সাম্প্রতিক সংবাদ

সাইবার নিরাপত্তা আইনের অধীনে সব মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের আহ্বান

ক.বি.ডেস্ক: বাংলাদেশে ২০১৮ সালে বাতিল হওয়া আইসিটি আইনের অধীনে থাকা সকল মামলা দ্রুত প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ‘ক্লুনি ফাউন্ডেশন ফর জাস্টিস’-এর ট্রায়ালওয়াচ ইনিশিয়েটিভ ও বাংলাদেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)।

গত শুক্রবার (১ নভেম্বর) প্রতিষ্ঠান দু’টি যৌথভাবে তাদের ওয়েবসাইটে শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হয়।

প্রকাশিত শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তন দেশের কঠোর সাইবার আইনগুলোর পুনর্মূল্যায়নের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে তিনটি সাইবার আইনের আওতায় থাকা সকল মতপ্রকাশ সম্পর্কিত’ মামলা প্রত্যাহারের ঘোষণা যথার্থ দিকনির্দেশনার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

সিএসএ (সর্বশেষ সংস্কার করা আইন) মূলত ডিএসএ- এর প্রায় সব কঠোর বিধানকেই নতুন করে যুক্ত করেছে, যার মধ্যে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা অন্তর্ভুক্ত ছিল। ৫৭ ধারা ও ডিএসএ বাতিল করা হলেও সরকারি তথ্য অনুসারে, ডিএসএ ও আইসিটি আইনের অধীনে দায়ের করা এক হাজারেরও বেশি মতপ্রকাশ সম্পর্কিত মামলা এখনো চলছে। ২০১৮ সালের আগস্ট থেকে ট্রায়ালওয়াচের পর্যবেক্ষণে থাকা একটি মামলাও এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।

সিজিএস’র নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, ‘‘হ্যাকিং, যৌন হয়রানি ও অন্যান্য গুরুতর সাইবার অপরাধের বিচার হওয়া গুরুত্বপূর্ণ হলেও, বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তা আইন অত্যন্ত অস্পষ্ট ও প্রশ্নবিদ্ধ। এর মধ্যে বিরোধী মতকে দমন করার অনেক উপাদান রয়েছে। তাই আমরা এ আইনের অধীনে দায়েরকৃত সব মামলাকে বাতিল করার আহ্বান জানাই।’’

যৌথ শ্বেতপত্রে বলা হয়, আইনি প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও ন্যায়পরায়ণতার ভিত্তিতে এখন আইসিটি আইনের অধীনে থাকা সব মামলা বাতিল করা উচিত, কারণ এগুলোর আর কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। ডিএসএ বাতিল হয়ে যাওয়ায় আইসিটি আইনের জন্য থাকা সংরক্ষণ বিধানটি স্বাভাবিকভাবেই আর কার্যকর থাকে না। সিএসএ-তে একই রকমের সংরক্ষণ বিধান থাকলেও এটি শুধুমাত্র ডিএসএ-এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং আইসিটি আইনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তাই, আইসিটি আইনের অধীনে থাকা মামলাগুলো এখনও বিদ্যমান থাকার আর কোনো আইনি ভিত্তি নেই।

ভারতের সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র এডভোকেট রেবেকা মামেন জন বলেন, ‘‘আইসিটি আইনের অধীনে থাকা মামলাগুলোর কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। বাতিল হয়ে যাওয়া আইনের অধীনে থাকা পুরনো মামলাগুলোকে পুনরায় বহাল রাখা অনুচিত। বিশেষ করে সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও রাজনৈতিকভাবে বিরোধীদের মতপ্রকাশের অধিকারকে খর্ব করতে এ আইন ব্যবহার করা স্পষ্টতই আইনের অপব্যবহার।’’

আপত্তিকর তথ্য, ভুয়া খবর ও আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা- এ সম্পর্কিত অস্পষ্ট বিধান ও আইনগুলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন আদালত আপত্তিকর মন্তব্য ও ভুয়া খবর সম্পর্কিত আইন বাতিল করছে।

দেশের আইন ও মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য এটি একটি ঐতিহাসিক সুযোগ উল্লেখ করে অবিলম্বে আইসিটি আইনের অধীনে থাকা সকল মামলা বাতিল করার আহ্বান জানানো হয়।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *