং অ্যাপ ডেভেলপার এবং ইন্ডাস্ট্রি পার্টনার যেমন, গুগলের সঙ্গে উন্মুক্ত  সহযোগিতার ক্ষেত্রে গবেষণা ও উন্নয়নে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করছে। বছরের পর বছর ধরে, স্যামসাং এবং গুগল ভাঁজযোগ্য ফোনের অভিজ্ঞতাকে উন্নত করার জন্য সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করছে। ২০২১ সালে কোম্পানিগুলো বড়-স্ক্রিন এবং ভাঁজযোগ্য ডিভাইসের জন্য অ্যাপ তৈরি করার জন্য নির্দেশিকা ঘোষণা করে, যা ফোল্ডেবল আকারের জন্য জিমেইল, ইউটিউব, ডুয়ো এবং ম্যাপস এর মতো অ্যাপগুলোকে অপ্টিমাইজ করে।

ভাঁজযোগ্য সিরিজ দিয়ে, স্যামসাং মোবাইল উদ্ভাবনকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। প্রতিষ্ঠানটি এক্ষেত্রে, সুদূর ভবিষ্যত নিয়ে পরিকল্পনা করছে। তাই প্রত্যাশা করা যাচ্ছে, স্যামসাং এ খাতে নতুন দিগন্তের সূচনা করতে অচিরেই মোবাইলের প্রযুক্তিগত দিকগুলোর নতুন সব সম্ভাবনা উন্মোচন করবে।  

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *