সাম্প্রতিক সংবাদ

টেলিকমে পুরনো লাইসেন্স পলিসিতে ফিরে যাবার সুযোগ নাই: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব

ক.বি.ডেস্ক: অকার্যকর, টেলিযোগাযোগ সেবাখাত বিকাশের অন্তরায়, আওয়ামী মাফিয়াতান্ত্রিক লাইসেন্স রেজিমকে স্ক্র্যাপ করতে নতুন টেলিকম লাইসেন্স বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ‘টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক অ্যান্ড লাইসেন্সিং ২০২৫’ পলিসি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে। এর মাধ্যমে আওয়ামীলীগের দেয়া বৈধ ও অবৈধ তিন হাজারের বেশি লাইসেন্সকে রিভিউয়ের আওতায় আনা যাবে। নতুন লাইসেন্সগুলোর ফি-চার্জ, রেভেনিউ শেয়ারিংয়ের যে গাইডলাইনটি প্রকাশিত হয়েছে সেটি ড্রাফট, এটি অংশীজন ও অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে আরও আলাপ আলোচনা করেই চূড়ান্ত করা হবে। নতুন লাইসেন্স পলিসিতে ইন্টারনেটের মূল্য বাড়ে এমন কোন পদক্ষেপ নেয়া হবে না।

আজ রবিবার (২২ নভেম্বর) ‘টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক অ্যান্ড লাইসেন্সিং ২০২৫’ পলিসি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এ কথা জানান।

বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, “পুরনো লাইসেন্স অ্যাকসেস টু ইন্টারনেট, এক্সেস টি ডিভাইস এবং এক্সেস টু ফাইবার- এই তিনের কোনোটাই নিশ্চিত করতে পারেনি। বাংলাদেশের ঘরে ঘরে, ব্যাবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে ফাইবার পৌঁছেনি, মোবাইল টাওয়ারে ফাইবার সেভাবে পৌঁছেনি। পুরনো লাইসেন্স পলিসিতে টেলিযোগাযোগ এখনও কানেকশনে থেকে গেছে, এই ইন্ডাস্ট্রিকে কানেকশন থেকে ডিজিটাল সার্ভিস বেইজে রুপান্তর করতে হবে। এখনও টেলিকমের প্রডাক্ট মোবাইল ফোনের বান্ডেল এবং আইএসপির প্যাকেজ নির্ভর। কিন্তু এখানে এডটেক, হেলথটেক, এগ্রিটেক, ফিনটেক, লজিস্টিক্স টেক সহ অপরাপর স্টার্টাপ ভিত্তিক ডিজিটাল সেবা পণ্য আসেনি।”

নতুন পলিসিতে পুরনো বিনিয়োগকারীদের নতুন লাইসেন্স দেয়ার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, “আইএসপি কিংবা মোবাইল ইন্টারনেট, এনটিটিএন কিংবা আইআইজি কোথাও কোয়ালিটি অফ সার্ভিস ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা এবং ডিজিটাল সেবার সূচনা হয়নি। বাংলাদেশে এখনও সিকিউর ইন্টারনেটের ধারণা আসেনি। অধিকাংশ আইএসপি এবং মোবাইল ফোন অপারেটরের ইন্টারনেট সেবা অনিরাপদ। ডিজিটাল ইকোনোমির ভিত্তি সম্প্রসারিত করতে ২৬ প্রকারের লাইসেন্স ব্যবস্থা বন্ধ করে সহজ ও কনভার্জ লাইসেন্সের বিকল্প নাই। দেশীয় বাস্তবতা এবং মনোপলি মাথায় রেখে নতুন টেলিকম লাইসেন্সে আমরা সবাইকে সব কিছু করার কনভার্জেন্সে যাইনি। তথাপি ৪ স্তরের লাইসেন্স এই খাতে প্রতিযোগিতা বাড়াবে এবং প্রতিটি স্তরের অপারেটিং স্কোপ বাড়বে।”

নতুন পলিসির মাধ্যমে লাইসেন্সিংয়ের ক্ষেত্রে স্তরায়ন কমিয়ে আনা হবে যাতে মধ্যস্বত্বভোগী কমবে এবং প্রতিযোগিতামূলক সেবা নিশ্চিত হবে

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, “নতুন পলিসির মাধ্যমে লাইসেন্সিংয়ের ক্ষেত্রে স্তরায়ন কমিয়ে আনা হবে যাতে মধ্যস্বত্বভোগী কমবে এবং প্রতিযোগিতামূলক সেবা নিশ্চিত হবে। এতে সরকারের রাজস্ব না কমিয়েও গ্রাহকদেরকে সুলভ মূল্যে সেবা দেয়া সম্ভব হবে। আগের লাইসেন্স পলিসিতে মাত্র কয়েক কোটি বিনিয়োগ করে টোল কালেক্ট করার সুযোগ রাখা ছিল, ফলে বেশ কিছু কোম্পানি রেন্ট-সিক করেছে, যেখানে ৯০ শতাংশ রেভিনিউ শেয়ারিং করলেও তাদের কোন লস হতো না, সেখানে ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ রেভেনিউ শেয়ারিং করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। এসব মধ্যস্বত্বভোগী লাইসেন্স বাদ দেয়া হয়েছে নতুন লাইসেন্সিং পলিসিতে।”

ডিজিটাল ইকোনোমির ভিত্তি সম্প্রসারিত করতে ২৬ প্রকারের লাইসেন্স ব্যবস্থা বন্ধ করে সহজ ও কনভার্জ লাইসেন্সের বিকল্প নাই

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব আরও জানান, “নতুন পলিসিতে পুরনো বিনিয়োগকারীদের নতুন লাইসেন্স দেয়ার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। একদিকে আইজিডব্লিউ ও আইসিএক্স-এর মতো লাইসেন্সগুলোর আবেদন ফুরিয়ে গেছে। নতুন পলিসিতে এনটিটিএনদের ৩৫ শতাংশ, আইসিএসপিদের ৫১ শতাংশ এবং এমএনওদের ১৫ শতাংশ শেয়ার জেভি বা শেয়ার আকারে বা অন্য কোনোভাবে দেশীয়দের অনুকূলে ছাড়তে হচ্ছে। পাশাপাশি দেশীয়রা চাইলেই ১০০ শতাংশ মালিকানা রাখতে পারবেন। এই বাইরেও প্রাইভেট ফাইভজি, এমভিএনও ব্যাবসা উন্মুক্ত করা হয়েছে। দেশীয় উদ্যোক্তারা চাইলে এই দুই খাতে নতুন বিনিয়োগ করতে পারবেন। নতুন পলিসিতে টেকনোলোজি ব্লক রাখা হয়নি। তাই ভুল জায়গায় বিনিয়োগ না করে, নতুন ধারার টেলিকমিউনিকেশন প্রযুক্তিতে এবং নতুর ধারার সেবা খাতে বিনিয়োগের আহবান জানাই।”

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *