প্রেক্ষাপট ক্ষতিকর গেম: সেন্সরশিপসহ সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার পরামর্শ
ক.বি.ডেস্ক: সরকার ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি ক্ষতিকর গেম নিষিদ্ধ ও এ সম্পর্কিত সেন্সরশিপ ব্যবস্থাসহ সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার পরামর্শ তুলে ধরেছে তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইনফরমেশন সিস্টেম অডিট অ্যান্ড কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশন (আইসাকা) ও বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন (সিসিএ ফাউন্ডেশন)।
সংগঠন দুটি বলছে, ক্ষতিকর দিক বিবেচনায় দেশে প্রচলিত সহিংস গেমগুলো বন্ধ করা যেতে পারে, তবে শুধু বন্ধ করলেই সমস্যার পুরোপুরি সমাধান হবে না, সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধারণ করে সেরকম গল্প দিয়ে গেম তৈরির বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে উতসাহ দিতে হবে। মানসম্পন্ন গেম তৈরিতে গুরুত্ব দিলে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদেরও নজরে পড়বে বাংলাদেশের গেম ইন্ডাস্ট্রি। একইসঙ্গে ইন্টারনেট ব্যবহারের গাইডলাইন তৈরির বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে সংগঠন দুটির নীতিনির্ধারকরা।
গতকাল সোমবার (৩১ মে) যৌথ বিবৃতিতে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার পরামর্শ তুলে ধরা হয়। যৌথভাবে এ বিবৃতি দিয়েছেন আইসাকা ঢাকা চ্যাপ্টারের সভাপতি মো. ইকবাল হোসেন ও সিসিএ ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজী মুস্তাফিজ। এতে পাবজি ও ফ্রি ফায়ার গেমসহ ক্ষতিকর অন্যান্য সহিংস গেম নিষিদ্ধ করার পক্ষে মতামত দেয়া হয়েছে। দেশে সুস্থ সাইবার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার জন্য সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠন দুটি।
বিবৃতিতে বলা হয়, প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের খেয়াল রাখতে হবে আমাদের বাস্তব জীবন ও অনলাইন জীবনযাপনের মধ্যে ভারসাম্য যেন থাকে। এক্ষেত্রে প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইন্টারনেট ব্যবহার যেন আসক্তিতে পরিণত হয়ে স্থায়ী রূপ না নেয় সেদিকে অভিভাবকদের তীক্ষ্ণ নজরদারি প্রয়োজন। এসব নিয়ে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সারাদেশে ব্যাপকভাবে সাইবার সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিয়মিত রাখতে হবে।
এখনকার তরুণদের খেলা প্রায় সব ভিডিও গেম সন্ত্রাসী ধরণের হয়ে থাকে। এর ফলে পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাং তৈরির মাধ্যমে সহিংস ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। এর থেকে পার পেতে হলে পরিবার ও রাষ্ট্রের বড় ভূমিকা রয়েছে। যেসব গেমের গল্প এমনভাবে তৈরি যা কৌশল এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনার মতো বিষয়গুলো রয়েছে সেগুলো গেমারদের মস্তিষ্কে শিক্ষণীয় বার্তা দেয়। এ ধরনের গেম শিশুদের বুদ্ধিভিত্তিক মেধা বিকাশে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। তবে খেয়াল রাখতে হবে কোনো কিছুই যেন আসক্তিতে পরিণত না হয়। গেমের গল্প তৈরির ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি এবং সার্বিকভাবে মানবিক মূল্যবোধের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। গেম তৈরি ও খেলার নিয়মের সঙ্গে বাস্তবতার মিল রাখতে হবে। আন্তর্জাতিক আইন ও স্থানীয় সংস্কৃতি অনুযায়ী মহাদেশভিত্তিক গেমিং সংস্করণ তৈরিতে নির্মাতাদের একটি নীতিমালার মধ্যে নিয়ে আসা যায়। সিনেমাগুলো যেভাবে সেন্সর করা হয় এক্ষেত্রেও সেই বিষয়টি প্রয়োগ করলে ইতিবাচক ফল দেবে। সব কিছুরই ভালো ও মন্দ দুধরনের দিক আছে। তাই ক্ষতিকর বিষয়গুলোকে বর্জন করে ইতিবাচক বিষয়গুলোর উন্নয়নে সবাইকে নজর দিতে হবে।
বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য কোনো গাইডলাইন এখনো হয়নি। উন্নত দেশগুলোতে ইন্টারনেট ব্যবহার বিষয়ে গাইডলাইন আছে। বাংলাদেশেও এটি করতে হবে। ইন্টারনেটের অপব্যবহারের কারণে আমাদের সামাজিক সম্প্রীতির ঐতিহ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পরিবারের মাধ্যমেই সামাজিক সম্প্রীতি গড়ে তোলা যায়। পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক না থাকায় সন্তানেরা সহিংস উগ্রবাদের মতো জীবন বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়লেও সেই খবর বাবা-মার কাছে থাকছে না।