ভার্চুয়াল জগৎকে বাস্তবে রূপ দেবে ‘মেটাভার্স’
ক.বি.ডেস্ক: মেটাভার্স এর কারণে ইন্টারনেটের ভার্চুয়াল জগতকে মনে হবে বাস্তব জগতের মতো যেখানে মানুষের যোগাযোগ হবে বহুমাত্রিক। মেটাভার্স প্রযুক্তির মাধ্যমে কোন কিছু শুধু দেখাই যাবে না, তাতে নিজেকে জড়িয়ে ফেলা যাবে। মেটাভার্স প্রযুক্তিকে আপাতত ভার্চুয়াল রিয়েলিটি’র কোন সংস্করণ বলে মনে হতে পারে। কিন্তু এটি আসলে তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু। এই প্রযুক্তির ফলে অনলাইনের ভার্চুয়াল জগতকে মনে হবে সত্যিকারের বাস্তব পৃথিবীর মতো।
গত সোমবার (৬ মার্চ) রাজধানীর কাওরান বাজারের ভিশন টাওয়ারে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের পেশাজীবীদের সংগঠন সিটিও ফোরাম ও প্রযুক্তি খাতের সংবাদিকদের সংগঠন টেকনোলজি মিডিয়া গিল্ড বাংলাদেশের (টিএমজিবি) যৌথ উদ্দেগে আয়োজিত ‘মেটাভার্স’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেছেন বক্তারা।
মেটাভার্স শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শিক্ষাবিদ ও ই-লার্নিং বিশেষজ্ঞ ড. বদরুল হুদা খান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমার। বিশেষ অতিথি ছিলেন (অনলাইনে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিস অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. লাফিফা জামাল এবং আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি’র কম্পিউটার সায়েন্সের ডিরেক্টর প্রফেসর ড. দীপ নন্দী।
বক্তব্য রাখেন (অনলাইনে) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্দান ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএসডি রির্সাচ অ্যাসোসিয়েট অ্যান্টনি ক্লেমন্স, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও টেকএনটেলেন্টস এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসিফ এবং টিএমজিবি সভাপতি মোহাম্মদ কাউছার উদ্দিন। সভাপতিত্ব করেন সিটিও ফোরামের সভাপতি তপন কান্তি সরকার। সঞ্চালনা করেন সিটিও ফোরামের মহাসচিব আরফে এলাহী মানিক।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন টিএমজিবি’র সাধারণ সম্পাদক মুরসালিন হক জুনায়েদ, সহসভাপতি কুমার বিশ্বজিত, সহসভাপতি মাইদুল ইসলাম, সহসভাপতি রিশাদ হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম দাস্তগীর তৌহিদসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকবৃন্দ।
ড. বদরুল হুদা খান বলেন, বিশ্বের সঙ্গে আমরা যদি মেটাভার্সে তাল মিলিয়ে এগিয়ে না নেই তাহলে উন্নত প্রযুক্তিতে আমরা পেছনে পড়ে যাবাে। সরকারকে এই সেক্টরে এগিয়ে আসতে। মেটাভার্সের ফলে শিক্ষা খাতে বিপুল পরিবর্তন আসবে। সবাই যেন মেটাভার্স ব্যবহারের সুযোগ পেয়ে থাকে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
রণজিৎ কুমার বলেন, মেটাভার্সের জন্য নতুন কিছু প্রয়োজন হবেনা, প্রয়োজন হবে শুধু। শিক্ষার্থীদের এই সেক্টরে আগ্রহী করে তুলতে হবে। দুনিয়া দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তিকে বাদ দেয়ার সুযোগ নেই। কানেক্টিভিটিতে দুর্বল থাকলে মেটাভার্সের যুগে ভালাে করার সুযোগ থাকবে না। তাই কানেক্টিভিটিতে সরকার কাজ করছে।
তপন কান্তি সরকার বলেন, মেটাভার্সের কারণে ইন্টারনেটের ভার্চুয়াল জগতকে মনে হবে বাস্তব জগতের মতো যেখানে মানুষের যোগাযোগ হবে বহুমাত্রিক। মেটাভার্স প্রযুক্তির মাধ্যমে কোন কিছু শুধু দেখা যাবে না, তাতে নিজেকে জড়িয়ে ফেলা যাবে। এই প্রযুক্তির ফলে অনলাইনের ভার্চুয়াল জগতকে মনে হবে সত্যিকারের বাস্তব পৃথিবীর মতো। মেটাভার্স প্রযুক্তি তৈরির কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। ইন্টারনেটের গতি আরও দ্রুত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, বিশেষ করে ফাইভ-জি পুরোদমে বাজারে আসার পরেই, সব সমস্যার সমাধান ঘটবে। ১০ বছর আগে মেটাভার্স একটি ধারণার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এই মুহূর্তে এটি অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আগামী এক/দুই বছর পরে দেখবেন যে আমরা মেটাভার্সের জগতে প্রবেশ করে ফেলবো।
আরফি এলাহী বলেন মেটাভার্সকে থ্রি-ডি ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড বলতে পারেন। স্ক্রিনে এখনকার বেশিরভাগ স্পেস হচ্ছে টু-ডি বা দ্বিমাত্রিক। কিন্তু মেটাভার্স জগতে আমাদের অভিজ্ঞতা হবে থ্রি-ডির মতো। টেলিফোনে কারও সঙ্গে কথা বললে মনে হবে সামনা-সামনি আলাপ করা হচ্ছে।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, মেটাভার্সের ব্যবহার পুরোদমে শুরু হয়ে গেলে বাংলাদেশেও ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। এই প্রযুক্তির ফলে অনলাইনের ভার্চুয়াল জগতকে মনে হবে সত্যিকারের বাস্তব পৃথিবীর। বর্তমানে ভিআর বেশিভাগ ক্ষেত্রে অনলাইন গেমিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে, কিন্তু মেটাভার্সের ব্যবহার হবে সকল বিষয়ে- অফিসের কাজ থেকে শুরু করে খেলা, কনসার্ট, সিনেমা, এমনকি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার বেলাতেও।