সফটওয়্যার

অভিষিক্ত হলো বেসিস’র ২০২৪-২৬ এর নবনির্বাচিত ইসি

ক.বি.ডেস্ক: স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দেশীয় সফটওয়্যারের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এবং সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিষিক্ত হলো বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)-এর নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী পরিষদ (২০২৪-২০২৬)।

গতকাল সোমবার (২০ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হয় বেসিস’র ২০২৪-২৬ এর নবনির্বাচিত ইসি’র অভিষেক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম (টিটু)। সম্মানিত অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআই’র সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বেসিস’র বিদায়ী জ্যৈষ্ঠ সহ-সভাপতি সামিরা জুবেরী হিমিকা।

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বেসিস’র সাবেক সভাপতি সরওয়ার আলম, রফিকুল ইসলাম রাউলি, বিদায়ী কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যবৃন্দ, সাবেক কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ, সদস্য কোম্পানির প্রতিনিধিবৃন্দ, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তাবৃন্দ, আইসিটি খাতের বাণিজ্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকবৃন্দ।

বেসিস’র ২০২৪-২৬ এর নবনির্বাচিত ইসি’কে শপথবাক্য পাঠ করান বেসিস’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এ তৌহিদ

অভিষেক অনুষ্ঠানে আয়োজিত বেসিস’র ২০২৪-২৬ এর নবনির্বাচিত ইসি’কে শপথবাক্য পাঠ করান বেসিস’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এ তৌহিদ। শপথ গ্রহণ করেন বেসিস’র সভাপতি রাসেল টি আহমেদ, জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি এম রাশিদুল হাসান, সহ-সভাপতি (প্রশাসন) সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল, সহ-সভাপতি (অর্থ) ইকবাল আহমেদ ফখরুল হাসান, সাত জন পরিচালক- মো. মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল, দিদারুল আলম, এম আসিফ রহমান, ড. মুহম্মদ রিসালাত সিদ্দীক, মীর শাহরুখ ইসলাম, বিপ্লব ঘোষ রাহুল এবং সৈয়দ আব্দুল্লাহ জায়েদ।

রাসেল টি আহমেদ দ্বিতীয় বারেরমতো বেসিস’র সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় অনুষ্ঠানে বিদায়ী সহ-সভাপতি (প্রশাসন) আবু দাউদ খান এবং সহ-সভাপতি (অর্থ) ফাহিম আহমেদ তার হাতে বেসিস’র পতাকা তুলে দেন। পরবর্তীতে বিদায়ী কার্যনির্বাহী পরিষদ, বেসিস নির্বাচন বোর্ড ও আপীল বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্যবৃন্দকে তাদের অবদানের জন্য শুভেচ্ছা উপহার তুলে দেন অতিথিরা।

বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ এর হাতে বেসিস’র পতাকা তুলে দেন বিদায়ী সহ-সভাপতি (প্রশাসন) আবু দাউদ খান এবং সহ-সভাপতি (অর্থ) ফাহিম আহমেদ

উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আইসিটি খাতের কর অব্যাহতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীও এই সুবিধা আপাতত বহাল রাখার বিষয়ে একমত হয়েছেন। আগামী বাজেট উত্থাপনের আগেই বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন। আশা করছি, আইসিটি খাতে কর অব্যাহতি আগামী বাজেটেও বহাল থাকবে। এবারের বাজেটে জানিয়ে দেয়া হবে কতদিন পর্যন্ত কর অব্যাহতি থাকতে পারে। আপনারাও (আইসিটি খাত) যা করছেন, অসাধারণ করছেন। কিন্তু আইসিটি খাতের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাচ্ছে, সেদিকে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।”

তিনি আরও বলেন, “কর অব্যাহতির জন্য আপনারা লড়াই করবেন, ঠিক আছে। কিন্তু এই খাতের সার্বিক যে চিত্র, সেখানে এটা সামান্য একটি বিষয়। এর চেয়ে বড় বড় সমস্যা এই খাতে আছে। সেই সঙ্গে সুযোগও রয়েছে। সমস্যাগুলো দূর করে সুযোগগুলো কাজে লাগানোর জন্য কী কী করা প্রয়োজন, সেই গাইডেন্সটা আপনাদের দিতে হবে। এই খাতের সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে কী কী নীতিসহায়তা প্রয়োজন, সেটা আমাদের বলবেন আপনারা, সরকার সেভাবে আপনাদের সহায়তা দেবে। আপনারা সরকারকে গাইড করবেন যে সরকারের পক্ষ থেকে আপনাদের কী নীতিসহায়তা বা অন্য কোন ধরনের সহায়তা প্রয়োজন। সরকার সেভাবে কাজ করতে চেষ্টা করবে।”

প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক বলেন, “বেসিসের ২৫০০ আইটি সার্ভিস প্রোভাইডার ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠানে প্রায় তিন লক্ষ তরুণের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে তা আমরা ১০ লাখে উন্নীত করতে চাই। বর্তমান সরকার দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই খাতের রফতানি আয় ২০২৯ সাল নাগাদ ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে চাই। তথ্যপ্রযুক্তি খাত বড় হচ্ছে পাশাপাশি সম্ভাবনাও বাড়ছে। সম্ভাবনাময়ী এই আইসিটি খাতে আরও ৫ বছর কর অব্যাহতির অনুরোধ প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি। এখন আমাদেরকে সফটওয়্যার তৈরির পাশাপাশি, স্টার্টআপ, মেশিন লার্নিং, ব্লকচেইন, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সির মত বিষয়গুলাতে তরুণদের দক্ষ করে তুলতে এবং প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতির দিকে দেশকে এগিয়ে নিতে আগ্রহী হতে হবে।”

প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম (টিটু) বলেন, “দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে আমরা আন্তর্জাতিক বাজারে সেটির প্রসারে সহায়তা করে এসেছি এবং আগামীতেও পাশে থাকবো। অবশ্যই বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত একদিন গার্মেন্টস খাতের মতোই বড় খাত হয়ে ওঠবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন হয়েছে এবং সেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পুরোপুরি পেপারলেস হওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় হবে-পুরোপুরি পেপারলেস। অর্থাৎ একটি কোম্পানি খুলতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকলেই ঘরে বসেই সব সনদ পাওয়া যাবে।”

মো. মাহবুবুল আলম বলেন, “তথ্যপ্রযুক্তি খাত বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে এই খাতের ভূমিকা অপরিসীম। দেশীয় সফটওয়্যার শিল্পের উন্নয়নে, স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের ক্ষেত্রে আশা করছি বেসিসের নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী পরিষদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”

রাসেল টি আহমেদ বলেন, “আমরা তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর অব্যাহতির বিষয়ে এনবিআর-এর মধ্যে একটি অংকের অসামঞ্জস্যতা লক্ষ্য করেছি। তাদের মতে তথ্যপ্রযুক্তি খাত ৫ হাজার কোটি টাকা প্রফিট করে এবং ইন্ডাস্ট্রির রেভিনিউ ৫০ হাজার কোটি টাকা। অথচ এই খাতের টোটাল টার্ন ওভার দুই হাজার কোটি টাকা। এই অসামঞ্জস্যতা দূর হলে আমরা মনে করি এই ইন্ডাস্ট্রির ওপর কর আরোপ করতে আইএমএফও আগ্রহ হারাবে। এই খাতের সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করে ২০৩১ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতির দাবি করছি। স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে আইসিটি হবে নিউক্লিয়াস। লোকাল মার্কেটে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে এই লক্ষ্য পৌঁছাতে এবং ৫ বিলিয়ন ডলার টার্গেটের দিকে এগোতে সরকারকে একটি পলিসির মাধ্যমে ২০৪১ সাল নাগাদ তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার টার্গেট নির্ধারণ করা উচিত বলে আমরা মনে করি।”

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের যে সক্ষমতা আছে তা বিবেচনা করে যেন সরকারি এবং বেসরকারি ক্রয়ে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করা না হয়। যে ক্ষেত্রে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ওপর আমরা নির্ভরশীল এবং যেই টেকনোলজিতে আমরা তৈরি হচ্ছি সে ক্ষেত্রে যেন অবশ্যই একটি দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে লোকাল পার্টনার হিসেবে বাধ্যতামূলক করা হয়। এই দুইটা কাজ করলে একই সঙ্গে যেমন আমাদের দক্ষ জনবল তৈরিতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট এবং লোকাল ইনভেস্টমেন্ট আগ্রহী হবে এবং দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করবে।”

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *