বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই ইন্টারনেট এখন স্বীকৃত মৌলিক মানবাধিকার
ক.বি.ডেস্ক: করোনা মহামারিতে আমাদের দেশের অর্থনীতি রাষ্ট্রব্যবস্থা ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল হয়েছিল। ইন্টারনেট এখন আর বিনোদন কিংবা কথা বলার মধ্যে বা পরিবারের যোগাযোগের মাধ্যম নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই ইন্টারনেট এখন স্বীকৃত মৌলিক মানবাধিকার। তাই বাংলাদেশে ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার ও ডেটা সুরক্ষা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার ও ডেটা সুরক্ষা নিশ্চিত করলে ভবিষ্যতে আর ইন্টারনেট বন্ধ হবে না।
আজ বুধবার (২৭ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি হলে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিশেন আয়োজিত “সংবিধানে ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার ও ডেটা সুরক্ষা অন্তর্ভুক্তি” শীর্ষক নাগরিক মতামত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
নাগরিক মতামত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বেসিস’র সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর, আইআইজিএবি’র সভাপতি আমিনুল হাকিম, আইএসপিএবি’র জয়েন্ট সেক্রেটারী কাইয়ুম, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, প্রযুক্তি বিশ্লেষক তানভীর হাসান জোহা, টেলিযোগাযোগ বিশ্লেষক মোস্তফা মাহমুদ হুসাইন এবং রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের দিদারুল ভূইয়া। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ
বক্তারা বলেন, বর্তমানে টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) স্বীকৃত। ইন্টারনেট না থাকার ফলে কি পরিমান ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় তা টের পাওয়া গিয়েছে জুলাই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময়। মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ ছিল প্রায় ১৩ দিন, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ ছিল আট দিন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ ছিল প্রায় ১৫ দিন। বিভিন্ন ব্যবসায়ী অর্থনীতিবিদদের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছিল কেবলমাত্র ইন্টারনেট বন্ধের কারণে।
ফাহিম মাশরুর বলেন, “বর্তমানে বাংলাদেশ ইন্টারনেট নির্ভর। বিশ্বের সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ সহ দেশের প্রায় সব কাজই এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা হয়। আর্থিক লেনদেন থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজই হয় এখানে। সুতরাং ইন্টারনেট এখনো সাধারণ কিছু না। এটি মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। তাই ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবির সঙ্গে আমি একমত পোষণ করছি।”
আমিনুল হাকিম বলেন, “আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কথা জানি, ন্যাশনাল আইডি কার্ডের বিষয়ে জানি। ইন্টারনেটে যেন আমার ডেটাটি সুরক্ষিত থাকে, এটি নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য সরকারকে প্রস্তাব দিতে হবে এবং যুক্তি দিয়ে বোঝাতে হবে। দায়িত্ব নিয়ে সরকারকে কাজ করতে হবে।”
আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, “ইন্টারনেটে মৌলিক অধিকার দেয়ার যে প্রস্তাব এসেছে, সেটির সঙ্গে আমি একমত। যে কারণে আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে গেছে। যে কারণে এই প্রজন্ম ফার্মের মুরগি তকমা ছাড়িয়ে রাজপথে নেমেছে। সেই মাধ্যমটাকে ছোট করার কোন সুযোগ নেই। রাজনৈতিক দলের পয়সা উৎপাদনের কিছু ক্ষেত্র। এর মধ্যে রয়েছে ইন্টারনেটের ব্যবসা ও ডিসের ব্যবসা। এই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি করছি এই ব্যবসাগুলোকে কর্পোরেট করে ফেলার। কারণ এখান থেকে রাজনৈতিক দলের নেতারা কোটি কোটি টাকা আয় করেন।”
মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বর্তমানে প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনের সঙ্গে সঙ্গে নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রতারক হ্যাকার ও স্ক্যামার চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে নাগরিকের তথ্য বেহাত করে যেমন ভাবে সর্বশান্ত করছে আবার অন্যদিকে বেসরকারি বা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো নাগরিকের তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যে ব্যর্থ হয়েছে। যেহেতু বর্তমানে চিঠি আদান-প্রদান এর মাধ্যম আর নেই, তাই ইমেইল হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা প্রযুক্তির অন্যান্য সকল মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে এমনকি সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে নাগরিকের প্রদেয় তথ্য সুরক্ষিত রাখতে সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে ইন্টারনেট ও ডিজিটাল বিন্যাসে নাগরিকের ডেটা সুরক্ষা অন্তর্ভুক্তি উল্লেখ থাকা অতি আবশ্যক বলে মনে করছি।”