নারীর দক্ষতা ও কর্মসংস্থান উন্নয়নে ‘হারআইজন ফেস্ট ২০২৫’

ক.বি.ডেস্ক: জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ)-এর উদ্যোগে এবং জার্মান উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা (জিআইজেড)-এর কারিগরী সহায়তায় দুই দিনব্যাপী (৬-৭ অক্টোবর) আয়োজিত ‘হারআইজন ফেস্ট ২০২৫: সেলেব্রেটিং ওমেন, স্কিলস অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট’-এর উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে নারী ক্ষমতায়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দক্ষতা উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। পাশাপাশি বাংলাদেশের দক্ষতা উন্নয়নে নারীবান্ধব ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অনুষ্ঠানে ৪৫০-এর বেশি অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল সোমবার (৬ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী।
বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব মো. সাইফুল্লাহ পান্না এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কারিগরি অনুবিভাগ) শোয়াইব আহমাদ খান। সম্মানিত অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মানির রাষ্ট্রদূত ড. রুডিগার লোটজ। সভাপতিত্ব করেন এনএসডিএ-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. নাজনীন কাউসার চৌধুরী।
উপদেষ্টা ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন তখনই সম্ভব, যখন তারা শুধু প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানে নয়, নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও সক্রিয় ভূমিকা রাখবেন। বাংলাদেশের নারী শ্রমিকরা বিশেষ করে গার্মেন্টস খাতে দেশের অর্থনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন। দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি নারীর নিরাপদ কর্মপরিবেশ, নেতৃত্ব বিকাশ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি। নারীর ক্ষমতায়ন কেবল নীতিতে নয়, বাস্তব নেতৃত্ব ও প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে প্রতিফলিত হতে হবে।”
লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, “বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রায় নারীরা কেবল অংশগ্রহণকারী নয়, বরং অন্যতম চালিকাশক্তি। দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মক্ষেত্রে নারীর সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে সরকার, বেসরকারি খাত ও উন্নয়ন সহযোগীদের যৌথভাবে কাজ করতে হবে। এনএসডিএ’র উদ্যোগ নারীদের জন্য আরও ফ্লেক্সিবল ও সহায়ক শেখার পরিবেশ সৃষ্টি করবে, যা সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সহায়ক হবে।”
মো. সাইফুল্লাহ পান্না বলেন, “এনএসডিএ দেশের কর্মসংস্থান ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এবং এটি পূর্ণ সক্ষমতায় কাজ করলে বেকারত্বের বড় অংশ সমাধান সম্ভব। দেশের শ্রমশক্তির অর্ধেকই নারী, যারা দক্ষ, পরিশ্রমী ও সহিষ্ণু, এবং তাদের সম্পৃক্ততা জিডিপি গ্রোথ, রেমিট্যান্স এবং অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
শোয়াইব আহমাদ খান বলেন, “নারীর শ্রমশক্তি দেশের অর্থনীতির অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ, তবে এখনও নারী অংশগ্রহণ সীমিত এবং অনানুষ্ঠানিক কাজ ও গৃহস্থলীর দায়িত্বের কারণে বাধাগ্রস্ত। নারীকেন্দ্রিক কারিগরি শিক্ষা, সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ, ইন্ডাস্ট্রি-রেডি প্রশিক্ষণ এবং সামাজিক মানসিকতা পরিবর্তনের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।”
রাষ্ট্রদূত ড. রুডিগার লোটজ বলেন, “নারীর ক্ষমতায়ন শুধুমাত্র নারীর নয়, সকলের এবং এটি সফল হবে শুধুমাত্র সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে। নিরাপদ, অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশে নারীরা তাদের প্রতিভা প্রকাশ করতে পারলে সমগ্র সমাজ ও অর্থনীতির উন্নয়ন সম্ভব। বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রমে জার্মানির সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।”
ড. নাজনীন কাউসার চৌধুরী বলেন, “এনএসডিএ নারী, প্রতিবন্ধী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বাজারমুখী দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করছে। এ সম্মেলনের মাধ্যমে নারীর জন্য চাহিদাভিত্তিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, শিল্প ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো নারীর জন্য নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ কর্মপরিবেশ, প্রতিবন্ধী নারী ও অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক সুযোগ সৃষ্টি এবং ভবিষ্যতের শ্রমবাজার যেমন ডিজিটাল অর্থনীতি, সবুজ শিল্প, কেয়ার ইকোনমি ও সৃজনশীল খাতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির রূপরেখা তৈরি হবে। এই উৎসব নারীর ক্ষমতায়ন ও টেকসই দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি কার্যকরী প্ল্যাটফর্ম হয়ে ওঠবে।”
গতকাল অনুষ্ঠানের প্রথম দিনে জেন্ডার-সেন্সিটিভ সক্ষমতা ভিত্তিক প্রশিক্ষণ, বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ এবং সুবিধাবঞ্চিতদের সমান সুযোগের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে ইন্টারঅ্যাকটিভ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। নেপাল, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রিয়া, জার্মানি এবং ইউনিসেফের আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা নারীদের অন্তর্ভুক্তিমূলক কারিগরি শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ দক্ষতা নিয়ে বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন, যা তরুণ, প্রান্তিক ও ঝুঁকিপূর্ণ নারীদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ বাড়াতে এনএসডিএ’র কৌশল প্রণয়নে সহায়তা প্রদান করে।