অন্যান্য মতামত

ই-ক্যাব’র নির্বাচনে কর্মকর্তাদের জন্য নতুন করে সংযুক্ত ফি প্রত্যাহারের দাবি

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক মৃধা (সোহেল মৃধা): ই-ক্যাব এর প্রশাসক গত ৯ ফেব্রুয়ারি স্মারক নাম্বার: ই-ক্যাব/নির্বাচন বোর্ড /২০২৫-২০২৭ /০২ এর মাধ্যমে ২০২৫-২৭ মেয়াদে নির্বাচন সংক্রান্ত তথ্যাবলী এবং আচরণবিধি জন্য উন্মুক্ত করেন। যার মধ্যে কয়েকটা পয়েন্ট বা ধারা অতীব প্রয়োজনে সংশোধন করা প্রয়োজন বলে মনে করি।

একজন সদস্য যে একটি সংখ্যা না মাত্র একটি অ্যাসোসিয়েশনের কাছে, তার কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা আপনারা অনুভব করতে পেরেছিলেন ২০২২ সালে নির্বাচনের আগে। ২০২২ সালের নির্বাচনে একজন প্রার্থী হয়ে প্রতিষ্ঠার পর থেকে যারা ই-ক্যাবকে নিজেদের সম্পত্তি বলে আঁকড়েছিলেন তাদের কৌশলের কাছে পরাজিত হয়েও আপনাদের কাছাকাছি থেকে কাজ করার চেষ্টা করেছি।

তা ছাড়া ২০২৪ সালে স্থগিত বা বাতিল হওয়া নির্বাচনে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আপনাদের জন্য কাজ করার চেষ্টা করেছি যদিও বা জুলাই আগস্ট বিপ্লবের জন্য সে নির্বাচন আর হয়নি। এই পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকে আপনাদের জন্য কিছু করতে পারা এবং ভবিষ্যতে করতে পারার চেষ্টা টুকুর জন্য আপনাদের যে ভালোবাসা, সহযোগিতা এবং আন্তরিকতা আপনারা দেখিয়েছিলেন তা আপনাদের কাছে আমি ঋণী হয়ে থাকবো সারাটি জীবন।

ই-ক্যাব পরিপূর্ণভাবে একটি অরাজনৈতিক, ই-কমার্সের প্রকৃত ব্যবসায়ীদের নিয়ে সদস্যবান্ধব একটি সংগঠন হোক সেটি আমার প্রত্যাশা। সঙ্গে সঙ্গে একটি সচ্ছ প্রকৃত ব্যবসায়ীদের নিয়ে ভোটার লিস্ট প্রত্যাশা করছি। (গত বছর বাতিল হওয়া নির্বাচনের ভোটার লিস্টে অনেক অব্যবসায়ী এবং ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত কলা গাছ ভোটার ছিলেন) যা নিয়ে, তখন আমরা অনেকেই কথা বলেছিলাম।

তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার মতে নির্বাচন আরও কিছুটা পরে হলে ভালো হতো সদস্য যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে একটি স্বচ্ছ সদস্য এবং ভোটার তালিকা তৈরি করে তারপর। তা ছাড়া সামগ্রিক এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জাতীয় নির্বাচনের পরে এই কমিটি যে বিলুপ্ত হবে না এর নিশ্চয়তা বা কতটুকু।

নির্বাচন সংক্রান্ত তথ্যাবলী: নম্বর ১ এর ll. বর্ণিত- প্রতিষ্ঠানের হালনাগাদ ইনকাম ট্যাক্স সার্টিফিকেট/রিটার্ন জমা রশিদের ফটোকপি (৩০ শে জুন ২০২৩ পর্যন্ত); এটার সংশোধন দাবি করছি

এখানে উল্লেখ্য যে ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ব্যক্তির ইনকাম ট্যাক্স সার্টিফিকেকেই গ্রহণ করতে হবে এবং সময়কাল সবার জন্যই হালনাগাদ করতে হবে যা হবে ৩০ এ জুন ২০২৪ পর্যন্ত।

Vlll. নতুন ধারা উল্লেখ করতে হবে যে, প্রশাসক কর্তৃক ১২/১/২০২৫ সালে সদস্য নির্দেশিকা ২০২৫ মেনেই সদস্য এবং ভোটার অন্তর্ভুক্তি করতে হবে। (এখানে উল্লেখ্য যে প্রশাসকের কাছে কিছু সংশোধনী প্রস্তাব প্রদান করা হয় ১৭ই জানুয়ারি, ২০২৫)

নির্বাচন সংক্রান্ত তথ্যাবলির নম্বর ১১ এর ক) মনোনয়ন ফি (অফারতযোগ্য) এর প্রসঙ্গে
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন একটা নন প্রফিট ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের একটি অ্যাসোসিয়েশনের যা ২০১৪ সাল থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদনক্রমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। পরিচালনা পরিষদের পরিচালকের জন্য নমিনেশন ফি ৫০ হাজার টাকা এটা অনেক বেশি ৯৯% এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য। ই-ক্যাবের ইতিহাসে প্রথমবারের মত যখন প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচন হয় ২০২২ সালে তখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগ এর সহায়তায় ২৫ হাজার টাকা করা হয়েছিল আমাদেরই আবেদনের প্রেক্ষিতে ৭৫ হাজার টাকা থেকে।

যেটা তখনকার সময়ের একচেটিয়া দখলদারিত্বের ইসি কমিটির চাহিদা মোতাবেকই ছিল ৭৫ হাজার টাকা যেন কম সংখ্যক সদস্য অথবা কোন সদস্যই যেন নির্বাচনে আগ্রহ প্রকাশ না করে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অথবা নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে যেন কমিটি গঠন করা যায়। গত ২০২৪ সালের স্থগিত বা বাতিল নির্বাচনে সময়ও আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে তৎকালীন নির্বাচন বোর্ড নমিনেশন ফি করেছিল ৩০ হাজার টাকা (৫০০০ টাকা এক্সট্রা নেয়া হয়েছিল প্রিন্টেড ভোটার লিস্ট দেয়ার জন্য)।

কিন্তু নতুন এই বৈষম্যহীন বাংলাদেশ এবার সেটা বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে যা বিগত ১০ বছরে যারা এককভাবে ই-ক্যাব কে নিজেদের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছিলেন তাদের নীতি ফলো করে। যা বর্তমান প্রশাসক এবং নির্বাচন বোর্ডের কাছে কোনভাবেই কাম্য নয়। এখানে উল্লেখ খুজে যে বর্তমান প্রেক্ষাপটে জুলাই আগস্ট এর বিপ্লবের পর থেকে ব্যবসায়িক এই মন্দায় কোনভাবেই সম্ভব নয় ছোট উদ্যোক্তাদের এই অ্যাসোসিয়েশনের মেম্বারদের জন্য যারা নির্বাচন করতে আগ্রহী।

কর্মকর্তাদের জন্য সর্বোচ্চ ১ লাখ ২০ হাজার পর্যন্ত করা হল, মানে একজন সদস্য যদি সভাপতি পদের জন্য নির্বাচন করে তাহলে তার অফিসিয়াল খরচ হবে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা, তা ছাড়া সেই প্রার্থী নির্বাচনী খরচ তো আছেই। সব মিলিয়ে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার একটা বাজেট একজন একক প্রার্থী হিসাবে।

একজন উদ্যোক্তা যখন সভাপতি হবেন ১০ লাখ টাকা খরচ করে তখন উনি সেখান থেকে নিজের আর্থিক বেনিফিট বের করার চেষ্টা করবেন, মানে ১০ লাখ টাকা খরচের বিনিময়ে এর কয়েক গুণ আর্থিক বেনিফিট নিশ্চয়ই প্রত্যাশা করবেন। এতে করে একজন সভাপতি হিসেবে অ্যাসোসিয়েশন এবং সদস্যের প্রতি তার যে দায়বদ্ধতা সেটা কমে যাবে ব্যক্তিগত কাজে ফোকাস বেড়ে যাবে এবং উনি অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়বেন। প্রশাসক এবং নির্বাচন বোর্ড আপনারা কেন এটাকে উদ্বুদ্ধ করছেন?

সংশোধন দরকার: ব্যক্তিগতভাবে এবং মেম্বারদের পক্ষ থেকে আমাদের হিসাবে পরিচালক পদে নমিনেশন ফ্রি হওয়া উচিত ২০ হাজার টাকা, কর্মকর্তাগণ নির্বাচিত হবেন পরিচালকদের ভোটে সেখানে আলাদা করে কোন টাকার খেলা হবে না। আমরা নিজেরা নিজেদেরকে অসৎ হওয়ার জন্য তো অনুপ্রাণিত করতে পারি না। আশা করি নির্বাচন বোর্ড এবং প্রশাসক নিশ্চয়ই এই বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

নতুন ভোটার হিসেবে যারা আসছেন বা অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন আপনাদেরকেও স্বাগতম, আপনাদের সিদ্ধান্তেই পাল্টে দিতে পারে সবকিছু, পরিবর্তন আপনাদের দ্বারাই সম্ভব। স্মার্ট ই-ক্যাব এবং ই-কমার্স বিনির্মাণে আপনাদের ভূমিকা থাকবে অগ্রগণ্য। আগামীর যে নির্বাচন হবে সেই নির্বাচনে আপনাদের উপস্থিতি, আপনাদের স্বতস্ফূর্ততা, আপনাদের আন্তরিকতা, আপনাদের বিবেক দিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা, ভালো-মন্দ জেনে বুঝে ভোট দেয়ার যে ইচ্ছা এইগুলো মুগ্ধ করেছে। আপনাদের সুচিন্তিত মতামত ভবিষ্যৎ ই-ক্যাব চলার পাথেয় হয়ে থাকবে। ভবিষ্যতের ই-ক্যাব পৌঁছে যাবে অনেক দূর, ই-কমার্স খাতকে সমৃদ্ধ করবে আরও অনেক বেশি।

আমি সবসময়ই বলি আমরা সব মেম্বার মিলেই ই-ক্যাব, ই-ক্যাবের সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য এখানে থাকবে না কোনো ভেদাভেদ কোন ব্যারিকেড, হবে না কোন গ্রুপিং, থাকবে না কোন রাজনৈতিক পরিচয় বা বৈষম্য । আমরা সবাই মিলেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য কাজ করব এটাই প্রত্যাশা।

মতামত লেখকের নিজস্ব: মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক মৃধা (সোহেল মৃধা)- প্রতিষ্ঠাতা কিনলে ডটকম, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ই-ক্যাব

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *