সাম্প্রতিক সংবাদ

ব্যবসায় অ্যাক্টিভ শেয়ারের সুযোগ উন্মোচন করা হবে: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব

ক.বি.ডেস্ক: ইগভর্নেন্স, ইন্টারনেট অ্যফোর্ডেবিলিটিতে তিনটি লেয়ারে বিন্যস্ত হবে আগামী দিনের নেটওয়ার্ক টপলোজি। বৈশ্বিক মানে এগিয়ে যেতে এই সিদ্ধান্তে লাইসেন্সের সীমা সংখ্যায় না বেধেঁ কেপিআই নির্ধারণ করে দেয়া হবে। আগামী জুন থেকে শুরু হবে ডিরেগুলেশন। এ জন্য ডিজিটাল সেবা বাড়াতে হবে। আইওটি’তে নজর দিতে হবে। এই সেবার পথে বাঁধা গুড়িয়ে দেয়া হবে। ব্যবসায় অ্যাক্টিভ শেয়ারের সুযোগ উন্মোচন করা হবে। এক্ষেত্রে তিন বছরের মধ্যে মেট্রোতে মাটির নিচে শতভাগ টেলিকম ফাইবার স্থাপন করতে হবে।

গতকাল শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি মিলনায়তনে টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত ‘ইন্টারনেট সেবা: সমস্যা, সম্ভাবনা ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন প্রধান অতিথি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।

গোলটেবিল আলোচনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টিআরএনবি’র সাংগঠনিক সম্পাদক আল আমিন দেওয়ান। সভাপতিত্ব করেন টিআরএনবি’র সভাপতি সমীর কুমার দেব এবং সূচনা বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিন।

গোলটেবিল আলোচনায় বক্তব্য রাখেন আইএসপিএবি’র সভাপতি মো. ইমদাদুল হক এবং সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ভূঁইয়া, এমটব মহাসচিব মোহাম্মদ জুলফিকার, ফাইবার অ্যাট হোমের চেয়ারম্যান মঈনুল হক সিদ্দিকী এবং প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুমন আহমেদ সাবির, রবির কোম্পানি সেক্রেটারি ও চীফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম, বাংলালিংকের চীফ কর্পোরেট ও রেগুলেটরি অফিসার তাইমুর রহমান, টেলিটকের এজিএম সাইফুর রহমান খান, টেলিকম ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মোস্তফা মামুন হোসেন প্রমুখ।

গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা বলেন, ভবিষ্যতে এমন পদ্ধতি চালু রাখতে হবে যাতে ইন্টারনেট বন্ধ না হয়। কারিকুলাম, কালচারাল জায়গাগুলোতে পরিবর্তন দরকার, কারণ সামনে ইন্টারনেট ভিত্তিক অনেক পরিবর্তন হচ্ছে। কতগুলো জায়গায় লাইসেন্সের ব্যারিয়ারের কারণে ইন্টারনেটের কোয়ালিটি খারাপ হচ্ছে। সবাই এক জায়গায় বসে সমস্যা সমাধান করা যায়, তাহলে সবাই ব্যবসার পাশপাশি ব্যবসা করতে পারবেন। আলোচনায় ট্রান্সমিশন খরচ, ইন্টারনেটের কাঁচামাল ব্যান্ড‌উইডথের মূল্য এবং ইন্টারনেটের গতির পেছনের নানা সমীকরণ ওঠে আসে।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, “বাংলাদেশের ইন্টারনেটের কোয়ালিটি বিবেচনায় পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় মূল্য সবচেয়ে বেশি। এখনও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দুর্যোগের জন্য আলাদা ইন্টারনেট ব্যবস্থা নেই। তাই বৈশ্বিক মানে নিজেকে বিবেচনা করতে পারি না। এজন্য আমাদের প্রথম উদ্যোগ টপোলজি পরিবর্তন। আমরা অনেকগুলো লাইসেন্স তুলে ফেলবো। লাইসেন্স লিমিটেড থাকবে না, লাইসেন্সের শর্ত পূরণের জন্য সময় দেয়া হবে এবং নির্দিষ্ট সময়ে তা পূরণে ব্যর্থ হলে জরিমানা করা হবে।”

তিনি আরও বলেন, “আপনারা যারা ব্যবসায়ী তারা ব্যবসা করেন। আপনারা রাজনৈতিক বা ইনফ্লয়েন্সারদের কাছে যাবেন না। আমরা চাই ভয়েস ওভার ওয়াইফাই দ্রুত আসুক। আউট ডোরের ওপর থেকে ইনডোরে নিয়ে আসি। যাতে কোয়ালিটিটা নিশ্চিত করতে পারি। একই সঙ্গে টেলকো গ্রেডের ফাইবার নেই। ওভার হেডেড ফাইবারকে টেলকো গ্রেডের বলা যায় না। শতভাগ ফাইবার আন্ডার গ্রাউন্ডে থাকবে। ইন্টারনেট বন্ধ করার কালাকানুন বন্ধ করে দেয়া হবে। ফ্রিল্যান্সাররা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বিনিয়োগে সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিশ্বকে দেখানোর দরকার আছে যে ইন্টারনেট আর বন্ধ হবে না- এটি বিনিয়োগকারীদের দেখানোর বাধ্যবাধকতা আছে সেটি আমাদের দেখাতে হবে।”

