শুরু হলো দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ সামিট ‘উই সামিট ২০২৩’
ক.বি.ডেস্ক: দেশের নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ট্রাস্ট (উই) এর উদ্যোগে শুরু হলো দুই দিনব্যাপী (৬-৭ অক্টোবর) ‘উইমেন ই-কমার্স এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ সামিট (উই সামিট) ২০২৩’। ই-কমার্স নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ সামিট ‘উই সামিট ২০২৩’ এ সারা দেশ থেকে আসা নারী উদ্যোক্তা ও খাত সংশ্লিষ্ঠদের অংশগ্রহণে দুই দিনব্যাপী এই সামিট শুরু হয়েছে।
আজ শুক্রবার (৬ অক্টোবর) রাজধানীর কুড়িলে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় ‘উই সামিট ২০২৩’ এর উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের অপারেশন অফিসার গায়লে মার্টিন। সভাপতিত্ব করেন উই সামিটের আহ্বায়ক নাসিমা আক্তার নিশা।
শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন উই ট্রাস্ট-এর উপদেষ্টা জাহানুর কবির সাকিব। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিসিএ কন্ট্রোলার এ টি এম জিয়াউল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হাইটেক পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জি এস এম জাফরুল্লাহ, দারাজের সিওও তাসফিন আলম, এমজিআই গ্রুপের পরিচালক ব্যারিস্টার তাসনিম মোস্তাফা।
বিশাল পরিসরে দুই দিনের ওই সামিটে রয়েছে সারা দেশ থেকে অংশ নেয়া নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিভিন্ন সেশন, অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য, সেমিনার, কর্মশালাসহ বিশেষ সব আয়োজন। আজ অনুষ্ঠিত হয় একটি কি-নোট প্রেজেন্টেশনসহ প্যানেল সেশন। প্রথম দিনে রয়েছে ছয়টি প্যানেল আলোচনাসহ কর্মশালা ও ইনফ্লুয়েন্সার স্পিচ। এসব সেশনে বিশেষ আলোচক হিসেবে দেশ-বিদেশের অসংখ্য বক্তা ও বিভিন্ন খাতের স্বনামধন্য ব্যক্তিরা অংশ নেবেন। পাশাপাশি থাকছে ই-কমার্স খাতের এবং খাত সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞদের সঙ্গে নতুনদের নেটওয়ার্কিং সেশনও। থাকবে র্যাফেল ড্র।
প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, দেশে নারী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় মোট জনসংখ্যার অর্ধেক। দেশের এই বিরাট সংখ্যক নারীর মধ্যে উই এখন অন্তত ৫-৬ লাখ নারীকে একত্রিত করেছে। যদি এটা কোনোভাবে আর ৬-৮ গুন হয়, তাহলে সেটা কী হবে একবার ভেবে দেখুন। সারা দেশে এখন তারা কাজ করছেন। এটা তখন বিশ্ব দরবারে পৌছাতে সময় লাগবে না। আমাদের দেশের নারীরা এমন এক পরিবেশ থেকে যুদ্ধ করে আসেন, যখন তারা উদ্যোক্তা হয়, তখন একটি পুরো পরিবার তাতে জড়িয়ে যায়। স্বচ্ছল হয়ে যান। উই সেই কাজটিই করছে নীরবে।
প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, কোভিডসময়ে আমাদের লাইফলাইন ছিল ই-কমার্স। তখন থেকে এই পর্যায়ে এসে একটা সফল উদ্যোগও বলা যায় দেশের ই-কমার্স। করোনার পর এক কোরবানির ঈদেই প্রায় চার লাখ কোরবানির পশু বিক্রি হয় ই-কমার্সে। তখন ২৭০০ কোটি টাকার লেনদেন হয় অনলাইনে। যা ছিল অভূতপূর্ব। সেই ধারাবাহিকতা এখনও বজায় আছে। উই মানে আমরা। আমরা সবাই মিলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চিন্তা করি। সেটা বাস্তবে রূপ দিচ্ছে উই। উই দেশের নারী উদ্যোক্তাদের একত্রিত করেছেন। তাদের বিভিন্ন পণ্য দেশ বিদেশে পরিচিত করিয়েছেন।
গায়লে মার্টিন বলেন, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকও বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের জন্য কাজ করছে। প্রান্তিক পর্যায়ের ই-কমার্স থেকে শুরু করে এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম সহজলভ্য করে দিতে কাজ করছে। এ কাজে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সঙ্গে আইসিটি বিভাগ সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। উই দেশের সবচেয়ে বড় নারীদের নিয়ে কাজ করা প্ল্যাটফর্ম। যারা প্রান্তিক পর্যায়ের নারীদের বিশ্বব্যাপী তাদের পণ্য পৌঁছে দিতে কাজ করছে উই।
জি এস এম জাফরুল্লাহ বলেন, তরুণদের ওপর ভরসা করেই দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ভিশন নেয়ার সাহস করা হয়েছে। তরুণদের জন্য উই এমন একটা প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে উঠেছে যেখানে হাজার হাজার নারী উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। সেখানে একটি ডাক দিলে সহস্র সহস্র উদ্যোক্তা সামনে এসে হাজির হন। আমি এখানে এসে নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে যে স্বতঃস্ফূর্ততা দেখেছি তা সামনে এগিয়ে যাওয়ার, পেছনে ফিরে তাকানোর নয়।
এ টি এম জিয়াউল ইসলাম বলেন, গ্রামীণ পর্যায় থেকে যেসব উদ্যোক্তা কাজ করছেন তাদের সঙ্গে আমরা কাজ করি। উই এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে কয়েক লাখ সদস্য যুক্ত, যা দেশের ই-কমার্সকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে। আমরা এখন স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন নিয়ে এগিয়ে যাব। আপনারা যারা উদ্যোক্তা আছেন, আমরা পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে এগিয়ে যাবো বলে বিশ্বাস করি।
নাসিমা আক্তার নিশা বলেন, গত তিন মাস ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে নারী উদ্যোক্তাদের নানা সুবিধা অসুবিধাগুলো শুনেছি। দুদিনের এই আয়োজনে সেগুলো সমাধানের লক্ষে বেশ কিছু প্যানেল আলোচনা থাকবে, আপনারা সেগুলো নোট করবেন। সেখান থেকে আপনারা জানতে পারবেন সমস্যার সমাধান কীভাবে পাবেন। নতুন সব পণ্য আনতে হবে। নিজেদের রিসার্চ করে দেখতে হবে বহির্বিশ্ব কি করছে, কতটা ইনোভেশন আনছে সেগুলো জানতে হবে। তবেই একজন উদ্যোক্তা অন্যদের চেয়ে ভিন্ন হবেন। নারী উদ্যোক্তাদের তিনি বিভিন্ন স্কিলস শেখার আহ্বান জানান।
দ্বিতীয় দিন শনিবার (৭ অক্টোবর) থাকছে দুটি কর্মশালা, একটি সেমিনার। এ ছাড়া অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে এবার দেশের বিভিন্ন খাতে অবদান রাখা ১০ জন নারীকে জয়ী সম্মাননা দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি উইয়ের সদস্যদের মধ্য থেকে ১০ নারী উদ্যোক্তাকে জয়ী পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। সারা দেশ থেকে যেসব নারীরা ই-কমার্সের মাধ্যমে তাদের পণ্য দেশ ও বিশ্ববাজারে তুলে ধরতে অসামান্য অবদান রাখছেন তাদের এই বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। সামিটের দ্বিতীয় দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই পুরস্কার তুলে দিবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
উই এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘উই সামিট ২০২৩’ এর সহযোগিতায় আইসিটি বিভাগ, কন্ট্রোলার অব সার্টিফাইং অথরিটিজ এবং উই-ফাই।