উদ্যোগ

মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবার অগ্রগতিতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার

ক.বি.ডেস্ক: ইউএনডিপি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এবং মেন্টাল হেলথ টেক স্টার্আপ মনের বন্ধু যৌথভাবে আয়োজন করে ‘মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবার অগ্রগতিতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার’ শীর্ষক পলিসি রাউন্ড টেবিল। অনুষ্ঠানে সাইবারবুলিং ও অনলাইন ক্ষতি মোকাবেলায় মানসিক স্বাস্থ্য ও মনোসামাজিক পরিষেবা চালু করার বিষয়ে আইসিটি বিভাগ এবং ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। ন্যাশনাল মেন্টাল হেলথ স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান ২০৩০ এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবার অগ্রগতির জন্য তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা হয়।

গত বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) ঢাকার আগারগাঁওয়ে অবিস্থত আইসিটি টাওয়ারে বিসিসি’র সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ‘মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবার অগ্রগতিতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার’ শীর্ষক পলিসি রাউন্ড টেবিলে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। বিশেষ অতিথি ছিলেন আইসিটি সচিব মো. সামসুল আরেফিন। বক্তব্য রাখেন ইউএনডিপি’র রিসার্চ অ্যানালিস্ট ফয়সাল বিন মজিদ, বিশ্ব ব্যাংক’র সিনিয়র হেলথ স্পেশালিস্ট ড. বুশরা বিনতে আলম। সভাপতিত্ব করেন বিসিসি’র নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমার। সঞ্চালনা করেন মনের বন্ধুর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদা শিরোপা।

প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, “দেশে এখন সাড়ে ৫ থেকে ৬ কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারী। এদের অ্যালগরিদম এমনভাবে করা হয়েছে যে আমাদের তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরিকে এমনভাবে প্রভাবিত করা হচ্ছে। ব্যবহারকারীরা মনের অজান্তেই বিভিন্নভাবে নেগেটিভ কন্টেন্টে আসক্ত হচ্ছে। দেশের তারুণ্যের মানসিক অসুস্থতার পেছনে ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, টিকটকের মতো সোশ্যাল মিডিয়া দায়ী। এগুলোর আসক্তি কমাতে অর্থসহায়তার নামে লোকদেখানো কার্যক্রম নয়, আসক্তিমুক্তির ক্ষেত্রে তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা দরকার।”

তিনি আরও বলেন, “এই সমস্যার উত্তরণের জন্য উচ্চপ্রযুক্তির মেন্টাল হেলথ জিপিটি তৈরি এবং এর মাধ্যমে দেশের ১৪ হাজার কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক ব্যবহার ও ৩৫০ সংসদ সদস্যকে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে স্মার্ট নাগরিক তৈরিতে এখনই সকলকে সতর্ক হতে হবে। আমরা ইচ্ছে করলেই পুরো পৃথিবীর সব নেগেটিভ কন্টেন্ট একসঙ্গে মুছে ফেলতে পারবো না। সাইবার বুলিং নিশ্চিহ্ন করতে পারবো না। কিন্তু সকলকে মেন্টালহেলথ, ডিজিটাল ও এআই লিটারেসি নিয়ে সচেতন করতে পারবো। এজন্য সরকার-বেসরকারি খাত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মিডিয়াকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।”

সচিব মো. সামসুল আরেফিন বলেন, “অনলাইনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গৃহীত এই পাইলট প্রকল্পের ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় পর্বে আমি প্রত্যক্ষ করেছি যে, এই উদ্যোগ বর্তমান প্রেক্ষাপটে কতটা জরুরি। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে এই উদ্যোগ দেশব্যাপী সম্প্রসারণের এখনই উপযুক্ত সময়। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে আমাদের তরুণ প্রজন্ম অনলাইনে নিরাপদ এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্য এখন সুরক্ষিত।”

দেশের তারুণ্যের মানসিক অসুস্থতার পেছনে ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, টিকটকের মতো সোশ্যাল মিডিয়া দায়ী

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক

ড. বুশরা বিনতে আলম বলেন, “শহরাঞ্চলের পাশাপাশি আমাদের গ্রামাঞ্চলের দিকেও মানসিক স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। এমনকি যারা প্রযুক্তির সুবিধা থেকে বঞ্চিত তাদের কাছে কিভাবে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়া যাবে তাঁর জন্য কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে হবে।”

তৌহিদা শিরোপা বলেন, “মনের বন্ধু একটি টেকনোলজি-বেজড মানসিক স্বাস্থ্য স্টার্ট আপ। এডভান্সড টেকনোলোজি ও এআই এর সহায়তায় সর্বস্তরের মানুষের কাছে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা গত ৬ মাসে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ‘আমিই মনের বন্ধু – মানসিক স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ’ আয়োজন করেছি। যার মাধ্যমে তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তার বিস্তার ও সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে রেজিলিয়েন্স তৈরি হয়েছে। আমরা চাই সকলের সহযোগীতায় বাংলাদেশ সরকারের ‘জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য বাস্তবায়ন পরিকল্পনা (২০২৪-২০২৯) এর আলোকে একটি রেজিলিয়েন্ট ও স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরি করতে।”

ফয়সাল বিন মজিদ বলেন, “মনের বন্ধু বাংলাদেশের স্বনামধন্য দুইটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মেন্টাল হেলথ এবং সাইকোসোশ্যাল সাপোর্ট’ সংক্রান্ত একটি পাইলট প্রকল্প সফল্ভাবে বাস্তবায়ন করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় সর্বমোট ১২০ জন শিক্ষার্থীকে ‘আমিই মনের বন্ধু মানসিক স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ’ প্রদান করা হয়েছে যেন তারা একজন ‘মেন্টাল হেলথ ফার্স্ট রেস্পন্ডার’ হিসেবে তাদের সহপাঠীদের মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রাথমিক সহায়তা প্রদান করতে পারে। গত ছয় মাসে এই ধরণের ‘মেন্টাল হেলথ ফার্স্ট রেস্পন্ডারদের’ কাছে সর্বমোট ৫৬৩ জন শিক্ষার্থী মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সহায়তা চেয়েছেন। এর পাশাপাশি এই প্রকল্পের মাধ্যমে আট শতাধিক শিক্ষার্থীকে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য টেকসই পরিবেশ এবং সাইবার বুলিং এর বিরুদ্ধে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।”

রাউন্ড টেবিলে আরও উপস্থিত ছিলেন বিসিসির পিটিআইবি প্রোজেক্ট ডিরেক্টর মো. আবু সাঈদ, ইউএনডিপি বাংলাদেশের সিনিয়র গভর্নেন্স স্পেশালিস্ট শীলা তাসনিম হক, পিটিআইবি প্রোজেক্ট ম্যানেজার রবার্ট স্টোলম্যান, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি’র অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরি সহ আইসিটি বিভাগ ও ডিজি হেলথ সার্ভিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা প্রদানকারী, বিভিন্ন দূতাবাস, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন কর্মী, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *