সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখতে করণীয়
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠেছে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এক্স, স্ন্যাপচ্যাটের মতো প্লাটফর্মগুলোর ব্যবহার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আর সেই সঙ্গে ব্যবহারকারীদের মধ্যে নিরাপত্তার বিষয়টিও মুখ্য হয়ে ওঠছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষ ও সাইবার হামলার যুগে হ্যাকিং, স্ক্যামিং বা ফিশিংয়ের মাধ্যমে তথ্য ফাঁস এখন অন্যতম বড় একটি সমস্যা। আর তাই এ ধরনের হামলা প্রতিরোধে ও শেয়ার করা তথ্যের সুরক্ষায় সচেতনতা অবলম্বন করা জরুরি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের পরিচয় ও ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কিছু পদক্ষেপ অনুসরণ করা যায়। কিছু নিরাপত্তাবিষয়ক টুলস প্রায় সব সামাজিক অ্যাপের সেটিংসেই রয়েছে।
লগড ইন ডিভাইস চেক করা
‘হোয়্যার ইউ আর লগড ইন’ সুবিধাটির মাধ্যমে ব্যবহারকারী কোন অবস্থান ও ডিভাইস থেকে অ্যাকাউন্টে লগ ইন করেছে, তা দেখার সুযোগ পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে অ্যাকাউন্টের যেকোনো অস্বাভাবিক কার্যক্রম বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা চিহ্নিত করা যায়। এ ছাড়া অপরিচিত কোনো স্থান থেকে লগ ইন হওয়া ডিভাইসকে ‘নট মি’ হিসেবে বেছে নেয়ার মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখা যায়।
লগইন অ্যালার্ট চালু করা
অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা নিশ্চিতের সেরা উপায় হলো অপরিচিত লগইনের জন্য অ্যালার্ট চালু করা। গেট অ্যালার্টস অ্যাবাউট আনরিকগনাইজড লগইনস ফিচারটি চালুর মাধ্যমে অপরিচিত কোনো ডিভাইস থেকে অ্যাকাউন্টে লগইন করা হলে সেই মুহূর্তেই সোশ্যাল অ্যাকাউন্ট, মেসেঞ্জার ও নিবন্ধিত ই-মেইলে একটি নোটিফিকেশন পাঠানো হয়। ফলে অস্বাভাবিক যেকোনো কার্যক্রম দ্রুত চিহ্নিত করা সহজ হয়।
পাসওয়ার্ডের বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া
অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি হ্যাকারদের হাত থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য সংখ্যা, বিভিন্ন চিহ্ন ও শব্দ ব্যবহার করতে হবে। দীর্ঘ ও বিভিন্ন চিহ্ন মিলিয়ে দেয়া পাসওয়ার্ড চুরি করা তুলনামূলকভাবে কঠিন। এ ছাড়া প্রয়োজন অনুযায়ী পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে হবে। ফেসবুকের পাসওয়ার্ড ই-মেইল বা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মতো অন্যান্য অ্যাকাউন্টে ব্যবহৃত পাসওয়ার্ডের চেয়ে ভিন্ন হওয়া উচিত। পাসওয়ার্ড নির্বাচনের সময় ই-মেইলের ঠিকানা, ফোন নম্বর বা জন্মদিনের মতো অনুমেয় তথ্যগুলোর ব্যবহার এড়িয়ে চলা উচিত। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা জানান, পাসওয়ার্ড ১৬ শব্দের হলে ভালো হয়।
দুই স্তরের নিরাপত্তা
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টকে আরও নিরাপদ করে তুলতে চাইলে এর টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন বা টুএফএ সুবিধা ব্যবহার করা যায়। ফলে অন্য কেউ লগইনের চেষ্টা করলে সেটি আসল ব্যবহারকারী কিনা তা নিশ্চিতে দুটি ধাপ পার করতে হবে। সাধারণত প্রথম ধাপে পাসওয়ার্ড প্রবেশের পর দ্বিতীয় ধাপে ব্যবহারকারীকে একটি লগইন কোডও প্রবেশ করতে হবে, যা ওই ব্যবহারকারীর নিবন্ধিত মোবাইল ফোন নম্বরে টেক্সট মেসেজ বা ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) হিসেবে পাঠাবে অ্যাপ।
ক্ষতিকর সফটওয়্যার থেকে সতর্ক থাকা
যেকোনো অ্যাপ ডাউনলোড করার আগে সেটি বিশ্বাসযোগ্য কিনা তা যাচাই করতে হবে। এজন্য ওয়েব ব্রাউজারটি হালনাগাদ করে রাখতে হবে এবং ব্রাউজারের অ্যাড-অনস বা যেকোনো অ্যাপের আচরণ সন্দেহজনক মনে হলে তা মুছে ফেলতে হবে। অপরাধপ্রবণ ডেভেলপাররা কার্টুন ইমেজ এডিটর বা মিউজিক প্লেয়ারের মতো বিভিন্ন মজার বা কার্যকর অ্যাপের আদলে ক্ষতিকর অ্যাপ তৈরি করে এবং মোবাইল অ্যাপ স্টোরের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। তাই এ বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে।
অ্যাকাউন্ট লক অথবা প্রাইভেট করা
এ ছাড়া নিজের ছবি ও তথ্য সুরক্ষিত রাখতে প্রথমেই ব্যবহারকারীকে নিজ অ্যাকাউন্ট লক বা প্রাইভেট করতে হবে। এর ফলে ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা কন্টাক্ট ছাড়া আর কেউ প্রোফাইল দেখতে পারবে না। ফেসবুক অ্যাকাউন্ট লক করার সুযোগ রয়েছে আর ইনস্টাগ্রামের ক্ষেত্রে প্রোফাইলটি প্রাইভেট করা যায়।