ঢাকার বায়ুর মান মারাত্মকভাবে কমছে: করণীয় কী?
নতুন বছরের প্রথম দিনেই ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোর ঠেকেছে ৩০০ -তে। বায়ু দূষণের সর্বোচ্চ মাত্রা নিয়ে এদিন বিশ্বের ১০৯টি শহরের মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করেছিল ঢাকা। এমন দুর্যোগপূর্ণ স্কোর এ শহরের বায়ুর মানে একটি মারাত্মক পতনের ইঙ্গিত। শুধু তাই নয়, গোটা ২০২৩ জুড়ে ঢাকাবাসী মাত্র আট দিন ‘ভালো’ মানের বায়ু উপভোগ করতে পেরেছেন, যা ২০১৬ থেকে ২০২৩ এর মধ্যে ছিল মাত্র ৪৭ দিন। এই আট বছরে বাতাসের মান ‘বিপজ্জনক’ ছিল ৫৫ দিন, ‘অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর’ ছিল ৫৪১ দিন এবং ‘সংবেদনশীল মানুষদের জন্য অস্বাস্থ্যকর’ ছিল ৭৭৮ দিন।
ঢাকায় বায়ুমানের এমন বিপজ্জনক অবনতি রুখতে দ্রুত প্রয়োজন পদক্ষেপ গ্রহণ। ঢাকার মোড়ে মোড়ে চলছে বিভিন্ন পর্যায়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ; ফলে বাতাসের সঙ্গে বিপুল পরিমাণে ধুলাবালি মিশে যাচ্ছে।
ফ্রন্টিয়ার্স ফর সাসটেইনেবল সিটিজ’র সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে যে ২০০৩ থেকে ২০১৯ এর মাঝে ঢাকায় পিএম১০ ( বাতাসে ভেসে বেড়ানো পদার্থ, যেমন ধুলা) ও পিএম২.৫ (অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ডের চেয়ে ছয় ও নয় গুন বেশি। গত ১০ জানুয়ারি তে ঢাকার বাতাসে পিএম ২.৫ এর মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদণ্ডের চেয়ে ৩৩ গুণের বেশি ছিল।
ঢাকার বায়ুমণ্ডলে এমন বিপজ্জনক মিশ্রণ যোগ করার পেছনে প্রধানত দায়ী যানবাহনের কালো ধোঁয়া, ইটভাটা ও শিল্প কারখানা থেকে নিষ্কাশিত দূষিত গ্যাস ও কেমিক্যাল ও অনুপযুক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। এর ফল? রাজধানীবাসীর মধ্যে শ্বাসতন্ত্র ও হৃদরোগে আক্রান্তের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা, যেখানে সবচাইতে বেশি ভুগছে শিশু ও প্রবীণসহ স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে থাকা মানুষেরা – শ্বাস নেয়া হয়ে উঠছে কষ্টকর। তাই, জনস্বাস্থ্যের কল্যাণ নিশ্চিতে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গাছ-গাছালির সমন্বয়ে প্রাকৃতিক বায়ু পরিশোধক হিসেবে কাজ করে এমন ‘গ্রিন স্পেস’ নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি, এক্ষেত্রে জনগনকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে ঢাকার বায়ুদূষণের অবস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করা সম্ভব। খোলামেলা বর্জ্য পোড়ানো এবং অতিরিক্ত ল্যান্ডফিল আবর্জনার ক্ষতিকারক পরিণতি হ্রাস করার ক্ষেত্রে, রিসাইকেল প্রোগ্রাম ও ‘বর্জ্য থেকে শক্তি’ প্রকল্পগুলোর মত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
তা ছাড়া, বৈদ্যুতিক যানবাহন অথবা বায়ু পরিশোধন প্রযুক্তি স্থাপনের মত প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন বায়ুদূষণের বিরুদ্ধে হতে পারে বেশ কার্যকর। পাশাপাশি, ঘরের ভেতরে এয়ার পিউরিফায়ারের ব্যবহার নিরাপদ শ্বাস-প্রশ্বাস নিশ্চিত করে ঢাকাবাসীদের বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষা করবে। শহুরে ব্যস্ত জীবনে আমরা আমাদের বেশিরভাগ সময় অফিস অথবা বাসার ভেতর কাটিয়ে দেই।
ফলে এই সময়টুকু দূষণমুক্ত শ্বাস নিতে পারাটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ, যা এমন অত্যাধুনিক এয়ার পিউরিফায়ারের মাধ্যমে সম্ভব। ইদানিং বাজারে এমন অনেক এয়ার পিউরিফায়ার পাওয়া যাচ্ছে, যা ক্ষতিকারক দূষক অপসারণের পাশাপাশি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর কণা সনাক্ত করে বাতাস পরিষ্কার রাখে। বিভিন্ন কভারেজ ও স্মার্ট ডিটেকশন ফিচারে সমৃদ্ধ এয়ার পিউরিফায়ার ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে গ্লোবাল ইলেক্ট্রনিকস জায়ান্ট স্যামসাং অন্যতম।
সম্প্রতিকালের ড্রোন শটস অথবা উচু ভবন থেকে তোলা ছবিগুলো দেখলেই মনে হয় কুয়াশার মত একটি আস্তরণ এ শহরকে আবরণে ঢেকে রেখেছে, যাকে বলা হয় ‘স্মগ।’এমনকি, এই ধোঁয়াশার কারণে সামান্য দূরের জিনিসও স্পষ্টভাবে দেখতে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। ঢাকার বায়ুমানের এমন আশঙ্কাজনক হ্রাস মোকাবিলায় যথেষ্ট মনোযোগসহ একটি সম্মিলিত উদ্যোগ নেয়া অত্যন্ত জরুরি।
এই দূষণের কারণগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করে, পদক্ষেপ গ্রহণে সবাইকে দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। এর পাশাপাশি, বিশ্বের অন্যান্য সফল মডেলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে সৃজনশীল সমাধান বের করতে হবে। ঢাকার বায়ুর গুণমান পুনরুদ্ধার করে রাজধানীর নাগরিকদের জন্য একটি টেকসই ভবিষ্যত নিশ্চিত করার সময় এখনই।