সিংগেল ব্যান্ডের ওয়াই-ফাই রাউটার দেশে প্রস্তুত, আমদানী, বিক্রয় মানে হচ্ছে টাকা দিয়ে ঝামেলা কিনে আনা

সাব্বির আহমেদ: বাংলাদেশ এর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহক প্রান্ত পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা প্রদান করতে গিয়ে যে প্রযুক্তি পণ্যটির কারনে সবচেয়ে বেশি ঝামেলা পোহাতে হয় এবং গ্রাহকদের থেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়, সেই প্রযুক্তি পণ্যটি হলো ‘ওয়াই-ফাই রাউটার’।
একটি বাসা বা বাড়ির সব রুমে ভালো নেট স্পিড পাওয়া যায়না, দরজা বন্ধ থাকলে নেট স্পিড স্লো হয়ে যায়, সব ডিভাইসে ইন্টারনেট কানেকশন পায় না, স্লো হয়ে যায়। এই সব সমস্যার অন্যতম প্রধান কারন হচ্ছে সস্তা, মানহীন ও সিংগেল ব্যান্ডের ওয়াই-ফাই রাউটার।
প্রস্তুতকারক থেকে খুচরা বিক্রয়কারী পর্যন্ত ৩ /৪ /৫ হাত ঘুরে যে সিংগেল ব্যান্ডের রাউটারটি বাজারে ৮০০-১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, তার উৎপাদন খরচ বিক্রয় মূল্যের ৪ ভাগের এক ভাগ কিংবা তারও কম হবে, এটাই স্বাভাবিক। এই মূল্যে আদৌ মানসম্পন্ন রাউটার প্রস্তুত করা সম্ভব নয় বলে মনে করি।
বাংলাদেশ একটি অত্যন্ত জনবহুল দেশ। ঢাকা শহরেই কোটি মানুষের বসবাস। এই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বিশাল। কাছাকাছি স্থানে বিপুল সংখ্যক ওয়াইফাই রাউটার থাকার কারনে এবং সিমিলার ফ্রিকোয়েন্সি থাকার কারনে সিগন্যাল ওভারল্যাপিং হয়ে ডেটা লসের কারন হয়। আর একারনে আইএসপির সার্ভিস ভালো হলেও, রাউটারের কারনে গ্রাহক বাজে ইন্টারনেট ব্যবহারের অভিজ্ঞতা পেতে পারেন।
এ ছাড়াও, আমাদের দেশে সাধারন গ্রাহকদের মধ্যে প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা কম থাকার কারনে সমস্যা কোথায় ও কোন কারনে হচ্ছে সেটি নিয়ে তারা চিন্তা করতে চান না। এক কথায় গ্রাহকগণ তাদের ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারের সার্ভিস নিয়ে অভিযোগ করেন।
অনেক গ্রাহক আছেন যারা বছরের পর বছর এক রাউটার ব্যবহার করে থাকেন কিংবা নষ্ট না হওয়া পর্যন্ত রাউটার পরিবর্তন করার কথা চিন্তাও করেন না। অথচ সবসময় লেটেস্ট ফোন, টিভি, ল্যাপটপ কিংবা গ্যাজেট ব্যবহার ও আপডেট করে থাকেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব টেকনলোজিক্যাল ডিভাইস বা গ্যাজেট আপডেট করলেও ওয়াই-ফাই রাউটার আপডেট বা পরিবর্তন করাটা বেশিরভাগ সময়েই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা অবহেলা করেন।
সস্তা সিংগেল ব্যান্ড ওয়াই-ফাই রাউটার আইএসপিদের নিরবিচ্ছিন্ন ও ভালো সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান একটি বাধা। গ্রাহক প্রান্তে ভালো মানের ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করতে হলে ভালো মানের ডুয়াল ব্যান্ড ও আইপিভি৬ সমর্থিত রাউটার ব্যবহার করা অত্যাবশ্যক।

সম্প্রতি বিটিআরসি ডুয়াল ব্যান্ড ব্যতীত সিংগেল ব্যান্ডের ওয়াই-ফাই রাউটার দেশে প্রস্তুত ও বিদেশ থেকে আমদানীর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। আমি মনে করি এটি একটি ভুল সিদ্ধান্ত। কেউ হয়তো বিটিআরসিকে ভুল বুঝিয়েছে যে, প্রান্তিক পর্যায়ে সস্তায় ইন্টারনেট পৌছাতে হলে এই নিষেধাজ্ঞা তুলতে হবে।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সিংগেল ব্যান্ডের ওয়াই-ফাই রাউটার দেশে প্রস্তুত কিংবা বিদেশ থেকে আমদানী, বিক্রয় ও বিপননে মানে হচ্ছে টাকা দিয়ে ঝামেলা কিনে আনা। গ্রাহক প্রান্তে ভালো ইন্টারনেট পৌছানোর ক্ষেত্রে এই বিষয়ে ছাড় দেয়া বা ওভারলুক করার কোন সুযোগ নাই।
সস্তা ও মানহীন সিংগেল ব্যান্ডের ওয়াই-ফাই রাউটারের কারনে গ্রাহক ও ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান উভয়েই ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বাংলাদেশের ইন্টারনেট গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ডে উন্নীত করার জন্য, ডুয়াল ব্যান্ড ও আইপিভি৬ সমর্থন করে, শুধুমাত্র এমন রাউটারই দেশে প্রস্তুত ও বিদেশ থেকে আমদানী বা বিক্রয় ও বিপণন করার অনুমতি দেয়া উচিৎ।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করছি যেন, অনতিবিলম্বে শুধুমাত্র ডুয়াল ব্যান্ড ও আইপিভি৬ সমর্থিত রাউটার দেশে প্রস্তুত ও বিদেশ থেকে আমদানীর অনুমতি ও বাকি সকল ধরনের সস্তা, মানহীন, সিংগেল ব্যান্ডের রাউটার আমদানী নিষিদ্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন।
সাব্বির আহমেদ- আইএসপিএবির (২০২৫-২৭) নবনির্বাচিত পরিচালক এবং কর্ণধার এক্সোর্ড অনলাইন