অন্যান্য মতামত

দেশের আইসিটি খাত নিয়ে চিন্তা ভাবনা

আশা করি, নতুন দায়িত্ব পাওয়া ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম এর চিন্তাধারা অনেক আধুনিকতা হবে। যেহেতু তিনি বর্তমান প্রজন্মেরই সন্তান। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের সামগ্রীক আইসিটি খাত নিয়ে চিন্তা ভাবনা নিয়ে আমার মতামত প্রকাশ করছি। এর মধ্যে কিছু মতামত হয়তো বা অনেকের সঙ্গে মিলে যেতে পারে, আবার কিছু নতুনও পেতে পারেন। মতামতটি লিখেছেন মাইক্রোটার্স’র ফাউন্ডার এবং সিইও নাজমুল হাসান…

যারা শুধু পেপ্যাল নিয়ে আছেন, শুধু পেপ্যাল দিয়ে দেশের আইসিটি খাতের উন্নতি হবে না। পেপ্যাল শুধুমাত্র একটি অংশ। গোড়া থেকে কিছু বিষয় সমাধান না করে আসলে সব দাবি পূরণ করে ফেললেও আইসিটি খাতে কোন উন্নতি হবে না, উল্টো সুবিধাভোগি ব্যক্তির সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। আগে সিস্টেম পরিবর্তন করতে হবে, এর পরে সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে।

নাজমুল হাসান
ফাউন্ডার এবং সিইওমাইক্রোটার্স’

ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা এবং গ্রামে গ্রামে ইন্টারনেট সেবা দ্রুতই চালু করা। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতি আরও বাড়ানো, মোবাইল ইন্টারনেটের মূল্য আরও কমানো, মোবাইল ইন্টারনেটের মেয়াদ যাতে আজীবন থাকে, দ্রুত স্টারলিংক আনার চেস্টা করা বিষয়গুলো অগ্রাধিকার দেয়া। গ্রামে গ্রামে যাতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা খুব দ্রুতই পৈাঁছে যায় তার ব্যবস্থা করা।

দেশের আইসিটি খাতের বিভিন্ন সংগঠনগুলোতে এমন মানুষগুলোকে দায়িত্ব দেয়া যাদের সত্যিকার অর্থে সেই খাতে কাজ করার ভালো রেকর্ড আছে, নিজেদের অনেক অভিজ্ঞতা আছে স্ব স্ব ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে।

ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা ১০০টি আইসিটি খাতের সংগঠন না রেখে, ১টি সংগঠন করে এক ছাতার নিচে সব খাতের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের রেখে, খাত ভিত্তিক দায়িত্ব ভাগ করে দিলে এই খাতের বিকাশ হবে। এই কাজটি অনেক কঠিন, কিন্তু অসম্ভব কিছু না। তবে এটিও খেয়াল রাখতে হবে যে, কখনও ই-কমার্স নিয়ে কাজ করে নাই, তাকে ই-কমার্স খাতের প্রধান বানিয়ে দিলে আগের মতই অবস্থা হবে।

এরপরই নতুন দায়িত্ব পাওয়া ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সে শুধুমাত্র এই খাতের প্রধানদের (নেতাদের) সঙ্গে বসলেই আমাদের পুরো বাংলাদেশের চিত্র উপদেষ্টা এক নিমিশেই পেয়ে যাবে এবং সেই ডেটা অনুযায়ী সমস্যার সমাধান করলেই অনেক সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। যার ফলশ্রুতিতে লাখ লাখ স্কিলফুল ছেলে/মেয়ে বের হয়ে আসবে প্রতি বছরই।

বাংলাদেশে ফ্রীল্যান্সিংয়ের সম্ভাবনা অনেক, কিন্তু যে কখনও এসইও নিয়ে কাজ করে নাই তাকে এসইও বিভাগের মেন্টর বানিয়ে লাখ লাখ ছেলে-মেয়েদের প্রশিক্ষণ করানো হলে বছর শেষে ২ জন স্কিলফুল ব্যাক্তিও পাওয়া যাবে না, সবাই তখন টেন্ডার নিয়ে টাকার অপচয়ের ধান্ধায় থাকবে।

প্রশিক্ষক রাখবে ১০ হাজার টাকায়, আর সরকার থেকে নেয়া হবে ৮০ হাজার টাকা ফি হিসেবে। ১০ হাজার টাকার মেন্টর কি ভ্যালু দিবে তা আমরা যারা এই খাতে অনেক বছর আছি ভালো করেই জানি ও বুঝি। এই জায়গাটা ঠিক না করতে পারলে, ঘুরে ফিরে স্কিলফুল ব্যাক্তি সরকারিভাবে ফ্রীতে ডেভলপ করা সহজ হবে না। আর এটি সহজ করতে পারলে যেমন বেকার কমবে তেমনিভাবে রেমিটেন্সও আসবে। যার মাধ্যমে এক ঢিলে দুই পাখি মরবে।

দেশের ফ্রীল্যান্সারা ব্যাংকের হিসাব খুলতে পেশা নিয়ে বেশ হিমসিম খাচ্ছে। ব্যাংকে রেমিটেন্স আসলে অদ্ভুত সব ডকুমেন্ট চাচ্ছে, এই বিষয়গুলো সহজতর করতে হবে।

পেপ্যাল, স্ট্রাইপসহ অন্যান্য পেমেন্ট গেটওয়েগুলো গুরুত্ব অপরিসিম। শুধু এগুলো দিয়েই কিন্তু বাংলাদেশের আইসিটি খাতের উন্নতি হয়ে যাবে না, এগুলো শুধুমাত্র একটি অধ্যায়। এগুলোর পুর্বে আরও অনেক কাজ আছে, তবে এগুলোও যত দ্রুত সম্ভব আনার চেস্টা করতে হবে। সঙ্গে ক্রিপ্টো অনুমোদন করা যেতে পারে, যেভাবে উন্নত বিশ্বগুলো ক্রিপ্টো ম্যানেজ করে সেভাবে ম্যানেজ করা যেতে পারে, ট্র্যাক করা যেতে পারে।

কোর্সের নামে যারা ৫-১০ হাজার টাকা দিয়ে বিগেনার লেভেলের প্রশিক্ষক রেখে এই আইসিটি খাতের ভাব মূর্তি নস্ট করে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে প্রমানসহ অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে এই খাতের নাম ভাঙ্গিয়ে কোটি কোটি টাকা তুলে নিয়ে যেতে না পারে। মানসম্পন্ন কোর্স যারা করায় তাদের স্যালুট অবশ্যই।

কথায় কথায় গণমাধ্যমে লোক দেখানো বিভিন্ন মিসলিডিং সংবাদ প্রচার বা প্রকাশ থেকে যাতে বিরত থাকে সেটির প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। গণমাধ্যমের কারণে অনেক দ্রুত এই আইসিটি খাতের ভাবমুর্তি নষ্ট হবে যদি মিসলিডিং তথ্য দেয়। যেমন- মাসে কোটি টাকা আয় রাজ মিস্ত্রির, মাসে লাখ টাকা আয় ফ্রীল্যান্সিং করে, ইত্যাদি ইত্যাদি

লেখক: নাজমুল হাসান- ফাউন্ডার এবং সিইও, মাইক্রোটার্স

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *