অন্যান্য মতামত সাম্প্রতিক সংবাদ

সম্ভাবনাময় বিপিও শিল্পের উন্নয়নে বাজেট সহায়তার আহ্বান

ক.বি.ডেস্ক: দেশের বিপিও শিল্পের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কলসেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো) সম্প্রতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের পেশকৃত বাজেটের ওপর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। গত বুধবার (২ জুন) অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের ৬ লক্ষ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন। প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বাধিক ব্যবহার এবং গুরুত্ব প্রদানের অংশ হিসেবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে বাজেট ১৭২১ কোটি টাকা পেশ করা হয়। বর্তমান কোভিড পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার ঘোষিত বাজেট ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব হবে বলে প্রত্যাশা করছে বাক্কো।

বাজেট প্রতিক্রিয়ায় সামগ্রিক বিপিও শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে বাক্কো এবারের বাজেটে বেশ কিছু প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে যার আশানুরূপ প্রতিফলন ঘটেনি বলে জানানো হয়। প্রস্তাবিত বাজেটে এই শিল্পকে গুরুত্ব প্রদান করা হয়নি। বাক্কো আশা প্রকাশ করছে আরও কিছু বিষয় এই বাজেটে অন্তর্ভুক্তকরণ জরুরী।

বিপিও খাতের আওতা ও পরিধি বাড়াতে হলে এই এই শিল্পে যে সব ইন্ডাস্ট্রি তাদের কাজ আউটসোর্সিং করবে তাদের বিশেষ প্রণোদনা দিয়ে আকৃষ্ট করতে হবে। কিন্তু এই অপার সম্ভাবনাময় খাতের উন্নয়নে এই ধরনের কোন উদ্যোগ এই বাজেটে পরিলক্ষিত হয়নি।

বিপিও খাতের উন্নয়নে এবং সম্প্রসারণের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সেবার ওপর ৫% হারে উতসে মূল্য সংযোজন কর থেকে অব্যাহতি প্রদানের প্রস্তাবটি আমলে নেওয়া হয়নি। এই শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর গবেষণা ও উন্নয়নে কনসালটেন্সি সার্ভিস, অডিট এবং এডভাইজরি ও সম্মানি খাতের ওপর বিদ্যমান উতসে মূল্য সংযোজন কর শিথিলকরণ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা বাজেটে উপেক্ষিত হয়েছে।

আইটি/আইটিইএস পরিষেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন কমপিউটার ও কমপিউটার সামগ্রী ক্রয়ে মূল্য সংযোজন কর এবং উতস কর থেকে অব্যাহতি প্রদান করার বিষয়টিও বাজেটে বিবেচনা করা হয়নি। আইটি/আইটিইএস শিল্পকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি প্রদান করলেও, করোনা মহামারীর জন্য ক্ষতিগ্রস্ত বিপিও শিল্প এর সুফল ভোগ করতে পারছে না, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আরও ২ থেকে ৩ বছর সময় লাগবে। তাই এই শিল্পকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি প্রদান করার সুপারিশ করেছিল বাক্কো। যা প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি।

বিপিও শিল্পের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, সহজ শর্তে ঋণ এবং সেন্টার অব এক্সিলেন্স গড়ে তোলার জন্য ৩০০ কোটি টাকার তহবিল রাখার প্রস্তাব করা হলেও এই বাজেটে তা উপেক্ষিত হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক প্রদানকৃত ট্যাক্স এক্সেম্পশন সার্টিফিকেট গ্রহণ আইটি/আইটিইএস প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অত্যান্ত সময় সাপেক্ষ কাজ। তাই তথ্যপ্রযুক্তি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় আবেদনের সুযোগ এবং ১ মাসের মধ্যে সার্টিফিকেট প্রদান করা এবং জুন ২০২৪ পর্যন্ত ট্যাক্স এক্সেম্পশন সার্টিফিকেট ইস্যু করার প্রস্তাব বিবেচনা করা হয়নি।

তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত বিপিও, যেখানে অদ্যাবধি ৬০,০০০ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হয়েছে। বর্তমানে দেশীয় বিপিও শিল্পের বাজার ৬০০ মিলিয়ন ডলার, যা ২০২৫ সালের মধ্যে ১ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে ১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। কেননা, প্রযুক্তিনির্ভর কাজের চাহিদা বাড়ায় শিক্ষিত তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যাপক সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে এই খাতে।

বিপিও শিল্পের সর্বোপরি উন্নয়নের ধারা বজায় রাখার জন্য বাক্কো প্রদত্ত প্রস্তাবসমূহ বিবেচনা করে বাজেটের পরবর্তী অধিবেশনে এর অন্তর্ভুক্তি এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও বাজেট বরাদ্দ করা গেলে বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে এবং একইসঙ্গে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী হবে বাংলাদেশ। 

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *