নতুন ধারার অপরাধ এটিএম হ্যাকিং
ক.বি.ডেস্ক: স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের (সিসিএ ফাউন্ডেশন) ৬ষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে “বাংলাদেশে সাইবার অপরাধ প্রবণতা-২০২১” গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। গত শুক্রবার (১৮ জুন) অনলাইনে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
সিসিএ ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজী মুস্তাফিজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক ছিলেন ঢাবির অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন খন্দকার ফারজানা রহমান, কুবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী আনিছ,পিআইবির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ফরেনসিক) মো. মোস্তফা কামাল রাশেদ, দৈনিক প্রথম আলোর যুব কর্মসূচি বিভাগের প্রধান মুনির হাসান,বিআইজিএফ মহাসচিব মোহাম্মদ আব্দুল হক অনু ও প্রটেক্ট আস কিডসের বাংলাদেশ প্রতিনিধি শারমিন নাহার লিনা। গবেষণা প্রতিবেদনের বিস্তারিত তুলে ধরেন সিসিএ ফাউন্ডেশনের রিসার্চ সেলের আহ্বায়ক মনিরা নাজমী জাহান।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, দেশে সুস্থ সাইবার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে সরকারি-বেসরকারি অংশীজনসহ সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। সুস্থ সাইবার প্রজন্ম গড়ে তুলতে তৃণমূল থেকে অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। এখনো অভিভাকদের এক শতাংশও ডিজিটাল ডিভাইসের প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ব্যবহার করে না। আমরা যতবেশি ডিজিটাল হবো ততো বেশি ডিজিটাল অপরাধ বাড়বে। তাই সবাইকে এখনই এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
বাংলাদেশে সাইবার অপরাধ প্রবণতা-২০২১ গবেষণা প্রতিবেদন: প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৯-২০২০ সালে দেশে সাইবার অপরাধের মধ্যে আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে সামাজিক মাধ্যমসহ অন্যান্য অনলাইন একাউন্ট হ্যাকিং বা তথ্য চুরি। গবেষণায় এটিএম কার্ড হ্যাকিংয়ের মতো একটি নতুন অপরাধ শনাক্ত করা হয়েছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির ফলে অনলাইনে কেনাকাটা বৃদ্ধি পাওয়ায় আগের তুলনায় অধিক মাত্রায় মানুষ অনলাইনে পণ্য কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। অনলাইনে কেনাকাটায়অপরাধের মাত্রা বেড়ে হয়েছে ১১ দশমিক ০৮ শতাংশ।
গবেষণা প্রতিবেদনটিতে সামগ্রিক ফলাফলে দেখা গেছে দেশে চার ধরনের অপরাধের মাত্রা কমেছে। অন্যদিকে ছয় ধরনের অপরাধের মাত্রা বেড়েছে। তবে সাইবার অপরাধে আক্রান্ত হওয়ার পরেও আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর কাছে এই ভুক্তভোগীদের অভিযোগের হার হতাশাজনক। দেশে সাইবার সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি সাইবার লিটারেসিও বাড়াতে হবে।
গবেষণায় সাইবার অপরাধের তুলনামূলক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রথম স্থানে রয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অন্যান্য অনলাইন একাউন্ট হ্যাকিংয়ের ঘটনা, যার হার ২৮.৩১ শতাংশ। অপরাধের ধরনে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে অপপ্রচার। তবে এই অপরাধের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের ঘটনা ১৬.৩১ শতাংশ। কিন্তু যৌন হয়রানিমূলক একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি/ভিডিও (পর্ণোগ্রাফি) ব্যবহার করে হয়রানির মাত্রা বেড়েছে। অপরাধের মাত্রাটি আগের ৬ দশমিক ০৫ শতাংশ থেকে বেড়ে এবার হয়েছে ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। তবে কমেছে ফটোশপে ভুক্তোভোগীর ছবি বিকৃতি করে হয়রানির ঘটনা। এই অপরাধের হার গতবারের চেয়ে এবার অর্ধেকের নিচে নেমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৮৫ শতাংশে। এদিকে অপরাধের মাত্রায় অনলাইনে মেসেজ পাঠিয়ে হুমকি দেয়ার ঘটনা এবার তৃতীয় শীর্ষ অবস্থানে উঠে এসেছে। তবে এই অপরাধের মাত্রা গতবারের প্রতিবেদনের তুলনায় প্রায় তিন শতাংশ কমে নেমে এসেছে ১৪ দশমিক ১৬ শতাংশে, যা গতবার ছিল ১৭.৬৭ শতাংশ।
গবেষণায় সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সাইবার স্কোয়াড গঠন, ই-কমার্স নীতিমালা ও রাজনৈতিক জনশক্তিকে সচেতনতামূলক কাজে নিয়োজিত করাসহ নয় দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়।