উদ্যোগ সাম্প্রতিক সংবাদ

অনলাইনেই শুরু হল ৩য় ‘‘বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড’’

আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ দলের ধারাবাহিক সাফল্যের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদেরকে রোবটিক্সের প্রতি আগ্রহী করে তোলা ও রোবট পরিচালনায় তাদের দক্ষতা যাচাই করার জন্য দেশে তৃতীয়বারের মত অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘‘বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড ২০২০’’ (বিডিআরও২০২০)। কোভিড-১৯-এর বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতিযোগিতাটি এবার আয়োজিত হচ্ছে অনলাইনে। অনলাইনেই আগামী ৯,১০,১৬ এবং ১৭ অক্টোবর আয়োজিত হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) অনলাইনে বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড ২০২০-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক। উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান। এ সময় অতিথি ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক পার্থ প্রতিম দেব।

এ বছর জাতীয় পর্বের জন্য দেশের ৬২টি জেলা থেকে ৭৩১ জন শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেছে। জাতীয় পর্বে বিজয়ীদের মধ্য থেকে পরবর্তীতে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ এবং ওয়ার্কশপের মাধ্যমে নির্বাচিত শিক্ষার্থীরাই আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে। এ বছর রোবট অলিম্পিয়াডে ক্রিয়েটিভ ক্যাটেগরি,রোবট ইন মুভি,রোবট গ্যাদারিং এবং রোবটিক বুদ্ধি (কুইজ প্রতিযোগিতা) এই মোট চারটি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে শুধুমাত্র কুইজ প্রতিযোগিতাটি বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডের জন্য আয়োজিত হবে এবং অন্য তিনটি প্রতিযোগিতা দক্ষিণ কোরিয়ার দ্যেগু শহরে অনুষ্ঠিতব্য ২২তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডের দল গঠনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক পর্বের নিয়ম অনুসারে অনুষ্ঠিত হবে।

প্রতিটি প্রতিযোগিতায় জুনিয়র এবং চ্যালেঞ্জ (সিনিয়র) – এই দুইটি ক্যাটাগরিতে অনুষ্ঠিত হবে। যাদের বয়স ৭-১২ বছরের মধ্যে তারা চ্যালেঞ্জ (সিনিয়র) গ্রুপে এবং যাদের বয়স ১৩-১৮ বছরের মধ্যে তারা জুনিয়র গ্রুপে প্রতিযোগিতা করবে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলের পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন) মোহাম্মদ এনামুল কবির। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড.শামীম আহমেদ দেওয়ান। সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডের সভাপতি অধ্যাপক ড. লাফিফা জামাল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের সাধারন সম্পাদক মুনির হাসান প্রমুখ । আইসিটি বিভাগ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবং বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের ( বিডিওসএন) যৌথ আয়োজনে ৩য় বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক বলেন, মানুষের দৈনন্দিন জীবনে রোবটের চাহিদা বাড়ছে। ইন্টারনেট অব থিংস,হার্ডওয়ার,আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার সবখানেই বেড়ে গেছে। রোবটের এই বিষয়গুলো ভালভাবে শিখে শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মজীবনে প্রবেশ করলে অনেক বিষয়ের দক্ষতার প্রমাণ দিতে পারবে। দেশের ৩শ সংসদীয় এলাকায় বসছে রোবটিক ল্যাব স্কুল অব ফিউচার। রোবটিক্সকে শিক্ষার্থীদের আরও কাছে নিয়ে যেতে বা হাতে কলমে রোবট নিয়ে দক্ষতা বাড়াতে দেশের ৩শটি স্থানে স্কুল অব ফিউচার ল্যাব তৈরি করা হবে।

ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, এ বছর রোবট অলিম্পিয়াডের মূল প্রতিপাদ্য আমাদের দেখিয়ে দেবে,যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থাপনায় কিভাবে রোবটের বিকাশ ঘটানো সম্ভব। পরিবহন ব্যবস্থাপনায় যেকোনো অনাকাক্ষিত ঘটনা এড়াতে তথ্য প্রযুক্তি এবং রোবটের ব্যবহার নিয়ে আমাদের ছেলেমেয়েদের ভাবতে শিখাবে এই রোবট অলিম্পিয়াড। এটি আমাদের জন্য খুলে দেবে এক অনন্য সম্ভাবনার দরজা।

ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, অলিম্পিয়াডের প্রথমবার অংশগ্রহনেই স্বর্ণপদক প্রাপ্তি খুবই উতসাহের। এটা অন্যদের জন্য প্রেরণার উতস। রোবট আমার কাছে জীবন মরণের বিষয়। রোবটের একটি অনুষ্ঠানে থাকার সময় যে হামলার শিকার হয়েছিলাম তারপরও রোবটের ওপর থেকে আমার আগ্রহ কমেনি। সারা পৃথিবীতে রোবটের নানারকম ব্যবহার নিয়ে হৈচৈ শুরু হয়ে গেছে। সুতরাং এসব নিয়ে কাজ বেড়ে যাবে তা বোঝাই যাচ্ছে। তবে,কোভিড না হলে আজকে সবার উজ্জ্বল মুখের দিকে তাকালে যে ভালা লাগা কাজ করত,তা থেকে বঞ্চিত হতে হল।

পার্থ প্রতিম দেব বলেন,প্রতি বছর রোবট অলিম্পিয়াডের অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিগত বছরের তুলনায় এ বছর এই আয়োজন কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকে হতে যাচ্ছে। এখানে অংশগ্রহণকারী  ৭৩১জন ছাত্র-ছাত্রীর চোখের উল্লাস হয়তো দেখা সম্ভব নয়,তবে এই আয়োজনের মাধ্যমে অগ্রগতির আলো দেশের প্রায় সকল জেলায় ছড়িয়ে দিতে পাড়াটাই অনেক বড় অর্জন বলে তিনি মনে করেন।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *