ডিসেম্বরের মধ্যেই টেলিটকের মাধ্যমে ৫জি চালু হবে: মোস্তাফা জব্বার
ক.বি.ডেস্ক: ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো থেকে কোনভাবেই পিছিয়ে থাকবে না। ২০১৮ সালে বিশ্ব যখন ৫জি প্রযুক্তি নিয়ে ভাবছে বাংলাদেশ একই বছর এই প্রযুক্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। ৫জি প্রযুক্তি চালুর প্রক্রিয়া সরকারের একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা। ১২ বা ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যেই টেলিটকের মাধ্যমে ৫জি প্রযুক্তি চালু হবে। পরবর্তীতে তা বিস্তৃত হবে। ২০২২ সালের মধ্যে অন্য অপারেটরদেরও ৫জি নিয়ে আসতে দেখবো বলে জানান ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
গতকাল শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় টেলিকম সাংবাদিকদের সংগঠন টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত ৫জি প্রযুক্তির সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে ‘‘৫জি: ইকোসিস্টেম ইন বাংলাদেশ অ্যান্ড আপকামিং টেকনোলজিস’’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার ও সম্মানিত অতিথি ছিলেন বিটিআরসি’র কমিশনার ও ৫জি নীতিমালা প্রণয়ণ ও বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি এ কে এম শহীদুজ্জামান।
গ্রামীণফোনের সিইও ইয়াসির আজমান, রবি’র ভারপ্রাপ্ত সিইও এম রিয়াজ রশিদ, এমটব’র চেয়ারম্যান এরিক আস, টেলিটক’র এমডি মো. শাহাব উদ্দিন, হুয়াওয়ে বাংলাদেশের সিটিও কলিন শি ও সিওও তাওগোয়ানজিও এবং এলএম এরিকসন (বাংলাদেশ)-এর কান্ট্রি ম্যানেজার আবদুস সালাম বক্তব্য প্রদান করেন। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন টিআরএনবি সভাপতি রাশেদ মেহেদী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টিআরএনবি সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার দে।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, গত তিন বছরে ৫জি প্রযুক্তির নীতিমালা প্রণয়ন ও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যান্য প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বহুপাক্ষিক আলোচনা ও বিচার বিশ্লেষণ করেই ৫জি যুগে আমরা প্রবেশের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছি। আগামী ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ৫জি প্রযুক্তি যুগে প্রবেশ করবে। ৫জি প্রযুক্তি হচ্ছে একটি শিল্প পণ্য। আগামী দিনের প্রযুক্তি এআই, রোবটিক্স, আইওটি, বিগডাটা কিংবা ব্লকচেনের যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান কিংবা মতস্য ও কৃষির জন্য ৫জি অপরিহার্য। এমনকি শিল্প কারখানায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও ৫জি ছাড়া বিনিয়োগ করবে না। এই লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে দেশের পাঁচটি অর্থনৈতিক জোনে ৫জি সংযোগ প্রদানের জন্য বিটিসিএল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ।
তিনি আরও বলেন, দেশে এখন ৫জি মোবাইল সেট উতপাদিত হচ্ছে। দেশের মোট চাহিদার শতকরা ৯০ভাগ স্মার্টফোন বাংলাদেশ উতপাদনে সক্ষম। যে শিল্পোন্নত দেশগুলো ৫জি, নতুন প্রযুক্তি বা ৪র্থ শিল্পবিপ্লব যেভাবে বাস্তবায়ন করবে আমরা সেটি হুবহু নকল করবো না। আমরা আমাদের মতো করে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করবো। