আরও সাত বছর কর অব্যাহতির দাবী ৫টি আইসিটি সংগঠনের
ক.বি.ডেস্ক: ডিজিটাল বাংলাদেশ সফলভাবে বাস্তবায়নের পরে এখন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ এর পথে দেশ। আর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে আইসিটি খাত সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এমন বিবেচনায় আইসিটি খাতে কর অব্যহতির সময়সীমা বাড়ানো সময়ের সবচাইতে বড় দাবী। এই কর অব্যহতির সময়সীমা আরও সাত বছর বাড়ানোর দাবী আইসিটি খাতে কাজ করছেন এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ভীষণ জরুরী বলে মনে করছে দেশের ৫টি আইসিটি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
বর্তমানে চলমান আইসিটি খাতে কর অব্যাহতির মেয়াদ ৩০ জুন, ২০২৪-এ শেষ হয়ে যাবে। যার ফলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদি কোনো বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন না। আইসিটি খাতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি থমকে যেতে পারে এবং দেশীয় আইসিটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক ব্যয় অনেকাংশে বেড়ে গিয়ে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পরবে। সামগ্রিকভাবে সরকারঘোষিত অগ্রাধিকার খাত ও শিল্প হিসেবে বিবেচিত এই আইসিটি ব্যবসায় তরুণ উদ্যোক্তা ও পেশাজীবীদের এবং বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছর থেকে এ অব্যাহতির সময়সীমা বৃদ্ধির বিকল্প নেই।
আজ বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) কাওরানবাজার বেসিস মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে কর অব্যহতির সময়সীমা আরও সাত বছর তথা ২০৩১ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর দাবী উত্থাপন করেন দেশের আইসিটি খাতের ৫টি জাতীয় বাণিজ্য সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতি (বিসিএস), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) এবং ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশেন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর যৌথ উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলন অনিুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ, বিসিএস সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত সরকার, বাক্কো সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ, আইএসপিএবি সভাপতি মো. ইমদাদুল হক এবং ই-ক্যাব’র জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন মতামত তুলে ধরেন।
রাসেল টি আহমেদ বলেন, “আইসিটি খাতকে যদি করের আওতায় আনা হয়, সেটি মোট রাজস্ব আয়ের ১ শতাংশও হবে না। আইসিটি খাত সবে মাত্র দাঁড়াতে শুরু করেছে, সামনে আমাদের দৌড়ানোর সময়। এসময়ে শুধুমাত্র সরকারের এই অল্প আয়ের জন্য একটা সম্ভাবনাময় খাতকে হুমকির মুখে ফেলা ঠিক হবে না। আমরা কমপক্ষে ২০৩১ সাল পর্যন্ত আইসিটি খাতের ওপর কর অব্যাহতির দাবি করছি। এই খাতে কর অব্যাহতি মানে শুধু এটি না যে আইসিটি খাতের কয়েক হাজার প্রতিষ্ঠানের ওপর এই কর অব্যাহতি, এটি আসলে সমগ্র দেশের উন্নয়নে এবং স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।”
আইসিটি খাতকে যদি করের আওতায় আনা হয়, সেটি মোট রাজস্ব আয়ের ১ শতাংশও হবে না। আইসিটি খাত সবে মাত্র দাঁড়াতে শুরু করেছে, সামনে আমাদের দৌড়ানোর সময়
বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ
সুব্রত সরকার বলেন,“স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে আইসিটি খাতের কর অব্যাহতির সুবিধা ২০৩১ সাল পর্যন্ত বলবৎ রাখা উচিৎ বলে মনে করি। বাংলাদেশের স্থানীয় আইসিটি খাতে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা সুদূরপ্রসারী চিন্তা করে বিনিয়োগ করে, সেক্ষেত্রে কর অব্যাহতির ফলে কেবল মাত্র এই ইন্ডাস্ট্রি দাঁড়াতে শুরু করেছে। তাই আমি মনে করি এই কর অব্যাহতির সুবিধা বলবৎ রাখার কোনো বিকল্প নেই।”
ওয়াহিদ শরীফ বলেন, “বর্তমান সময়ে আইসিটি খাতে যে সাফল্য পরিলক্ষিত হচ্ছে, তা এই খাতে কর অব্যাহতি সুবিধা প্রদানের ফলেই অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। আপাত দৃষ্টিতে সরকার মনে করছে এই শিল্প খাত থেকে কোন রাজস্ব পাচ্ছে না। কর অব্যাহতির মেয়াদ বৃদ্ধি করা না হলে সামগ্রিকভাবে রপ্তানি আয় ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ব্যাহত হবে, পাশাপাশি নতুন উদ্যোক্তারা এই শিল্পে বিনিয়োগে আগ্রহ হারাবে। ফলে এই শিল্পের উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়বে এবং এই খাতে কর্মরত পেশাজীবীদের একটি বড় অংশ কর্মহীন হয়ে পড়বে। সুতরাং আইসিটি শিল্পে কর অব্যাহতি সুবিধা বাতিল করা হলে ভবিষ্যতে সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনও বাধাগ্রস্ত হবে।”
কর অব্যাহতির মেয়াদ বৃদ্ধি করা না হলে সামগ্রিকভাবে রপ্তানি আয় ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ব্যাহত হবে, পাশাপাশি নতুন উদ্যোক্তারা এই শিল্পে বিনিয়োগে আগ্রহ হারাবে
বাক্কো সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ
মো. ইমদাদুল হক বলেন, “আইসিটি পরিষেবা খাতের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নে কর অব্যাহতির সুবিধা ২০৩১ সাল পর্যন্ত বলবৎ রাখা অত্যন্ত জরুরী। পাশাপাশি আইএসপিএবি ইন্ডাস্ট্রিকে আইসিটি পরিষেবা খাতের অন্তরভূক্ত করার জন্য দাবী জানাচ্ছি। বর্তমান প্রতিযোগীতামূলক ইন্টারনেট সেবায় আমদানী নির্ভর আইএসপি সেক্টরের যন্ত্রপাতি ও ডলারের উর্ধগতির বাস্তবতায় সকল আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোর ইন্টারনেট সার্ভিসের ব্যয় বহন করে রেভিনিউ এর ওপর ১০% লাভ করতে পারেনা। ফলে ইন্টারনেট সার্ভিসের বিলের ওপর অতিরিক্ত ১০% কর আরোপে সকল আইএসপি প্রতিষ্ঠান ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে। আগামী ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ইন্টারনেট সার্ভিসের ওপর ১০% (AIT) রহিত করার জন্য জোড় দাবী জানাচ্ছি।”
আইএসপিএবি ইন্ডাস্ট্রিকে আইসিটি পরিষেবা খাতের অন্তরভূক্ত করার জন্য দাবী জানাচ্ছি। বর্তমান প্রতিযোগীতামূলক ইন্টারনেট সেবায় আমদানী নির্ভর আইএসপি সেক্টরে
আইএসপিএবি সভাপতি মো. ইমদাদুল হক
মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন বলেন, “প্রযুক্তি এবং আরও আনুষঙ্গিক অবস্থার পরিবর্তনের কারণে প্রযুক্তি খাতকে আমাদের আরও কিছুদিন বিশেষ যত্ন ও সুবিধার প্রয়োজন। কর অব্যাহতি হলো তার একটি। এর মাধ্যমে এখাত টেকসই ও সক্ষম হয়ে ওঠবে। এখনি অব্যাহতি রহিত করলে এই খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমাদের বিশ্বাস সকলে বিষয়টি অনুধাবন করতে পারবেন।”