দুই বছরে দেশের তরুণদের পছন্দের ব্রান্ড শাওমি: জিয়াউদ্দিন চৌধুরী
২০১৮ সালের ১৭ জুলাই শাওমি বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। বাংলাদেশের বাজারে অফিসিয়ালি শাওমির দুই বছর পূর্ণ হয়েছে। এই স্বল্প সময়ের মধ্যে শাওমি দেশের বহুমুখী বাজারকে লক্ষ্য করে গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন মূল্যের স্মার্ট ডিভাইস বাজারে এনেছে। বাংলাদেশে শাওমির পথচলার নানাবিধ গল্প জানিয়েছেন, শাওমি বাংলাদেশের কান্ট্রি জেনারেল ম্যানেজার জিয়াউদ্দিন চৌধুরী। স্বাক্ষাতকার নিয়েছেন ভূঁইয়া মোহাম্মদ ইমরাদ (তুষার)
কমপিউটার বিচিত্রা: মাত্র দুই বছরে শাওমি অন্যদের থেকে কিভাবে আলাদা হতে পেরেছে?
জিয়াউদ্দিন চৌধুরী: বাংলাদেশের বাজারে অফিসিয়ালি শাওমির পথচলা দুই বছর হলো। এই সময়ের মধ্যে আমরা দেশের বহুমুখী বাজারকে বোঝার চেষ্টা করেছি, গ্রাহকদের বিভিন্ন মূল্যের পণ্যের চাহিদা সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করি। বাংলাদেশের স্মার্টফোনের বাজার খুব প্রতিযোগিতাপূর্ণ। খুব কম মুনাফা করে আমরা গ্রাহকদের একটা ভালো স্পেসিফিকেশনের স্মার্টফোন পৌঁছে দিতে সর্বদা চেষ্টা করে যাচ্ছি।
আমাদের সব ধরনের ডিভাইস দেশব্যাপী আমাদের রিটেইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পৌঁছে দিতে আমরা সক্ষম হয়েছি। আড়াই শতাধিক অথোরাইজড মি স্টোর, ৫০টি মি পার্টনার স্টোর, ৩০০০ এর অধিক রিটেইল এবং আমাদের অফিসিয়াল অনলাইন পার্টনার দারাজ এবং পিকাবুর মাধ্যমে অফিসিয়াল পণ্য ক্রেতা গ্রাহকদের হাতে পৌঁছাতে কাজ করছে।
রেড কোয়ান্টার রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশে স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে শাওমি সবচেয়ে ভালো বিক্রয়োত্তর সেবা দিচ্ছে। আমরা এর জন্য গর্বিত যে, আমরা শুধু ভালো পণ্যই সরবরাহ করছি না। পাশাপাশি শাওমি ব্র্যান্ড হিসেবে গ্রাহকদের একটা ভালো এক্সপেরিয়েন্স দিতে পারছে।
বর্তমানে দেশব্যাপী আমাদের ১৪টি স্মার্টফোন সার্ভিস সেন্টার এবং ৪০টি কালেকশন পয়েন্ট আছে। শাওমি বাংলাদেশ দুই লাখের বেশি ফ্যান নিয়ে মি ফ্যান কমিউনিটি দেশে সবচেয়ে বড় স্মার্টফোন ব্র্যান্ড কমিউনিটি। মি ফ্যানদের ভালোবাসায় আমরা প্রতিনিয়তই নতুন প্রযুক্তিপণ্য ও সেবা নিয়ে কাজ করছি। এ সবকিছু মিলিয়ে আমরা খুব অল্প সময়ের মধ্যে দেশের শীর্ষ পাঁচ ব্র্যান্ডের মধ্যে একটি হিসেবে স্থান করে নিতে পেরেছি।
নিউ নরমাল লাইফে ‘মিউজিক উইথ মি’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের তরুণদের মধ্যে নতুন এক প্রাণ সঞ্চার করেছে শাওমি। মি ফ্যানদের অনুরোধে, ফ্যানদের পছন্দের ব্যান্ড দলের অংশগ্রহণে পছন্দের চারটি ব্যান্ডের কনসার্ট লাইভ করা হয়েছে সম্প্রতি বাজারে আসা শাওমির রেডমি নোট ৯ প্রো স্মার্টফোনে। বাংলাদেশে এটাই প্রথম আয়োজন যেখানে এই লকডাউনে ব্যান্ডদলের সঙ্গে তরুণদের জন্য কনসার্ট করা হয়েছে ঘরে থেকেই। আর সেটা হয়েছে সম্পূর্ণ স্মার্টফোনের মাধ্যমে। যেখানে তরুণদের পছন্দের সব ব্যান্ড ও শিল্পীরা গান করেছেন। গত ঈদের ছুটির সময়ে অর্থাৎ ৩০ ও ৩১ জুলাই এবং ১ ও ২ আগস্ট চারটি ব্যান্ড এই আয়োজনে অংশ নিয়েছিল। মিউজিক উইথ মি কনসার্টে অংশ নেওয়া ব্যান্ডগুলো হচ্ছে চিরকূট, আর্টসেল, তাহসান অ্যান্ড দ্য ব্যান্ড এবং দলছুট।
ক.বি. গত দুই বছরে শাওমি ডিভাইসে কি নতুনত্ব এসেছে?
