ভ্যাট আহরণে চালু হলো ইএফডিএমএস
ক.বি.ডেস্ক: ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) আহরণে স্বচ্ছতা এবং গতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইলেক্ট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ইএফডিএমএস) চালু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রাথমিকভাবে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে এই ডিভাইসটির সংরক্ষণ ও পরিচালনার পাশাপাশি গ্রাহকদের কাছ থেকে ভ্যাট আহরণ করা হবে।
এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের ভ্যাট রিটার্ন দেয়ার সুযোগও থাকবে। এনবিআরের সার্ভারে সিস্টেমটি সংযুক্ত করা হয়েছে। এনবিআর সরাসরি ভ্যাট প্রদান ও আহরণের পরিমান সরাসরি পর্যবেক্ষণ-পরিবীক্ষণ করবে। বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট আহরণে এনবিআরের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডিভাইস বসাবে জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেড।
গতকাল মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) রাজধানীর আগারগাঁও রাজস্ব ভবনের মাল্টিপারপাস হলে এক অনুষ্ঠানে ইএফডিএমএস এর উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন এবং এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন এনবিআর’র সদস্য ড. মইনুল খান। অনুষ্ঠানে জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ্ জালাল উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এই ডিভাইস দেশে রাজস্ব আহরণের গতি বাড়াবে এবং রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে আরও স্বচ্ছতা তৈরি করবে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড ইতোমধ্যে ভ্যাট আহরণে ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করেছে। বাংলাদেশে রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থা আরও সুশৃঙ্খল করতে এনবিআরকে কাজ করে যেতে হবে। কর প্রদানের বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে সংবাদ মাধ্যমকে ভূমিকা রাখতে হবে। এনবিআরকে রাজস্ব আদায় করতে হবে এবং একইসঙ্গে রাজস্ব আদায় করতে গিয়ে কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন, সেটিও নিশ্চিত করতে হবে।
আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ভ্যাট আদায়ের জন্য ২০২০ সালের আগস্ট মাসে পরীক্ষামূলকভাবে ইএফডি মেশিন বসানো হয়। এনবিআরের জনবল স্বল্পতার কারণে সারাদেশে ইএফডির মাধ্যমে ভ্যাট সংগ্রহ সম্ভব নয়। এজন্য আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ডিভাইস পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইএফডির বর্তমান কার্যক্রম সাফল্যের ভিত্তিতে পরবর্তীতে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে সম্প্রসারণ করা হবে।
ফাতিমা ইয়াসমিন বলেন, ইএফডিএমএস চমৎকার উদ্যোগ। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে আর্থিক ব্যবস্থাপনা স্মার্ট হওয়াটা জরুরি। সরকার স্বয়ংক্রিয় চালান পদ্ধতি চালু করেছে এবং সঞ্চয়পত্র অনলাইন ভিত্তিক করেছে।
মাহবুবুল আলম বলেন, ব্যবসায়ীরা কোন হয়রানি ছাড়াই কর ও ভ্যাট দিতে চায়। এর জন্য অটোমেশনের বিকল্প নেই। ইএফডিএমএস সরকার ও ব্যবসায়ী উভয়ের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী উদ্যোগ, দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে ব্যবসায়ীরা সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করে যাবে।
শাহ্ জালাল উদ্দিন বলেন, ভ্যাট ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে শুধু সরকারের রাজস্বই বৃদ্ধি পাবে না বরং টেকসই অর্থনীতির পথেও দেশ এগিয়ে যাবে। ইএফডিএমএস ব্যবসায় উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এবং হিসাব শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে। ভ্যাট প্রদানে এবং রিটার্ন দাখিলে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সময় যে জটিলতা ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন তা এ ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে অনেকাংশে দূর হয়ে যাবে। প্রাথমিকভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রতিবছরে ৬০ হাজার করে পাঁচ বছরে তিন লাখ ইএফডিএমএস মেশিন বসানো হবে।
উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে মোট রাজস্বের প্রায় ৪০ শতাংশ আদায় হয় ভ্যাট থেকে। ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, বিপণি বিতান, হোটেল-রেস্টুরেন্টসহ ২৫টি খাতে ইএফডিএমএস ডিভাইস বসানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।