‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ বিষয়ে যে কেউ মতামত দিতে পারবেন
ক.বি.ডেস্ক: প্রস্তাবিত ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ বিষয়ে ১৪ দিন পর্যন্ত মতামত গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মতামতের জন্য আইনের খসড়াটি এরই মধ্যে ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সি’র ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছে। যে কেউ এই আইনের বিষয়ে মতামত দিতে পারবেন। আইসিটি বিভাগের পলিসি শাখায় এই মতামত দেয়া যাবে। মতামতের প্রেক্ষিতে সংশোধনের প্রয়োজন হলে সংশোধন করে চূড়ান্ত যাচাই বাছাই শেষে আবারও মন্ত্রী পরিষদ বিভাগে উত্থাপন করা হবে। আর সেখান থেকে অনুমোদন পেলে সংসদে উত্থাপন করা হবে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
এসময় প্রয়োজনে আইনের খসড়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামতও নেবে সরকার। বিভিন্ন মহলে বহুল বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বেশ কিছু পরিবর্তন এনে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ নামে নতুন আইন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই আইনের উদ্দেশ্য সাইবার অপরাধকে দমন করা; বাকস্বাধীনতা বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা নয়। সাইবার নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকরা হয়রানির শিকার হবেন না বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) আগারগাঁও আইসিটি টাওয়ারে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ রহিতকরণ এবং সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। সভাপতিত্ব করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এ সময় আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার, আইসিটি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব মো. মইনুল কবির উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যেসব অপপ্রয়োগ হয়েছে তা নতুন আইনে থাকবে না। ফলে সাইবার নিরাপত্তা আইনে সংবাদ মাধ্যমের আর কেউ হয়রানির শিকার হবেন না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি বাতিল করা হয়নি, বরং পরিবর্তন করা হয়েছে। ‘ডিজিটাল’ এর পরিবর্তে ‘সাইবার’ শব্দ রাখা হয়েছে। আইনটির ব্যাপ্তি বোঝানোর জন্য এটি করা হয়েছে। বিশ্বে সাইবার অপরাধের ধরনেরও পরিবর্তন হয়েছে। সেজন্যই সাইবার নিরাপত্তা নামে আইনটি করেছি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশকিছু ধারায় সাজার পরিমাণ বেশি ছিল, কিছু ধারার অপরাধ জামিন অযোগ্য ছিল। এসব বিষয়ে পরিবর্তন করে সাজার বিধান কমানো হয়েছে। আগের আইনের ২৯ ধারায় জেল ও অর্থদণ্ড ছিল, নতুন আইনে এখন শুধু অর্থদণ্ড রাখা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাশে রেখে নতুন আইনটি দেখলে অবশ্যই এটিকে পরিবর্তিত মনে হবে। অনেকে না জেনেই বলছেন, নতুন বোতলে পুরনো মদ। যারা এটি বলছেন তারা সমালোচনার জন্যই সমালোচনা করছেন, না জেনে করছেন।
তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনে এক পয়সা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে। তার মানে এই নয় যে জরিমানা সব সময় ২৫ লাখ টাকা হবে; বিষয়টি এমন নয়। অপরাধের ধরনের ওপর ভিত্তি করে বিজ্ঞ আদালত জরিমানা করবেন আইনে এটা বলা হয়েছে। সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টে সব ধারায় জামিনযোগ্য করেছি। তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অধিকাংশ ছিল জামিন অযোগ্য। ২৯ ধারা মানহানিতে জেল ছিল এটা এখন নেই, ২১ ধারায় জেল ছিল ১০ বছর এখন এটা কমে ৭ বছর হয়েছে, তাহলে এটা কি নতুন নয়। সাইবার জগত সুরক্ষা ও নিরাপদ করার জন্যই সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩।
প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনে হ্যাকিং, অর্থ ও ডেটা চুরি, প্রপাগান্ডা, সাইবার বুলিংয়ের মতো ঘটনাকে ক্রিমিনাল অফেন্স হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ডেটা সুরক্ষা আইনে ডেটা ব্রিজ হলে ক্রিমিনাল অফেন্স হিসেবে বিবেচনা করা হবে না। ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা দিতে হলে ডেটা নিরাপত্তা আইনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কোন দেশে বিনিয়োগের আগে জানতে চায় ডেটা নিরাপত্তা আইন আছে কী না। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বিভিন্ন দেশ বহু আগেই আলাদা ডেটা সুরক্ষা আইন করেছে। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া হবে এই জন্য সাইবার নিরাপত্তা দরকার। আমাদের ডেটা সুরক্ষায় আইন দরকার। এশিয়া ও ইউরোপীয় অনেক দেশ দেখে এটা করা হয়েছে। প্রযুক্তিগত দক্ষতা উন্নয়নে এটা করেছি।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গত সোমবার (৭ আগস্ট) মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ পরিবর্তনের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’-এর খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়। নতুন আইনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের শাস্তি, জামিন ও জরিমানা-সংক্রান্ত কিছু ধারা নমনীয় করার প্রস্তাব করা হয়েছে।