প্রতিবেদন সাম্প্রতিক সংবাদ

সম্ভাবনাময় সৌর বিদ্যুত

সৌর বিদ্যুত, নবায়নযোগ্য শক্তির একটি উতস। সূর্যের প্রাকৃতিক আলোকে কাজে লাগিয়েই সৌর বিদ্যুত প্রযুক্তি দিয়ে নিত্য ব্যবহার্য্য বিদ্যুত উতপাদন করা যায়। এক সময়ে, এটাই বিষ্ময় ছিল, সূর্যের শক্তি দিয়ে কিভাবে বিদ্যুত তৈরি হয়! কালের বিবর্তে আজ বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে গেছে এই প্রযুক্তি। আমরা কি জানি মহাকাশে, মহাকাশযানেও আজকাল সৌর বিদ্যুত ব্যবহার হচ্ছে!তাহলে, আমরা কি আমাদের জীবনে প্রাকৃতিক এই বিনা মূল্যের শক্তির উতসকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছি? আমরা কি আমাদের দৈনন্দিন চাহিদার কিছু অংশ সৌর বিদ্যুত দিয়ে চালাতে পারতামনা? এতেতো আমাদের বিদ্যুত বিলই কমতো, কোন লোকসানতো ছিলনা। পরিবেশ বান্ধব, টেকসই সৌর বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটেত কোন বিল নেই। একবার লাগিয়ে নিলে সারা জীবনের জন্য বিনা মূল্যে বিদ্যুত! সরকার সৌর বিদ্যুতকে জনপ্রিয় করতে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা অনেকে সৌর প্রযুক্তি কিনেছি ঠিকই কিন্তু, ব্যবহার করিনি, ফেলে রেখেছি। এমনকি গ্রাম অঞ্চলে কিস্তিতে দেয়া হচ্ছে এই প্রযুক্তি। তাই নিয়ে প্রতিবেদনটি লিখেছেন তাওহীদ হাসান…

মূলত, সৌর বিদ্যুত প্রযুক্তিতে খুব সাধারন কয়েকটি যন্ত্রাংশ প্রয়োজন, যেমন- সোলার প্যানেল, চার্জ কন্ট্রোলার, ব্যাটারি। সৌর প্যানেল (পিভি মডিউল) সরাসরি সূর্যের আলো থেকে বিদ্যুত তৈরি করতে পারে। চার্জ কন্ট্রোলার মূলত সেফটি নিশ্চিত করে। আর ব্যাটারি, চার্জকে ধরে রাখতে পারে। আমাদের এসি আউটপুট দরকার হলে তখন ইনভার্টার ব্যবহার করতে হয়। ওই প্যানেল, ফটোভোলটাইজ প্রতিক্রিয়ায় সূর্য রশ্মির ফোটন থেকে বিদ্যুত তৈরি করে, আমাদের বাসাবাড়ির ব্যবহারিক অ্যাপ্লায়ান্সগুলোতে সরবরাহ করে।

১৮৮১ সালে, চার্লস ফ্রিটস প্রথম বাণিজ্যিক সৌর প্যানেল তৈরি করেছিলেন যা এখন আমাদের বাসা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ, শিল্প কারখানায় পর্যন্ত ব্যবহারের উপযোগী। আমদের দেশের বাইরেতো সৌরশক্তি দিয়ে ইলেক্ট্রিক  কার (গাড়ি) পর্যন্ত চার্জ করা হয়। বাড়ীর ছাদ তৈরীই করা হচ্ছে বিশেষ সোলার প্যানেল দিয়ে। নদীনালা পরিষ্কার রাখতে সৌর চালিত যান ব্যবহার হচ্ছে মালায়েশিয়ায়। কলকারখানার ক্রেন, বিছিন্ন দ্বিপের বিদ্যুতায়ন, ঝু্কিপূর্ন কাজে রোবট কোন খাতে ব্যবহার করা যায়না এই প্রযুক্তি।

বাংলাদেশে অবশ্য কৃষি খাতে সেচের কাজে সৌর পাম্প ব্যবহার হচ্ছে। সৌর প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে তৈরি হচ্ছে সৌর বিদ্যুত প্লান্ট। কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বানিজ্যকভাবে সৌর বিদ্যুত উতপাদন করে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশে এখন ২৩টি নবায়নযোগ্য শক্তিনির্ভর বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের বিভিন্ন পর্যায়ের কাজ চলছে। এসব কেন্দ্রের মোট সম্ভাব্য উতপাদন ক্ষমতা হিসেব করা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৫৫০ মেগাওয়াট।

সৌর বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের উতপাদন খরচও কমে আসছে দিনকে দিন। এখনই জ্বালানি তেলের চেয়ে সৌরবিদ্যুতের উতপাদন খরচ কম। আর বিভিন্ন কারণে সারা বিশ্বেই সৌর শক্তি এখন বাড়তি মনোযোগ পাচ্ছে। বর্তমানে, টেকনাফে ২০, রাউজানে ২৫, জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে ৩, পঞ্চগড়ে ৮ ও কাপ্তাইয়ে ৭ মেগাওয়াটের সৌর বিদ্যুত কেন্দ্র রয়েছে। বাসাবাড়ি ও অফিসে সোলার হোম সিস্টেম বসিয়ে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করা হয়।

টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) হিসেব অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ৫৮ লাখ সৌরবিদ্যুত বা সোলার হোম সিস্টেম রয়েছে। এ থেকে প্রায় ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আসে। বাস্তবতা হচ্ছে, প্রযুক্তি অনেক এগিয়ে গেছে। মহাকাশযানে সৌর বিদ্যুত কাজে লাগালে প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে আমরা কেন পিছিয়ে থাকবো! আসুন, আমরাও বাসাবাড়িতে সৌর বিদ্যুত ব্যবহার করি।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *