শুরু হলো স্যানগ-৩৯ এবং বিডিনগ-১৬ সম্মেলন
ক.বি.ডেস্ক: ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) ষষ্ঠ বারের মতো স্যানগ-৩৯ সম্মেলনের আয়োজন করে। পাশাপাশি বিডিনগ-১৬ সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার (৯ মে) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অপারেটর্স গ্রুপের (স্যানগ-৩৯) আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এবারের সম্মেলনে সংযুক্ত হয়েছে গুগল, আমাজন ওয়েব সার্ভিসেস, ইন্টারনেট সোসাইটি, সিসকো এবং এশিয়া প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টার (এপনিক) এর মতো ইন্টারনেটের শীর্ষস্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছে ভারত, ভুটান, শ্রীলংকা, নেপাল, পাকি, হংকং, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, জার্মানী, নেদারল্যান্ড ও স্যানগ সদস্যভূক্ত দেশসহ ২৫টি দেশের ইন্টারনেট পেশাজীবি সংগঠনের তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও নেতারা।
সম্মেলন উপলক্ষে এবার বাংলাদেশ থেকে ৪জন সহ বিশ্বের ৪টি দেশের মোট ১১ জনকে ফেলোশিপ প্রদান করা হয়েছে। সম্মেলনে উত্থাপিত হয়েছে বেশ কিছু গবেষণা পত্র। শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের জন্য ৮টি দেশ থেকে এসেছেন বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষক দল।
স্যানগ-৩৯ এবং বিডিনগ-১৬ সম্মেলন এর উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। বিশেষ অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মাহবুবুল আলম, বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার এবং আইবিপিসির সমন্বয়ক আবদুর রহিম খান। বক্তব্য রাখেন এপনিক’র মহাপরিচালক পল উইলসন, স্যানোগ চেয়ারম্যান রুপেস শ্রেষ্ঠ, বিডিনগ প্রেসিডেন্ট রাশেদ আমিন এবং আইএসপিএবি সভাপতি মো. এমদাদুল হক। অনুষ্ঠানে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিজিটাল এইজ ডিসি’র হেড অব ইন্টারকানেক্ট ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন রাফেল হো।
মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, দেশব্যাপী ইন্টারনেট ছড়িয়ে দিতে বাংলাদেশ অভাবনীয় সফলতা অর্জন করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় গত চৌদ্দ বছরে শুধু ডিজিটাল সংযুক্তির মহাসড়কই তৈরি হয়নি, ইন্টারনেটের প্রতি এমবিপিএস এর মূল্য ২৭ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৬০ টাকা করা হয়েছে। এক দেশ এক রেট নির্ধারণের মাধ্যমে ডিজিটাল বৈষম্য দূর করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্য আইপিভি ৪ ও আইপিভি ৬ অ্যানাবল রাউটার আমদানিতে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। দেশের প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে দ্রুতগতির ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়া হয়েছে। দেশের ৯৮ ভাগ অঞ্চলে মোবাইল ফোনের জন্য ফোর জি নেটওয়ার্ক পৌঁছে গেছে। চালু করা হয়েছে ৫ জি প্রযুক্তিও।
তিনি চলমান সম্মেলনের আইডিয়া নিয়ে, এর থেকে কিভাবে লাভবান হওয়া যায় তার জন্য আমাদের ইঞ্জিনিয়ারদের প্রশিক্ষন প্রদানের ওপরে গুরুত্ব আরোপ করেন। অদূর ভবিষ্যতে কিভাবে গুণগত ইন্টারনেট সেবা পাওয়ার লক্ষ্যে নেটওয়ার্ক কাঠামো উন্নত করা যায় সে ব্যাপারে জ্ঞান অর্জনের জন্য আহ্বান জানান। দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় কিভাবে ইন্টারনেট ব্যবস্থা সচল রাখা যায় কিভাবে সাইবার সিকিউরিটি বৃদ্ধি করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা যায়, কিভাবে আইপিভি৬ ডিপ্লয়মেন্ট ত্বরান্বিত করা যায় এবং বাংলাদেশকে সে সক্ষমতা অর্জন করার ওপরে গুরুত্ব আরোপ করেন।
মো. ইমদাদুল হক বলেন, একটি শক্তিশালী ও নিরাপদ ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক কাঠামোর উন্নয়ন ও প্রসারে স্যানোগ ৩৯ একটি তথ্যবহুল সম্মেলন যেখানে কয়েকটি স্তরে দেশ ও বিদেশের প্রশিক্ষনার্থীরা বিষয়ভিত্তিক অর্জিত জ্ঞান প্রয়োগের মাধ্যমে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি টেকসই ইন্টারনেট সিস্টেম গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। আইপিভি-৬, সাইবার সিকিউরিটি ও অটোমেশনের ওপরে বাংলাদেশী ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে কিভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করা যায় সেই সম্বন্ধে পরিষ্কার ধারণা পাবে।
পল উইলসন বলেন, বাংলাদেশ ইন্টারনেট ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরিতে বরাবরই ভীষণ সক্রিয় ও দক্ষ। ইন্টারনেট সেক্টরে মেয়েদের এগিয়ে আসার ওপরে গুরুত্ব আরোপ করেন এবং দক্ষ প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
সম্মেলনে এপনিকের ইন্টারনেট রিসোর্স অ্যানালিস্ট শোভা শামারুখের সঞ্চালনায় প্যানেল আলোচনা ছাড়াও জোবায়ের খানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে দুইটি টেকনিক্যাল সেশন পরিচালনা করেন অনুরাগ ভাটিয়া, হাসানুজ্জামান আশিক, আবু সুফিয়ান। ড. ফিলিপ স্মিথের সভাপতিত্বে রাহুল মাখিজা ও ইসমত জেরিন আরও একটি টেকনিক্যাল সেশন পরিচালনা করেন। প্যানেল ডিসকাসনে অংশ নেন বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রতিনিধিরা।
বাংলাদেশের ইন্টারনেট কমিউনিকেশনের চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করার মাধ্য দিয়ে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয় ও সমাধানের পথ খুঁজে বের করা হয়। তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয় নেটওয়ার্ক স্ট্রাকচার কষ্ট, আইপিভি-৪ থেকে আইপিভি৬ এ রূপান্তরে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার ভূমিকা এবং সরকারের সদিচ্ছা। ক্রস বর্ডার ইন্টার কানেক্টিভিটি নিয়েও আলোচনা করা হয়। ইনফ্রাস্টকচারে ক্যাবল ড্রেসিং এর দুর্বলতা নিয়েও আলোচনা হয়। নেটওয়ার্ক শেয়ারিং কার্যকর করার মাধ্যমে লাষ্ট মাইল কানেক্টিভিটি বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
আজ বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত ( ১০-১৩ মে) চার দিনব্যাপী ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে প্রতিদিন তিনটি করে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। বিষয়ভিত্তিক কর্মশালাগুলো হচ্ছে- বিজিপি ও আইপিভি-৬ ডেপ্লয়মেন্ট, নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা এবং নেটওয়ার্ক অটোমেশন। এতে নিবন্ধিত দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ১৫০ জন প্রকৌশলী অংশগ্রহণ করবেন।
প্রশিক্ষক হিসেবে থাকছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ টেরি স্যুইটসার (এপনিক), আব্দুল্লাহ আল নাসের (এপনিক), মো. জোবায়ের খান (এপনিক), ওয়ারেন ফিঞ্চ (এপনিক), শামীম রেজা (এপনিক), সুমন কুমার সাহা (এডিএন টেলিকম), অনুরাগ ভাটিয়া (হ্যারিকেন ইলেকট্রিক), রুপেশ ব্যাসনেট (ওঁ নেটওর্য়াক) এবং শায়লা শারমিন (প্রাইম ব্যাংক)।