জিয়াউদ্দিন চৌধুরী: শাওমি সবসময় স্বল্পমূল্যে ভালোমানের পণ্য দিতে কাজ করে যাচ্ছে। গত দুই বছরে শাওমি দেশে নতুন বেশ কয়েক ক্যাটাগরির পণ্য এনেছে। দেশে স্মার্টফোনে বেশ কিছু নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন আনার পথিকৃৎও শাওমি। এর মধ্যে গত বছর রেডমি নোট ৮ প্রো দিয়ে বাংলাদেশের বাজারে শাওমি প্রথম ৬৪ মেগাপিক্সেল ক্যামেরার স্মার্টফোনের পরিচয় করায়। ক্যামেরা গ্রাহকদের চাহিদা এবং আকর্ষণের অন্যতম হিসেবে সবসময় উপরের দিকে থাকে। শাওমি ৬৪ মেগাপিক্সেলের কোয়াড ক্যামেরা দিয়ে দেশে প্রথম স্মার্টফোন আনে।
আমরা দেশে প্রথম গরিলা গ্লাস ৫ প্রযুক্তি এবং পি২আই স্প্ল্যাশ রেজিস্ট্যান্ট নিয়ে এসেছি। সম্প্রতি বাজারে আসা রেডমি নোট ৯ প্রো এবং রেডমি নোট ৯এস মডেলের ট্রিপল কর্নিং গরিলা গ্লাস ৫ দেয়া হয়েছে। সামনে রেয়ার এবং পিছনের রেয়ার ক্যামেরা লেন্স এবং রেডমি নোট ৯এস এর ডিসপ্লের সুরক্ষার জন্যও কর্নিং গরিলা গ্লাস ৫ ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও রেডমি ৯ সিরিজটির সুরক্ষার জন্য দেয়া হয়েছে পি২আই, স্প্ল্যাশ প্রুফ ন্যানো-কর্টিং প্রযুক্তি। এগুলো ফোনগুলোকে যেকোনো দুর্ঘটনাজনিত ক্ষত থেকে রক্ষা করবে; দুর্ঘটনায় পড়ে ফোনের কোণাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত যেন না হয় সে ব্যবস্থা রয়েছে।
মানুষের চাহিদার দিকে মনোযোগ দিয়ে আমরা দেশের বাজারে ৫০২০ এমএএইচ এর শক্তিশালী ব্যাটারি দিয়ে প্রথম রেডমি নোট ৯ স্মার্টফোন এনেছি। শাওমি এরই মধ্যে অডিও ক্যাটেগরিতে স্বল্পমূল্যে বেশ কিছু পণ্য এনেছে, এর মধ্যে মি ট্রু ইয়ারবাডস, মি পকেট স্পিকার ২, মাইকসহ মি ইন এয়ার হেডফোন এবং মি ইয়ারফোন বেসিক।
ক.বি. বাংলাদেশে শাওমির কারখানা স্থাপনের কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
জিয়াউদ্দিন চৌধুরী: এই মুহূর্তে শাওমির পণ্যের চাহিদা রয়েছে। আমরা সেই চাহিদা আমাদের সাপ্লাই চেইনের মাধ্যমে আমদানি করে মেটাতে সক্ষম হচ্ছি। আমরা এখন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। যদি দেখি এই চাহিদা দিন দিন অনেক বাড়ছে এবং সেটা কুলিয়ে উঠতে পারছি না তখন আমরা দেশে কারখানা স্থাপন করে উৎপাদন বা সংযোজনের সুবিধা চালু করতে পারি।
ক.বি. বাংলাদেশে শাওমি কোন ধরনের গ্রাহককে টার্গেট করে ডিভাইস আনছে?
জিয়াউদ্দিন চৌধুরী: শাওমি তরুণদের ব্র্যান্ড এবং তারুণ্যকে উপজীব্য করেই এগিয়ে চলা আমাদের ব্র্যান্ডের প্রাথমিক টার্গেট অডিয়েন্স তরুণরা। গত দুই বছরে আমরা ব্যবহারকারী ও টার্গেট অডিয়েন্সের জন্য অনেক পণ্য এনেছি। আমরা বাংলাদেশের মানুষের জন্য বিভিন্ন রেঞ্জের স্মার্টফোনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি। আমাদের মূল লক্ষ্য প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে নতুন সব পণ্য আনা যার ক্রেতা হবে সব শ্রেণীর। এটা কি বাজেট ফোন কিংবা ফ্ল্যাগশিপ, আপনি যে কোনো রেঞ্জের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ফিচারের শাওমি ফোন বাজারে পাবেন। প্রিমিয়াম সেগমেন্টের লক্ষ্য অত্যাধুনিক সব উদ্ভাবন নিয়ে আসা, যেখানে স্বল্প মূল্যে থাকছে টপ সব ফিচার। আমরা এমনভাবে ডিভাইস তৈরি করি যা সময়ের তুলনায় খুব এগিয়ে থাকে। প্রিমিয়াম ডিভাইসগুলোও এর ব্যতিক্রম নয়। বিভিন্ন খাতের এখন অনলাইনে রূপান্তর যেমন শিক্ষা, ফিন্যান্স, আইন, ফার্মা থেকে শুরু করে অন্যগুলো যার সবই এখন স্মার্টফোনের ব্যবহারে করা হচ্ছে। এখানে বয়সের কোনো ভেদাভেদ দেখতে পাবেন না। বিনোদন থেকে শুরু করে প্রতিদিনের কাজকর্ম, যা এখনকার সময়ে আমাদের জীবনের একেবারে অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে সবই এর মাধ্যমে হচ্ছে। আমরা ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতাকে ভালো করতে পেরে সত্যিই গর্বিত। আমরা সামনের দিনেও তাদের আরও উন্নত ও উদ্ভাবনী পণ্য দিতে চাই।
আমাদের মূল লক্ষ্য প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে নতুন সব পণ্য আনা যার ক্রেতা হবে সব শ্রেণীর
ক.বি. অবৈধ মোবাইল আমদানি রোধে শাওমি কি ভূমিকা পালন করছে করছে?
জিয়াউদ্দিন চৌধুরী: দেশের একটি জাতীয় দৈনিকের হিসাবে অনুযায়ী, দেশে প্রতি বছর অন্তত ২৫ লাখ অবৈধ হ্যান্ডসেট আনা হয়। যা টাকার অংকে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি। কিন্তু এসব পণ্যের মান অনেক খারাপ, এমনকি এটি খুব দ্রুত নষ্ট হয় এবং ব্যবহারকারীকে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলে দেয়। এমনকি তাদের কোনো ধরনের বিক্রয়োত্তর সেবা দেয়ার ব্যবস্থা থাকে না। ফলে এর যারা ব্যবহারকারী তারা কেনার পর ফোনের কোনো সমস্যা দেখা দিলে সেবা পান না। এতে শেষ পর্যন্ত ব্র্যান্ডগুলোর বদনাম হয়।
এই অবস্থায় আমরা শাওমি থেকে চেষ্টা করি গ্রাহকদের ব্র্যান্ড সম্পর্কে সঠিক বার্তা পৌঁছে দিতে, ক্রেতাদের বুঝাতে, তারা যেন অফিসিয়াল বা অথোরাইজড শপ থেকে পণ্য কেনেন। একটি ব্র্যান্ড হিসেবে আমরা সবসময় চেষ্টা করছি আমাদের চ্যানেলগুলোতে, বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সচেতনতামূলক কাজ করতে। নামি ব্র্যান্ড হিসেবে আমরা গ্রাহকদের কেনা পণ্যটি সঠিক বা বৈধ নাকি অবৈধ সেটা ট্র্যাক বা যাচাই করার কাজটিও শুরু করেছি।
২৬৯৬৯ নম্বরে ইএমইআই নম্বরটি লিখে একটি এসএমএস দিয়ে ক্রেতারা জানতে পারবেন তার কেনা পণ্যটি আসল নাকি অবৈধ
২৬৯৬৯ নম্বরে ইএমইআই নম্বরটি লিখে একটি এসএমএস দিয়ে ক্রেতারা জানতে পারবেন তার কেনা পণ্যটি আসল নাকি অবৈধ। আমরা গ্রাহকদের অনুরোধ করি অথোরাইজড পণ্য কেনার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে। কেননা ব্র্যান্ড এবং গ্রাহক মিলেই একটা সুন্দর ইকো সিস্টেম তৈরি করা সম্ভব।