ডিজিটাল সুস্থতায় কাজ করছে টিকটক
ক.বি.ডেস্ক: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি মূল অংশ হয়ে ওঠেছে। একে অপরের সঙ্গে যুক্ত থাকতে কিংবা কোন তথ্য জানার জন্য শক্তিশালী মাধ্যমে পরিণত হয়েছে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। একইসঙ্গে এই প্ল্যাটফর্মগুলোর সম্ভাব্য ক্ষতিকারক দিকগুলোও সামনে আসছে। যার মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ডিজিটাল মাধ্যমের প্রভাব বর্তমানে একটি উদ্বেগের বিষয়।
দীর্ঘ সময় ধরে কোন ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার, বা স্ক্রিন টাইম মানসিক সুস্থতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তাই টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো এখন কেবল বিনোদন নয়, ডিজিটাল সুস্থতার বিষয়েও দায়িত্বশীল হয়ে ওঠছে। মানসিক স্বাস্থ্য দিবসে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ভূমিকাগুলো বর্তমান সময়ের জন্য তাই উল্লেখযোগ্য।
গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহার কখনও কখনও দুশ্চিন্তা, ডিপ্রেশন এবং দুর্বল মানসিকতা তৈরির অন্যতম কারণ হতে পারে, বিশেষ করে কম বয়সীদের মধ্যে এটি লক্ষণীয়। যদি আনুমানিক চারজন তরুণের মধ্যে একজন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্যের জন্য টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে, তাহলে বলা যায়, মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভূমিকা কম নয়।
প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করার সময়সীমা নির্ধারণ করার সুবিধা দিতে টিকটক অ্যাপ বেশ কয়েকটি ডিজিটাল ওয়েল-বিয়িং ফিচার নিয়ে এসেছে। টিকটকের ‘সেফটি সেন্টার’ এর মধ্যে অন্যতম, যেখানে রয়েছে একটি ওয়েল-বিয়িং গাইড। এতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ইউজারদের মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে ডিজিটাল কনটেন্ট সম্পর্কে টিপস দেয়া হয়েছে।
১৮ বছরের কম বয়সী ব্যবহারকারীদের জন্য, টিকটকে ডিফল্ট ফর্মে প্রতিদিনের স্ক্রিন টাইম ৬০ মিনিটে সীমিত করার সুবিধা আছে। এমনকি তাদের অভিভাবকরাও এই ফিচারটি সেট করে দিতে পারবে। প্রাপ্তবয়স্ক ব্যবহারকারিরাও তাদের সুবিধা অনুযায়ী টিকটকে স্ক্রিন টাইম নির্ধারণ করতে পারে।
স্ক্রিন টাইম ড্যাশবোর্ডে অ্যাপ ব্যবহারের বিশদ বিবরণ দেয়া থাকে। প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীরা প্রতিদিন কত সময় অ্যাপটি ব্যবহার করছে এবং সারাদিনে কখন তারা সবচেয়ে বেশি অ্যাপটিতে অ্যাক্টিভ থাকছে সেটি সম্পর্কে এখানে তথ্য পাওয়া যায়। এভাবে এই টুলটির মাধ্যমে প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীরা আত্মসচেতনতা এবং ডিজিটাল অভ্যাস গড়ার সুযোগ পাচ্ছে।
‘স্ক্রিন টাইম ব্রেক’ ফিচার হলো যা ব্যবহারকারীদের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিরতি নেয়ার কথা মনে করিয়ে দেয়। ‘রেসট্রিক্টেড মোড’ ফিচার বয়স অনুযায়ী উপযুক্ত কনটেন্টে অ্যাক্সেস নিশ্চিত করে। এর মাধ্যমে ইউজারের বয়সের ওপর ভিত্তি করে কনটেন্ট ফিল্টার হয়। ‘ফ্যামিলি পেয়ারিং’ ফিচারের মাধ্যমে, অভিভাবকরাও তাদের অ্যাকাউন্ট সন্তানদের অ্যাকাউন্টের সঙ্গে লিঙ্ক করতে পারবেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা ভাবে ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। সম্প্রতি এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিইউএইচও) সঙ্গে টিকটক যৌথভাবে কাজ করে। যেখানে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য প্রচারের লক্ষ্যে প্রফেশনাল এবং কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের নিয়ে গঠন করা হয় ফিডস নেটওয়ার্ক।
২০২৩ সালে, সেলেনা গমেজের রেয়ার ইমপ্যাক্ট ফান্ডের সঙ্গে টিকটক কাজ করে যেখানে ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার ছিল মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য। এই যৌথ উদ্যোগটি টিকটকের #MentalHealthAwareness: Better Together ক্যাম্পেইনের অংশ ছিল, যেটি প্ল্যাটফর্ম ইউজারদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা সম্পর্কে তথ্য আদান-প্রদানে উৎসাহিত করে।
এ ছাড়া, বাংলাদেশেও গত বছর টিকটকে জুবায়ের, নানজিবা এবং সাইফ সারোয়ারের মতো কনটেন্ট ক্রিয়েটরের পাশাপাশি ব্র্যাক এবং দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ইউনিসেফ এর মতো বিশেষ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কাজ করেছে। মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব তুলে ধরতে এবং মানসিক সুস্থতা বৃদ্ধির জন্য টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো এখন কাজ করছে। ডিজিটাল সুস্থতার জন্য টুলস এবং যৌথ উদ্যোগগুলো সেটিরই দৃষ্টান্ত।