সাম্প্রতিক সংবাদ

বাংলাদেশে লিথিয়াম ব্যাটারি উৎপাদনে হুয়াওয়ে ও ওয়ালটনের চুক্তি

ক.বি.ডেস্ক: ওয়ালটন আগামী সাত মাসের মধ্যে টেলিকম লিথিয়াম ব্যাটারি বাংলাদেশে উৎপাদন ও বাজারজাত করবে। প্রতিষ্ঠানটি বছরে ৮০ হাজার ব্যাটারি উৎপাদনে সক্ষম একটি অত্যাধুনিক ও সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় প্রোডাকশন লাইন তৈরি করার পাশাপাশি সারা দেশে এই ব্যাটারির বিক্রয় ও বিক্রয়-পরবর্তী সেবা পরিচালনা করবে। লিথিয়াম ব্যাটারি উৎপাদনের জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা, ডিজাইনের নির্দেশনা, কাঁচামাল ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দিবে হুয়াওয়ে।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় হুয়াওয়ে বাংলাদেশ একাডেমিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের টেলিকমখাতের বিটিএসগুলোতে (বেস ট্রান্সসিভার স্টেশন) ব্যবহারের জন্য লিথিয়াম ব্যাটারি উৎপাদনে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে হুয়াওয়ে ও ওয়ালটন। হুয়াওয়ে বাংলাদেশের সিইও প্যান জুনফেং ও ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এস এম রেজাউল চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। এ ছাড়া ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মঞ্জুরুল আলম অভি, গ্রামীণফোনের টেকনোলজি ডিভিশনের টাওয়ার ইনফ্রার পরিচালক ও প্রধান মো. আব্দুর রায়হান এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক/ক্যারিয়ার সংশ্লিষ্ট প্রায় ৩০ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

বহু বছর ধরে বিটিএস টাওয়ার ব্যাকআপ পাওয়ারের উৎসের জন্য লেড-এসিড ব্যাটারির ওপর নির্ভরশীল। এই ব্যাটারিগুলো লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির মতো পরিবেশবান্ধব নয়। লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির চেয়ে লেড ব্যাটারি ৫০% বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ করে। এগুলো বায়ু ও মাটির দূষণের জন্যও দায়ী। অন্যদিকে লেড-এসিড ব্যাটারির সক্ষমতাও তুলনামূলকভাবে কম। এর কার্যকারিতা মাত্র ৮০-৮৫%। পাশাপাশি স্থায়ীত্ব ও ব্যাটারি এনার্জি ডেনসিটিও কম। বিটিএস-এ এগুলোর জন্য বেশি জায়গা প্রয়োজন হয়।

অপরদিকে, লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির কার্যকারিতা প্রায় ১০০%। এই ব্যাটারি যেমন দীর্ঘস্থায়ী, তেমন এর রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনও কম। পুনর্ব্যবহারের ক্ষেত্রেও এগুলো তুলনামূলকভাবে বেশি পরিবেশবান্ধব। এই কারণে বিটিএস টাওয়ারের ব্যাকআপ পাওয়ার হিসেবে লিথিয়াম ব্যাটারি টেলিকমখাতে ইতোমধ্যেই গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে।

হুয়াওয়ে ও ওয়ালটনের চুক্তি আগামীতে উৎপাদিত উচ্চমানের ইন্টেলিজেন্ট ব্যাটারি টেলিকম শিল্পে খরচ সাশ্রয়, পরিচালনা দক্ষতা বৃদ্ধি ও দুর্যোগ পরবর্তী পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় সহায়ক হবে। এছাড়া এর ব্যবহার বাংলাদেশকে বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সাহায্য করবে।

রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, “বর্তমানে সারাবিশ্বে নবায়নযোগ্য শক্তির একটি বিপ্লব চলছে। ক্রমশ জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে সোলার ফটোভোলটাইক ও বায়ুচালিত শক্তি মতো নবায়নযোগ্য শক্তির প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। আগামীতে উন্নয়নের জন্য লিথিয়াম এনার্জি স্টোরেজ প্রযুক্তি প্রয়োজন অনস্বীকার্য। উভয়পক্ষের এই সহযোগিতা বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান তৈরি ও রপ্তানি পরিসর বাড়ানোর পাশাপাশি দেশের জনগণকে উপকৃত করবে।”

এস এম মঞ্জুরুল আলম অভি বলেন, “উদ্ভাবনই অগ্রগতির চাবিকাঠি। এটি আমাদের প্রতিটি পণ্য, সলিউশন ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপের পিছনে চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে। আমাদের সাম্প্রতিক উদ্যোগ হলো একটি অত্যাধুনিক লিথিয়াম ব্যাটারি উৎপাদন কারখানা স্থাপন। এটি বাংলাদেশের টেলিকম শিল্পে বর্তমানে ব্যবহৃত লেড অ্যাসিড ব্যাটারির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দেবে, যার ফলে সামগ্রিকভাবে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় হ্রাস পাবে। হুয়াওয়ের বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তির সাহায্যে লিথিয়াম ব্যাটারি শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে আমরা একটি সবুজ দেশ গড়ায় ভূমিকা রাখতে পারবো।”

প্যান জুনফেং বলেন, “হুয়াওয়ের লিথিয়াম ব্যাটারি ১৭০টির বেশি দেশে ৩৪০টিরও বেশি অপারেটর ব্যবহার করছে। বিশ্বের টেলিকম খাতে ব্যবহৃত শক্তির এক-তৃতীয়াংশের জন্য এই ব্যাটারি ব্যবহৃত হচ্ছে। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে হুয়াওয়ের লিথিয়াম ব্যাটারির বাজারের শেয়ার ৩৫ শতাংশ। বাংলাদেশে লিথিয়াম ব্যাটারি উৎপাদনের জন্য ওয়ালটনের সঙ্গে আমাদের একটি কৌশলগত চুক্তি হয়েছে। আমি আত্মবিশ্বাসী যে, আমাদের এই যৌথ উদ্যোগ টেলিকম খাতে আরও সমৃদ্ধি নিয়ে আসবে।”

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *