প্রস্তাবিত বাজেটে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার চান ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা

ক.বি.ডেস্ক: গত সোমবার (২ জুন) বাংলাদেশের ৫৪তম ‘২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট’ উপস্থাপন করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে অনলাইনে পণ্য বিক্রয় কমিশনের ওপর ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে অনলাইনে পণ্য বিক্রয় কমিশনের ওপর প্রস্তাবিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট (ভ্যালু এডেড ট্যাক্স) প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)- এর সদস্যরা।
গতকাল মঙ্গলবার (৩ জুন) ঢাকার ধানমন্ডীতে অবস্থিত ই-ক্যাব এর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বাজেট পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে এই দাবি তুলে ধরেন সংগঠনের সাধারণ সদস্যরা। ই-ক্যাবের নির্বাচিত কার্যনির্বাহী পরিষদ না থাকায় প্রশাসক মুহাম্মদ সাঈদ আলীর উপস্থিতিতে সংগঠনের সাধারণ সদস্যরাই এবারের বাজেট প্রতিক্রিয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বাজেট প্রতিক্রিয়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ই-ক্যাবের প্রশাসক মুহাম্মদ সাঈদ আলী, চালডাল ডটকমের প্রধান পরিচালন কর্মকতা জিয়া আশরাফ, পাইকারি লিমিটেড বিডির ব্যবস্থাপনা পরিচালক অন্তু করিম, দারাজ বাংলাদেশের চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার এ এইচ এম হাসিনুল কুদ্দুস (রুশো), এজিউর কুইজিনের স্বত্তাধিকারী জান্নাতুল হক (শাপলা), ফার্নিকমের স্বত্ত্বাধিকারী ময়নুল হোসেন, বিডি এক্সক্লুসিভের স্বত্ত্বাধিকারী ইসমাইল হুসাইন।
প্রশাসক সাঈদ আলী বলেন, “ই-ক্যাবের সদস্যরা প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্যাট প্রত্যাহারের যে দাবি তুলেছে তা যৌক্তিক। আমিও মনে করি সরকার রাজস্ব আদায়ের কৌশল হিসেবে অনলাইন কেনাটাকার কমিশনে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করেছে। এতে রাজস্ব না বেড়ে উল্টো কমে যাবে। কারণ অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এই পরিমাণ ভ্যাট দিয়ে ব্যবসা ব্যবসা করতে পারবে না। এতে দেশের বেকারত্ব বাড়বে। সরকারকে তাদের পেছনে ভর্তুকি বাবদ ব্যয় বাড়াতে হবে। অনলাইন কেনাকাটার কমিশনের ওপর ভ্যাট শুণ্যের কোঠায় নামিয়ে আনলে রাজস্ব আরও বাড়বে। ব্যবসা বাড়লে সরকার এখাত থেকে অনেকভাবে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে পারবে।”
জিয়া আশরাফ বলেন, “১৫ শতাংশ ভ্যাট দিয়ে ব্যবসা করা কঠিন হবে। ই-কমার্স খাতের সম্প্রসারণকে উৎসাহিত করতে হলে এখাতকে ভ্যাটমুক্ত রাখতে হবে। নতুন বাংলাদেশে একটি বড় প্রত্যাশা ছিল ডিজিটাল ইনক্লুশন। ই-কমার্স খাত এই প্রত্যাশা পুরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ই-কমার্স খাতকে সঠিকভাবে বিকশিত করতে হলে এখাতে ২ শতাংশ ভর্তুকি দেয়া দরকার।”
অন্তু করিম বলেন, “ই-কমার্স খাতকে পৃষ্ঠপোষকতা না করলে এই খাত সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। আমরা যারা বিটুবি অর্থাৎ বড় পরিসরে পণ্যের বেচাকেনা করি, তাদের জন্য ১৫ শতাংশ ভ্যাট অনেক বড় বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। এতে পণ্যের দাম বেড়ে গিয়ে ভোক্তার ওপর চাপ তৈরি করবে। ফলে ভোক্তা অনলাইনে কেনাকাটা করতে নিরুৎসাহিত হবে।”

এ এইচ এম হাসিনুল কুদ্দুস (রুশো) বলেন, “আমরা বিশ্লেষণ করে দেখেছি, বিক্রয় কমিশনের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিয়ে অনলাইনে পণ্য বিক্রয় করতে হলে অনেক পণ্যের খুচরা মূল্য সাধারন স্টোর থেকে অনলাইনে বেশি পড়বে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের কাছাকাছি পৌছে যাবে।”
জান্নাতুল হক (শাপলা) বলেন, অনলাইন কেনাকাটা সময় বাঁচায়। ভ্যাট বাড়লে পণ্যের ব্যয় বাড়বে। আমরা চাই সাধারণ মানুষের জীবন-ব্যয় কমে আসুক, সময় বাঁচুক।”
ময়নুল হোসেন বলেন, “এত উচ্চ ভ্যাট দিয়ে প্রস্তুতকারকরা মার্কেটপ্লেসে পণ্য বিক্রি করতে পারবে না। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ই-কমার্স থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।”
ইসমাইল হুসাইন বলেন,“ই-কমার্স খাতের প্রচারের জন্য সামাজিক মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিতে দুই দফায় ভ্যাট দিতে হচ্ছে। এটারও একটি যৌক্তিক সমাধান দরকার।”
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডায়াবেটিস স্টোরের মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন, বিক্রয় বাজার ডটকমের এস এম নুরুন নবী, ইপাইকার এক্সটেন্সিভের শেখ শাফায়াত হোসেন, আমার গেজেটের মো. সাইফুল ইসলাম, মেনসেন মিডিয়ার ইঞ্জি তৌহিদা হায়দার, টপ ট্রেনডজের এম এম রায়হানা বেগম, অদম্য প্রকাশের নাজিবউল্লাহ রাফে, নিজল ক্রিয়েটিভের আবু সুফিয়ান নিলাভ ভূইয়া, স্নো এন রেইনের কামরুল ইসলাম, টপ মোরের কাজী মুকিতুজ্জামান ও এটোভা টেকনোলজির সিও ফেরদৌস আলম ঈপন প্রমুখ।