অন্যান্য মতামত

ই-ক্যাব এর আগামী নেতৃত্ব কি মাত্র ১৭% ভোটারের ওপর নির্ভর করছে?

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক মৃধা (সোহেল মৃধা): ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)-এর ২,৮৪২ জন সদস্য, সাড়ে তিন লাখ ই-কমার্স উদ্যোক্তা, যার ফলে বর্তমানে বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতের বাজার বেশ দ্রুত বাড়ছে। আসন্ন নির্বাচনে ই-ক্যাব এর ২,৮৪১ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র ৫০২ জন ভোটার হয়েছেন। এই খাতের এই চিত্র খুব বেমানান, আনুমানিক প্রায় সাড়ে তিন লাখ উদ্যোক্তা ই-কমার্স শিল্পে আছেন। মাত্র ১৭% ভোটার হলেন? বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা বিভিন্ন ধরণের তথ্য দিয়েছে, তা থেকে একটি স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।

কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উল্লেখ করা হলো:
২০২৪ সালে আনুমানিক বাজার মূল্য ছিলো প্রায় ৭.৫ বিলিয়ন থেকে ৯ বিলিয়ন ইউএস ডলার (বিভিন্ন রিপোর্টের গড়)। বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ৮.৩৩% থেকে ১২.৮৪% ধরা হয়েছে। ২০২৮ সালে আনুমানিক বাজার মূল্য ধারণা করা হচ্ছে ৯.৭৫ বিলিয়ন থেকে ১২.৪৪ বিলিয়ন ইউএস ডলারে পৌঁছাবে। ২০২৪ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে এই হার ৬.৭% থেকে ১২% এর মধ্যে থাকতে পারে। আরেকটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২৬ সাল নাগাদ এই বাজার ১.৫ ট্রিলিয়ন টাকায় পৌঁছাতে পারে।

উল্লেখ্য, এই সংখ্যাগুলো বিভিন্ন গবেষণা এবং পূর্বাভাসের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। বাজারের প্রকৃত আকার আরও কিছুটা কমবেশি হতে পারে। তবে এটা স্পষ্ট যে বাংলাদেশের ই-কমার্স খাত একটি শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির পথে রয়েছে।

এই রকম একটি শক্তিশালী অবস্থায় থাকা ই-কমার্স খাতের অ্যাসোসিয়েশন ই-ক্যাব এর আসন্ন নির্বাচনে ২,৮৪২ জন সদস্যের মধ্যে ভোটার সংখ্যা মাত্র ৫০২ জন। যা সর্বমোট সদস্যদের আনুমানিক ১৭% এর মতো। যা সত্যিই দেখতে, বুঝতে গ্রহণযোগ্য হতে কষ্ট হয়। এতো বড় একটি খাতের আগামীর নেতৃত্বে আসা নেতারা মাত্র ১৭% ভোটারের প্রতিনিধিত্ব করে এই খাতের নেতা হবেন সত্যিই খুব আশ্চর্যজনক নয় কি?

হিসাব মতে ৫০২ জন ভোটারের মধ্যে যদি একের অধিক প্যানেল হয় তাহলে প্রার্থী ছাড়া ছাড়া ২০% এর অধিক ভোটার ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হবেন কিনা সন্দেহ, সেই ক্ষেত্রে ১০০ এর অধিক ভোটারের বেশি কেন্দ্রে উপস্থিত থাকবেন না। কেননা অধিকাংশ ভোটার এই নির্বাচনকে গুরুত্বহীনই মনে করছেন।

এটি কোনভাবেই ইনক্লুসিভ নির্বাচন না, যেখানে অধিক সংখ্যক সদস্যের প্রতিনিধিত্ব নাই, সেখানে এটি একটা দায়সারা নির্বাচন, কারও কারও জন্য হয়তো এটি বিশাল সুযোগ অল্প সংখ্যক ভোটারের ভোট পেলেই নেতৃত্বের পর্যায়ে যেতে পারবেন, যা একটি ইনক্লুসিভ নির্বাচন হলে কখনোই সম্ভব হতো না। এরকম একটি নির্বাচন হলে, সরকার, অংশীজন এবং আইসিটি খাতের অন্যান্য অ্যাসোসিয়েশনের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা আমরা হারাবো এমনকি আন্তর্জাতিকভাবে তো বটেই।

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সংগঠনটির বর্তমান এই অবস্থা কেন? কারা এর পেছনে দায়ী? মোট সদস্যের ৫০% ভোটার না হলে; একটি অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু এবং অবাধ নির্বাচনের গ্রহনযোগ্যতা কি শিল্পের মধ্যে থাকবে। যারা আগামীতে নেতৃত্ব দেবেন তারা এই ক্ষুদ্র একটি অংশের সমর্থন নিয়ে কিভাবে এত বড় শিল্পের সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা গড়ে তুলবেন?

নির্বাচন পেছানো হলে, একটি ইনক্লুসিভ নির্বাচনের জন্য যতটুকু সময় নেয়া প্রয়োজন, যত বেশি সংখ্যক সদস্য ভোটার হতে পারবেন সেই সময়টুকু অবশ্যই লাগবে। না না কারণে হয়তো অনেকেই সদস্যপদ রিনিউ করেননি বা ভোটার হতে পারেননি, কিন্তু নির্বাচন পেছানো হলে অবশ্যই এই খাতের অনেকেই এতে অংশগ্রহণ করবেন। এই রকম একটি সার্কাজম থেকে আমি মনে করি আমাদের মুক্ত হওয়া উচিত।

মতামত লেখকের নিজস্ব: মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক মৃধা (সোহেল মৃধা)- প্রতিষ্ঠাতা কিনলে ডটকম, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ই-ক্যাব

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *