ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় সামগ্রিক ক্ষতির পরিপ্রেক্ষিতে ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের দাবি
কোটা সংস্কার এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জুলাই ট্রাজেডি এবং ইন্টারনেট শাটডাউনের ফলে সামগ্রিকভাবে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর সদস্য এবং এই খাতের সাড়ে তিন লাখেরও বেশি উদ্যোক্তাদের জন্য করণীয় প্রসঙ্গে মতামত তুলে ধরেছেন কিনলে ডট কমের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক মৃধা…….
বর্তমান প্রেক্ষাপটে ই-কমার্স বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ই-ক্যাব’র ২৭০০ এর অধিক সদস্যসহ, সাড়ে তিন লাখেরও বেশি অনলাইন ব্যবসায়ীরা যে বিশাল অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন এবং তার যে প্রভাব এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৩৫ লাখ লোকের ওপর পড়বে।
এ থেকে সহসাই উত্তরণের ওপায় নেই যদি না বাণিজ্যিক সংগঠনগুলো সরকার, অংশীজন এবং বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিজেদের দাবিগুলো তুলে ধরতে সমর্থ হয়। ছোট উদ্যোক্তাগন আগামী দিনগুলোতে যে পরিমাণ খরচের ধাক্কায় পড়বে তাতে অনেকের জন্য টিকে থাকা কঠিন এবং ব্যবসা থেকে ছিটকে বেকার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি হবে।
ফেসবুক উদ্যোক্তা এবং ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় সরকারের তরফ থেকে বা ব্যাংক, অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আগামী এক বছরের জন্য বিশেষ সুবিধা দেয়া যেতে পারে। সম্ভাব্য প্রস্তাবনাগুলো:
ই-কমার্স খাতের উদ্যোক্তাদের স্বার্থে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ইন্টারনেটের নিশ্চিত করা। ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের জামানতবিহীন লোনের ব্যবস্থা করা। চলতি অর্থ বছরের ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক সমস্ত ভ্যাট ট্যাক্স মওকুফ করা।
আগামী এক বছরের জন্য জন্য ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের ব্যবসা সংক্রান্ত এবং ব্যক্তিগত সমস্ত লোনের ইন্টারেস্ট মওকুফ করা অথবা একেবারে নমিনাল পর্যায়ে নিয়ে আসা। লোনের কিস্তিগুলোকে শুধুমাত্র মূল টাকাগুলো নিয়ে লোনকে সচল রাখা। এটিকে আমরা ‘টুয়েলভ মানথ পেমেন্ট হলিডে’ হিসেবে আখ্যা দিতে পারি।
ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ভ্যাট ট্যাক্স মওকুফ করা। ফেসবুক বিজ্ঞাপনের জন্য প্রদত্ত ১৫% ভ্যাট সহ। ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সরাসরি আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থা করা। ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহৃত কার্ড, অনলাইন ট্রানজেকশন, এমএফএস এর ট্রানজেকশনগুলো আগামী ৬ থেকে এক বছর পর্যন্ত চার্জ মওকুফ করা।
চলতি বছরের ট্রেড লাইসেন্স রিনিউর ক্ষেত্রেও শুধুমাত্র রিনিউয়াল ফি নেয়া, উৎসে কর কর্তন বাদ দিয়ে। আন রেস্ট অবস্থায় যেহেতু বাংলাদেশের টোটাল ইন্টারনেট শাটডাউন ছিল এবং যে সমস্ত বিজ্ঞাপন ফেসবুকে রানিং অবস্থায় ছিল এবং যাদের টার্গেট গ্রুপ ছিল অনলি বাংলাদেশ তাদের কোন বিজ্ঞাপন টার্গেট গ্রুপে কাজ করেনি।
তাই ই-ক্যাব সদস্যসহ ই-কমার্স’র যারাই এই সময়ে বিজ্ঞাপনের টাকা খরচ করেছেন, সরকারের সহযোগিতার মাধ্যমে ফেসবুকের সঙ্গে আলোচনা করে সমপরিমাণ টাকার ক্রেডিট লিমিটের ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য কাজ করে যাওয়া। বাংলাদেশে আনুমানিক প্রায় দুই লাখ ডলারের সমপরিমাণ টাকা বিজ্ঞাপনে ব্যয় হয় একদিনে। প্রথম দিকে আট দিনে আনুমানিক ১৬ লাখ ডলারের ফেসবুক বিজ্ঞাপনে ব্যয় হয়েছে তাতে বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের কোন কাজই হয়নি।
ই-কমার্স ব্যবসায়ী হিসেবে আমরা এ বিষয়ে অগ্রণী এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারি এবং সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে দাবিগুলো করতে পারি তাহলে হয়তো ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তা কিছুটা হলেও উত্তরণের সুযোগ পাবেন। আমরা যদি উপরোক্ত বিষয়গুলো যথাযথ নীতি নির্ধারনী মহলে সম্মিলিতভাবে বিষয়টি তুলে ধরতে পারি তাহলে ই-কমার্স খাতের প্রত্যেকেই বিশাল ক্ষতির হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে পারবো বলে আশা করছি।
লেখক: মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক মৃধা- প্রতিষ্ঠাতা কিনলে ডট কম এবং প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ই-ক্যাব