মো. এমদাদ উল বারী বলেন, “আমরা সবাই শুধু নিজেদের স্বার্থ দেখে এসেছি। আমরা চাই একটি ক্যাটাগরির লাইসেন্স আরেকটি ক্যাটাগরির সঙ্গে সমন্বয় করে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করুক। তাই নেটওয়ার্ক টপোলজি ও একটিভ শেয়ারিংয়ের ফরম নিয়ে আলোচনা করছি। ‘এক দেশ এক রেট’ নিয়ে আমরা আবার কাজ করবো। এখানে শুধু একটি ক্যাটাগরি থাকবে। তাই লাইসেন্স আপগ্রেডেশনের প্রশ্ন আর ওঠবে না। এনটিটিএন লাইসেন্সকে একটি লাইসেন্স ক্যাটাগরিতে নিয়ে আসতে চাই। যারা ফিক্সড ব্রডব্যান্ড সেবা দেবে তারা ওয়্যারলেস দিতে পারবে না। আর যারা ওয়্যারলেস সেবা দেয় তারা ফিক্সড ব্রডব্যান্ড সেবা দিতে পারবে না। তবে বিজনেস টু বিজনেস যদি কোনো কথা হয় তা হতে পারে।”

মো. ইমদাদুল হক বলেন, “ধানমন্ডিতে পপ স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে ছয় হাজার গ্রাহক সেবা নিচ্ছেন। এর মাধ্যমে চাইলে কোনও গ্রাহক ৫ মিনিটের মধ্যে অপারেটর পরিবর্তন করতে পারবেন। এর ফলে প্রত্যেক ব্যবহারকারী খুশি এবং অপারেটররাও খুশি। বিদ্যুৎ, জনবল সাশ্রয় হচ্ছে। সব দিক থেকে সাশ্রয় হলে আমরা ভালো সেবাটা দিতে পারবো। আইআইজিদের প্রাইজ ১২০ টাকা হওয়া উচিত। ব্রডব্যান্ডে আইআইজি থেকে প্রাইজ কমানোর সুবিধা পাচ্ছি না। আর সে কারণে জনগণের দোরগড়ায় পৌঁছাতে পারছি না। এনটিটিএনদের ট্রান্সমিশন কষ্ট ৫ টাকায় নিয়ে আসা সম্ভব। তারপরও আজ থেকে আমরা ৫০০ টাকায় বিদ্যমান ৫ এমবিপিএস গতিকে ১০ এমবিপিএস করছি।”

তিনি আরও বলেন, “ইনফো সরকারসহ গত সরকারের নেয়া প্রকল্পগুলোতে আইএসপিগুলো প্রবেশ করতে পারেনি। ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের মূল্যের পার্থক্য রয়েছে কারণ ট্রান্সমিশন খরচ। এসওএফ ফান্ড নিয়ে বিটিআরসি এবং আইএসপি অপারেটরদের মধ্যে সমস্যা হচ্ছে। এজন্য আ্যাক্টিভ শেয়ারিং চালু, লাইসেন্স মেয়াদ ১০ বছর করা, আইআইজি, এনটিটিএন ক্যাপাসিটি এবং সরকারি অবকাঠামো ব্যবহারের সুযোগ এবং ৫ বছরের জন্য লভ্যাংশ শেয়ার থেকে বাইরে রাখলে এই গতি ২০ এমবিপিএস করা যাবে। আরও তিন বছর আমাদের এই ফান্ডের বাইরে রাখা হলে আমরা কাঙ্খিত লক্ষ্যে যেতে পারবো। একইসঙ্গে নতুন লাইসেন্স দেয়া উচিত। যারা সেবা দিতে চায় তারা যেন কাঙ্খিত সেবা সারাদেশে পৌঁছাতে পারে। লাইসেন্সের মেয়াদ ১০ বছর হওয়া উচিত।”

নাজমুল করিম ভূঁইয়া বলেন, “ফাইবার মাটির নিচে গেলে প্রতিমাসে ১০০ কোটি টাকা বাঁচবে। ধানমন্ডিতে এ কাজে সফল হয়েছে আইএসপিএবি। তবে এখনও এই প্রকল্প বিকাশের অনুমোদন হয়নি। কেনো একটিভ শেয়ারিং হচ্ছে না জানি না। প্রতিমাসে আইএসপিরা একশ’ কোটি টাকা লস করে। ফাইবার কাটা পড়ে। কেউ সকালে দাঁত ব্রাশ করতে ওঠেছে দেখেছে আমার বাড়ির সামনে দিয়ে কেন যায়, কেটে দেই। বার বার আমরা একই জিনিষ কতবার বলবো। ধানমন্ডি এলাকায় দেখেন সেখানে সবাই খুশি।”

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *