উদ্যোগ সাম্প্রতিক সংবাদ

শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় ‘ভার্চুয়াল ক্লাস’ প্ল্যাটফর্ম

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের নিয়মিত শ্রেণি কার্যক্রম এবং সরকারি-বেসরকারি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসমূহের নিয়মিত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ডিজিটাল মাধ্যমে কার্যকরী ও সহজ উপায়ে চলমান রাখতে ‘ভার্চুয়াল ক্লাস’ প্ল্যাটফর্ম (www.virtualclass.gov.bd) উদ্বোধন করা হয়েছে। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে লাইভ ক্লাস বা ট্রেনিং পরিচালনা, এডুকেশনাল কনটেন্ট ম্যানেমেন্ট, মূল্যায়ন বা অ্যাসেসমেন্ট টুলস, মনিটরিং এবং সমন্বয় করার প্রযুক্তি যুক্ত থাকছে।

গতকাল (২৩ জুন) সঅনলাইনে আয়োজিত এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি এই ‘ভার্চুয়াল ক্লাস’ প্ল্যাটফর্মের উদ্বোধন করেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন। সভাপতিত্ব করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক। সঞ্চালনা করেন করেন এটুআই’র পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী।‘ভার্চুয়াল ক্লাস’ এর ধারণা বিষয়ক একটি উপস্থাপনা প্রদান করেন এটুআই’র পলিসি স্পেশালিস্ট মো. আফজাল হোসেন সারওয়ার।

ভার্চুয়াল ক্লাস ব্যবহার করে যেকোনো ধরনের লাইভ ক্লাস এবং লাইভ ট্রেনিং সেশন পরিচালনা করা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের জন্য নিজস্ব মুক্তক্লাস কনফারেন্সিং সফটওয়্যারের পাশাপাশি জুম, গুগল মিট, মাইক্রোসফ্ট টিমস, ওয়েবেক্স ও অন্যান্য যেকোন ভিডিও কনফারেন্সিং সফটওয়্যার ব্যবহার করা যাবে। পাশাপাশি, শিক্ষা উপকরণ হিসেবে বিভিন্ন ধরনের মাল্টিমিডিয়া এবং অডিও-ভিজুয়্যাল কনটেন্ট, বিভিন্ন ধরণের ডকুমেন্ট (যেমন- পিডিএফ, পাওয়ারপয়েন্ট, ছবি/ডায়াগ্রাম ইত্যাদি) এবং বিভিন্ন ধরনের লিঙ্ক সংযুক্তি আকারে দেওয়া যাবে। এছাড়াও ক্লাস বা ট্রেনিং সেশনে অংশগ্রহণকারীদের দৈনিক হাজিরা, কুইজ, অ্যাসাইনমেন্ট, পরীক্ষা ইত্যাদি নির্ভরযোগ্য মাধ্যমে সুরক্ষিতভাবে এবং সহজে গ্রহণ করা যাবে। শিক্ষার্থী-শিক্ষকের মধ্যে আলোচনা এবং প্রশ্নোত্তরের সুযোগ থাকবে। এমনকি ক্লাসের হাজিরা এবং কুইজ/পরীক্ষার ফলাফল রিপোর্ট আকারে ডাউনলোড করা এবং সংরক্ষণ করা যাবে। যে কোন আগ্রহী বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ভার্চুয়াল ক্লাসরুম ব্যবহার করতে www.virtualclass.gov.bd এই ওয়েবসাইট ভিজিট করতে হবে।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, কোভিডকালীন সময়ে ভার্চুয়াল ক্লাস প্ল্যাটফর্মটি বিকল্প নয় বরং তা শিক্ষার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য অপরিহার্য অনুষঙ্গ ভার্চুয়াল শিক্ষা পদ্ধতি প্রবর্তনে ভার্চুয়াল ক্লাস সহায়ক হবে। কোভিড পরবর্তী (নিউ-নরমাল) পরিস্থিতির সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাইন্ড সেটের পরিবর্তন আসা গুরুত্বপূর্ণ। সামনের দিনেও বিজ্ঞান চর্চায় ল্যাবের পরিবর্তে ডিজিটাল সিমুলেটর ব্যবহার করে নানা ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের একসেস দিতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।

আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক বলেন, প্রযুক্তি নির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে ভার্চুয়াল ক্লাস প্ল্যাটফর্মটি বাংলাদেশের আইসিটি ইন এডুকেশন এবং এডুকেশন ইন আইসিটিকে আরও সমৃদ্ধ করবে। প্রতিমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পাশাপাশি অন্যান্য দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমেও এই প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহারের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার নির্দেশ দেন। বর্তমান তথ্য প্রযুক্তি যুগে জ্ঞান, শিক্ষা ও উদ্ভাবনকে আরও উন্মুক্ত করতে হবে। স্বল্পমূল্যে সর্বোচ্চ গতির ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের ল্যাপটপ দেয়ার কথা উল্লেখ করেন।

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, এই প্ল্যাটফর্মটি শিক্ষার্থীদের ২১ শতকের দক্ষতা উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি উচ্চশিক্ষা পদ্ধতিতে  উন্নয়নের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আরও শক্তিশালী করবে। কোভিড-১৯ এবং পরবর্তী সময়ে উচ্চশিক্ষার সহায়ক হিসেবে ভার্চুয়াল ক্লাস ব্যবহৃত হতে পারে। নতুন ইনোভেশন যুক্ত করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন শিক্ষাকে আরও সহায়ক এবং আরও যুগোপযোগী করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এই প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার শুরু করার নির্দেশ দেন।

অনলাইনে সকল একাডেমিক শ্রেণি কার্যক্রম এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালানোর লক্ষ্যে এই ভার্চুয়াল ক্লাস প্ল্যাটফর্মটি তৈরি করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে এবং আইসিটি বিভাগ ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন এবং ইউএনডিপি’র সহায়তায় পরিচালিত এটুআই’র কারিগরি সহযোগিতায় ভার্চুয়াল ক্লাস প্ল্যাটফর্মটি শুরু হয়েছে।

অনলাইন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এ মান্নান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আবদুস সোবহান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন আহমেদ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আনোয়ার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার, এটুআই’র যুগ্ম প্রকল্প পরিচালক সেলিনা পারভেজ, এটুআই’র চিফ টেকনিক্যাল অফিসার আরফে এলাহিসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়, আইসিটি বিভাগ এবং এটুআই’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ ও গণমাধ্যমকর্মীগণ যুক্ত ছিলেন।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *