প্রতিবেদন

সিনেসিস আইটি’র উদ্ভাবনী প্রকল্প ‘সিবিভিএমপি’ পেলো অ্যাপিক্টা অ্যাওয়ার্ডস ২০২৪

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক মৃধা (সোহেল মৃধা): আইসিটি খাতে অস্কার খ্যাত গৌরবময় ‘অ্যাপিক্টা অ্যাওয়ার্ডস ২০২৪’- এ ডিজিটাল সরকার বিভাগে সিনেসিস আইটি’র উদ্ভাবনী প্রকল্প “সেন্ট্রাল বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন অ্যান্ড মনিটরিং প্ল্যাটফর্ম (সিবিভিএমপি)” চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে। এই প্রকল্পটি একটি যুগান্তকারী উদ্ভাবন যা বাংলাদেশে বায়োমেট্রিক সিম যাচাইকরণে এক অনবদ্য পরিবর্তন করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে রুপান্তরকারী ভূমিকার জন্য ‘সিবিভিএমপি’ প্রকল্পকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।

অ্যাপিক্টা অ্যাওয়ার্ডস এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল জুড়ে অসামান্য প্রযুক্তির নানান সমাধানকে স্বীকৃতি দেয়। বছরে একবার এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এ বছর বিশ্বব্যাপী ১৮০ জন অংশগ্রহণকারী ছিলেন যারা তাদের উদ্ভাবনী প্রকল্পের জন্য মনোনীত হয়। বিশ্বব্যাপী শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি প্রকল্পগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে সিনেসিস আইটি’র উদ্ভাবনী প্রকল্প ‘সিবিভিএমপি’ চ্যাম্পিয়ন হয়। সিনেসিস আইটি একটি বড় মাইলফলক অর্জন করেছে।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)- এর জন্য “সেন্ট্রাল বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন অ্যান্ড মনিটরিং প্ল্যাটফর্ম (সিবিভিএমপি)” নামে বাংলাদেশের বৃহত্তম ডেটাবেস তৈরি করেছে সিনেসিস আইটি। ‘সিবিভিএমপি’ বায়োমেট্রিক সিম রেজিস্ট্রেশন পর্যবেক্ষণ ও যাচাই করার মাধ্যমে, নিরাপদ ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে ইতিমধ্যেই লক্ষ লক্ষ সিম কার্ড নথিভুক্ত করা হয়েছে। এই ব্যবস্থায় প্রতি সেকেন্ডে শত শত লেনদেন পরিচালনা করার ক্ষমতা রয়েছে। এই ব্যবস্থাটি এতটাই শক্তিশালী যে ২০১৭ সালে শুরু হওয়ার পর থেকে এটি আজ পর্যন্ত কোনও ডাউনটাইমের মুখোমুখি হয়নি।

‘সিবিভিএমপি’ সিম কার্ড কেনার জন্য পরিচয় যাচাইকরণের পাশাপাশি অবৈধ সিম ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে এনেছে। এই ব্যবস্থাটি সরকারি রাজস্ব নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কেন্দ্রীয় নীতির বাস্তবায়নও নিশ্চিত করেছে। ‘সিবিভিএমপি’ বাংলাদেশে সিম নিবন্ধন প্রক্রিয়া বাধ্যতামূলক করেছে। এই যন্ত্রের মাধ্যমে একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রণয়ন করা হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে নাগরিক পরিচয় যাচাইকরণ, অপরাধ প্রতিরোধ এবং পর্যবেক্ষণ।

এই ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রত্যেক ব্যক্তিকে আঙুলের ছাপের মাধ্যমে চিহ্নিত করা সম্ভব যাতে প্রত্যেক ব্যক্তিকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায় যেন দেশের আইন ও বিধিমালা স্পষ্টভাবে প্রয়োগ করা যায়। যার ফলে, ফোনের মাধ্যমে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধ নিয়ন্ত্রিত করা সহজ হয়। এর সাফল্য বিদেশী সহায়তা ছাড়াই বড় আকারের জাতীয় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সিনেসিস আইটির সক্ষমতা প্রকাশ করে।

সিবিভিএমপি সিনেসিস আইটি- ই-রিটার্ন, ইটিআইএন, এনইআইআর, এক্সপোর্ট ইমপোর্ট সার্টিফিকেশন, ন্যাশনাল জব পোর্টাল, ন্যাশনাল স্কিলস পোর্টাল, বিসিসির জন্য ইউনিফাইড কমিউনিকেশন সিস্টেম, ন্যাশনাল টেলিহেলথ কল সেন্টার, স্বাস্থ্য বাতায়ন, ১৬২৬৩, ইএফডিএমএস, ন্যাশনাল পেমেন্ট গেটওয়ে, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট কল সেন্টার, ওয়াসা কল সেন্টার, ডেস্কো কল সেন্টার, টেন্ডারবাজার ডটকম এবং আরও অনেক জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা করেছে।

ব্রুনাইয়ের রাজধানী দারুস সালামে ছয় দিনব্যাপী (৩-৮ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হয় ‘অ্যাপিক্টা অ্যাওয়ার্ডস ২০২৪’। গত ৭ ডিসেম্বর বন্দর সেরি বেগওয়ানে এক জমকালো অনুষ্ঠানে ‘অ্যাপিক্টা অ্যাওয়ার্ডস ২০২৪’-এ ডিজিটাল সরকার বিভাগে চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ডটি গ্রহণ করেন সিনেসিস আইটির চিফ বিজনেস অফিসার এ এস এম নূরুন্নবী, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট প্রধান মইনুল ইসলাম এবং হেড অব মার্কেটিং জুনাইদ হোসেন। এই অর্জন বাংলাদেশের আইসিটি খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নাগরিকদের জন্য কার্যকর সমাধান প্রদানের ক্ষেত্রে সিনেসিস আইটির সক্ষমতা প্রদর্শন করে যা বাংলাদেশ আইসিটি সেক্টরে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

সিনেসিস আইটি বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় এবং আইসিটি সমাধান প্রদানকারী একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটিতে ছয়শতাধিক লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং দুইশতাধিক জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর সঙ্গে কাজ করেছে। ২০০৬ সাল থেকে ই-গভর্নেন্স, ই-স্বাস্থ্য এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার সমাধানগুলো নিয়ে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন শিল্পে সরকারি ডিজিটাল পরিষেবাগুলোকে রুপান্তরিত করেছে এবং দক্ষতা, উচ্চ প্রযুক্তির পরিকাঠামোতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি সার্টিফিকেট, ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন, অফিস অটোমেশন, বড় আকারের এন্টারপ্রাইজ সমাধানের মতো ডিজিটাল প্রক্রিয়া রয়েছে। ই-গভর্নেন্স ছাড়াও, সিনেসিস আইটি ই-হেলথ এবং কন্টাক্ট সেন্টার সলিউশনে একাধিক প্রকল্পে কাজ করেছে।

অ্যাপিক্টা অ্যাওয়ার্ডস ২০২৪ কেবল সিনেসিস আইটির জন্য একটি অর্জন নয়, বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক ডিজিটাল সমাধান প্রদানের জন্য বাংলাদেশের আইসিটি খাতের সম্ভাবনার একটি প্রমাণ। ‘সিবিভিএমপি’ প্রকল্পের সাফল্য দেশের উদ্ভাবন, নেতৃত্ব এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সমাধানের ক্ষমতাকে তুলে ধরে। সিনেসিস আইটির জন্য এই অ্যাওয়ার্ডটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এটি প্রযুক্তিগত উন্নত সমাধান তৈরির প্রতি তাদের অঙ্গীকারকে বৈধতা দেয় যা মানুষের জীবনকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে এবং জাতীয় অগ্রগতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখে।

সামগ্রিকভাবে এই অর্জন বাংলাদেশের জন্য গর্বের, যা বৈশ্বিক প্রযুক্তি শিল্পে বাংলাদেশ হিসেবে জাতির ক্রমবর্ধমান উপস্থিতিকে তুলে ধরেছে। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের জন্য উদ্ভাবন কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে পারে তা সিনেসিস আইটি দেখিয়েছে অ্যাপিক্টা অ্যাওয়ার্ডস ২০২৪-এ অ্যাওয়ার্ড অর্জনের মাধ্যমে।

উল্লেখ্য, এশিয়া প্যাসিফিক আইসিটি অ্যালায়েন্স (অ্যাপিক্টা) ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠার পর ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে একমাত্র সংগঠন হিসেবে অ্যাপিকটা’র সদস্যপদ লাভ করে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)। বেসিস ২০১৬ সালে অ্যাপিক্টা অ্যাওয়ার্ড তাইপেই-তে প্রথম বার অংশগ্রহণ করে যেখানে বাংলাদেশের একটি দল মেরিট অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে। বেসিস’র উদ্যোগে অ্যাপিক্টা অ্যাওয়ার্ড আয়োজন ২০১৭ সালে প্রথম বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়, যাতে অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রগুলো অংশগ্রহণ করে।

এক কথায় অ্যাপিক্টা হলো এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের আইসিটি খাতের বৃহত্তম সংগঠন। অ্যাপিক্টা এর ১৭টি সদস্য- অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, ব্রুনেই, চীন, চীনা তাইপেই, হংকং, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, ম্যাকাও, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, নেপাল, ভিয়েতনাম এবং পাকি সহ সব সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ডিজিটাল বিভাজন দূর করতে সহায়তা করে।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *