চারটি ধারা অজামিনযোগ্য, খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা
ক.বি.ডেস্ক: প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইন এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রস্তাবিত আইনের চারটি ধারা ১৭, ২৯, ২৩ ও ৩৩ অজামিনযোগ্য। বাকী সব ধারাগুলোই জামিনযোগ্য করা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনের যে খসড়াটি ছিল, সেটিকে নমনীয় করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হওয়া চলমান মামলাগুলোর বিচার কাজ ডিজিটাল আইনেই চলবে। নীতিগত অনুমোদনের সময় যে খসড়াটি ছিল সেখানে দু-একটি সংজ্ঞাসহ সামান্য কিছু পরিমার্জন করে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
গতকাল সোমবার (২৮ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩’র চূড়ান্ত এই অনুমোদন দেয়া হয়। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলন করে মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, বৈঠকে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩’র খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনের চারটি ধারা ১৭, ২৯, ২৩ ও ৩৩ অজামিনযোগ্য। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে বেআইনি প্রবেশ (ধারা-১৭), কম্পিউটার ও কম্পিউটার সিস্টেমে ইত্যাদির ক্ষতিসাধন (ধারা-১৯), সাইবার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংগঠনের অপরাধ (ধারা-২৭) এবং হ্যাকিং সংক্রান্ত অপরাধ (ধারা-৩৩)- এ ধারাগুলো অজামিনযোগ্য রাখা হয়েছে। বাকী সব ধারাগুলোই জামিনযোগ্য করা হয়েছে।
মো. মাহবুব হোসেন বলেন, প্রস্তাবিত আইনের যে খসড়াটি ছিল, সেটিকে নমনীয় করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হওয়া চলমান মামলাগুলোর বিচার কাজ ডিজিটাল আইনেই চলবে। আইনের রহিতকরণ একটা ধারা থাকে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮’ এর অধীনে অনিষ্পন্ন মামলা সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালে এবং অনুরূপ মামলায় প্রদত্ত আদেশ, রায় বা শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল সংশ্লিষ্ট আপিল ট্রাইব্যুনালে এমনভাবে পরিচালিত ও নিষ্পত্তি হবে যেন ওই আইন রহিত হয়নি। ওই অংশটুকু আগের আইনেই চলবে, সেটিই বলা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, নতুন আইন কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত আগের আইনের যেসব কার্যক্রম ছিল ওই আইনে সেগুলো নিষ্পন্ন হবে। বাংলাদেশের বাইরে বা ভেতর থেকে কেউ যখন কোনো কিছু করে, কোন কাজটা করলে অপরাধ হবে সেখানে ‘ডিজিটাল ডিভাইস’ শব্দটা বসানো হয়েছে। একটা ধারায় ছিল ‘জাতির পিতা’ সেটা বাদ দিয়ে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ করা হয়েছে। এটা মেজর কিছু না, স্পষ্টিকরণ করা হয়েছে। তবে নতুন আইনে জরিমানার ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আসেনি বলেও জানান তিনি।
সাইবার নিরাপত্তা আইনের নীতিগত অনুমোদনের সময় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছিলেন, অনেকগুলো ধারা যেগুলো আগে অজামিনযোগ্য ছিল, সেগুলোকে সাইবার সিকিউরিটি আইনে জামিনযোগ্য করা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শাস্তিও কমানো হয়েছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অনেকগুলো ধারা, যেমন- মানহানির যে ধারাটা ছিল, সেই ধারায় আগে শাস্তি ছিল কারাদণ্ড। কারাদণ্ডের জায়গায় এখন জরিমানার বিধান করা হয়েছে। অর্থাৎ মানহানির একমাত্র সাজা জরিমানা। এখন জরিমানা যদি না দেয়া হয়, তাহলে কারাদণ্ড থাকবে। সেটাও জরিমানার ওপর ভিত্তি করে তিন মাস বা ছয় মাসের কারাদণ্ড থাকবে। কিন্তু মূল শাস্তি হচ্ছে জরিমানা। জরিমানা আগে সর্বোচ্চ ছিল ৫ লাখ টাকা, এখন তা বাড়িয়ে ২৫ লাখ টাকা করা হয়েছে।
এর আগে বিতর্কিত ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নাম পরিবর্তন করে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩’ করার উদ্যোগ নেয় সরকার। এজন্য গত ৭ আগস্ট সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।
২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করে সরকার। এরপর আইনটির অপব্যবহার হচ্ছে অভিযোগ করে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে সেটি বাতিলের দাবি ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন করা হচ্ছে। সে মোতাবেক কিছু ধারায় সংশোধনী এনে এবং নাম পরিবর্তন করে নতুন আইনটি করা হচ্ছে।