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তি হবে ৫জি। আমরা এরই মধ্যে হুয়াওয়ে ও রবির মাধ্যমে ৫জি টেষ্ট করেছি, যা আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। এর মাধ্যমেই আমরা বোঝাতে পেরেছি ৫জি প্রযুক্তি নিয়ে আমরা একচুলও পিছিয়ে থাকবো না। এই প্রযুক্তি সম্পর্কে জনগণকে উদ্বুদ্ধ ও সম্পৃক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, এ বছরের মধ্যেই ঢাকা শহরে ৫জি চালুর বিষয়টি চুড়ান্ত পর্যায়ে আছে। এ লক্ষ্যে রাষ্ট্রায়ত্ব মোবাইল অপারেটর টেলিটক প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে। ব্রডব্যান্ড নীতিমালা তৈরির কাজ চলমান আছে। এর আগেই আমরা সব স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বসবো এবং তাদের মতামত নেওয়া হবে।
এ কে এম শহিদুজ্জামান বলেন, ৫জি ইস্যুতে বিটিআরসি এরই মধ্যে অপারেটর, টেলিকম খাত সংশ্লিষ্ট এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে।
এম রিয়াজ রশিদ বলেন, ৫জি হতে চলেছে পরবর্তী টেলিকম সেবার মান নির্ধারক। এক্ষেত্রে শুধু বিটিআরসি কিংবা অপারেটরগুলো এককভাবে সুফল বয়ে আনতে পারবে না। সকলের সমন্বিত চেষ্টার প্রয়োজন আছে। কারণ ৫জির সুফল পেতে প্রযুক্তি, স্পেকট্রামের পাশাপাশি অবকাঠামো উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইয়াসির আজমান বলেন, ৫জির সুফল পেতে প্রযুক্তি, ডিভাইস, ফাইবার, টাওয়ার অবকাঠামো ও স্পেকট্রাম একে অপরের পরিপূরক। ৫জি নিশ্চিতে কতটা সুলভে স্পেকট্রাম বরাদ্দ করা সম্ভব হবে, সে বিষয়টিও মাথায় রাখতে।
এরিক অস বলেন, ৫জি প্রযুক্তিকে প্রয়োগের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা প্রয়োজন। তাই, ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখে স্পেকট্রাম নীতি সঠিকভাবে পর্যালোচনা করতে হবে।
মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, আমরা এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ৫জি চালু করতে চেষ্টা করছি। দেশে ৫জি নিশ্চিতের জন্য আমাদের ডিভাইস ও হ্যান্ডসেটের সক্ষমতা এবং উচ্চমানের ফাইবার প্রয়োজন। এ ছাড়াও, ৪জির তুলনায় ৫জির স্পেকট্রাম সক্ষমতার হার বেশি। যেখানেই ৫জি সংযোগের প্রয়োজন হবে, আমরা সেখানে পৌঁছে যাব এবং স্মুথ নেটওয়ার্ক স্থাপন করব।
তাওগোয়ানজিও বলেন, ৪জি জীবন বদলে দিয়েছে, ৫জি সমাজ বদলে দিবে। ৪জি ও এর আগের নেটওয়ার্কগুলো যা করতে পারেনি, ৫ জি সেগুলো করার ক্ষমতা রাখে।
আবদুস সালাম বলেন, ৫জির জন্য মূলত ১৮শ থেকে ২১শ ফ্রিকোয়েন্সি প্রয়োজন। আমাদের ডাইন্যামিক স্পেকট্রাম শেয়ারিংয়ের জন্য যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। আমরা বিআরটিসির লাইসেন্সের জন্য অপেক্ষা করছি এবং ৫জি সংযোগের জন্য প্রয়োজনীয় সকল নেটওয়ার্ক ও প্রযুক্তি বাস্তবায়নে উন্মুখ হয়ে রয়েছি।
সমীর কুমার দে বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে প্রতিটি অ্যাপ্লিকেশন ৫জির (ওয়্যারলেস রোবট, গাড়ি, পরিবহন ও স্মার্ট ম্যানুফ্যাকচারিং) ওপর নির্ভরশীল থাকবে। আমাদের জীবনযাত্রা ৫জি কেন্দ্রিক হয়ে উঠবে। তাই, ব্যবহারকারীদের সেরা অভিজ্ঞতা দিতে ও সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশের আইসিটি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
রাশেদ মেহেদী বলেন, বিটিআরসি বাংলাদেশে ৫জি নেটওয়ার্কের জন্য একটি নির্দেশিকা তৈরি করছে। আশা করছি যে, আমরা এই বছরের মধ্যে ৫জি নেটওয়ার্ক চালু করতে পারব।
অনুষ্ঠানে সরকারের নিকট টেলিকম অপারেটরদের চ্যালেঞ্জগুলোকে বিবেচনায় রেখে বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও ৫জি প্রযুক্তি গ্রহণকে ত্বরান্বিত করতে একটি শিল্প-বান্ধব নীতি কাঠামো তৈরির আহ্বান জানানো হয়।