‘আমাদের বিশ্বকে সুরক্ষিত করি’ স্লোগানে শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী ক্যাম কর্মসূচি
ক.বি.ডেস্ক: ‘আমাদের বিশ্বকে সুরক্ষিত করি’ স্লোগানে অক্টোবর মাসজুড়ে সারাদেশে শুরু হতে যাচ্ছে সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস (ক্যাম) অক্টোবরের কর্মসূচি। বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও অক্টোবরকে ‘‘জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস’’ ঘোষণা করতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা বিষয়ক জাতীয় কমিটি (এনসিসিএ)।
আজ শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে অক্টোবর মাসব্যাপী সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা কর্মসূচি ঘোষণা উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা বিষয়ক জাতীয় কমিটির (এনসিসিএ) নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এনসিসিএ’র সদস্য প্রকৌশলী মো. মুশফিকুর রহমান, রবির সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রাইভেসি বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট সঞ্জয় চক্রবর্ত্তী, ইন্টারনেট সোসাইটি বাংলাদেশের জেনারেল সেক্রেটারি মোহাম্মদ কাওছার উদ্দিন, এনসিসিএ সদস্য মো. আবুল হাসান, বাংলাদেশ সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটরস ফোরামের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আশফাকুর রহমান, ব্লাস্টের সহকারী পরিচালক তাপসী রাবেয়া। সঞ্চালনা করেন সিক্যাফ সভাপতি কাজী মুস্তাফিজ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশে ২০২২ সালে সংঘটিত নতুন ধরনের অপরাধের মাত্রা বেড়েছে ২৮১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। নিত্যনতুন ও অভিনব কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে সাইবার দুর্বৃত্তরা। এসব অপরাধের মধ্যে রয়েছে নানা মাত্রিক প্রতারণা- চাকরি দেয়ার মিথ্যা আশ্বাস, ভুয়া অ্যাপসে ঋণ দেয়ার ফাঁদ, সেবা বা পণ্য বিক্রির নামে প্রতারণা ইত্যাদি। ২০২২ সালে ভুক্তভোগীদের ১৪ দশমিক ৬৪ শতাংশই অনলাইনে পণ্য কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
সাইবার অপরাধে শিশু ভুক্তভোগীদের হার বেড়েছে ১৪০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। ভুক্তভোগীদের ৭৫ শতাংশই তরুণ, যাদের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। জেন্ডারভিত্তিক তুলনামূলক পরিসংখ্যানে সাইবার অপরাধের ভুক্তভোগীদের মধ্যে নারীদের হার বেশি (৫৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ)।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে আইনের আশ্রয় নেয়ার সংখ্যা দিন দিন কমছে। ২০১৮ সালের জরিপে যেখানে অভিযোগকারীর শতকরা হার ছিল ৬১ শতাংশ, ২০২৩ এ গিয়ে তা কমে ২০ দশমিক ৮৩ শতাংশে নেমেছে। আইনি ব্যবস্থা না নেয়ার কারণগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হার (২৪ শতাংশ) প্রচলিত আইন সম্পর্কে না জানা। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বিষয়টি গোপন রাখতে ২০ শতাংশ এবং তৃতীয়ত আইনি ব্যবস্থা নিয়ে উল্টো হয়রানির ভয়ের কথা জানিয়েছেন ১৮ শতাংশ ভুক্তভোগী।
প্রকৌশলী মুশফিকুর রহমান বলেন, বিদেশি সফটওয়্যার ব্যবহারে তথ্য নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকে। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দেশীয় উৎপাদিত সফটওয়্যার ব্যবহারের চর্চা বাড়াতে হবে। আর এটি নিশ্চিত করতে হলে প্রযুক্তিতে নিজেদের দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা জরুরি। এতে দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি প্রযুক্তি রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক আয়ও বাড়বে।
সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, এক বছরে রবি’র ২০ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বেড়েছে। ১৮ কোটির বেশি এমএফএস অ্যাকাউন্ট আছে। জিমেইলে আসা প্রায় দুই শতাংশ মেইল ফিশিং। আর এই ফিশিং এর মাধ্যমেই ডিজিটাল প্রতারণা ও হামলা বেশি হয়। আর ডিজিটাল সুরক্ষার বিষয়টি চলমান একটি প্রক্রিয়া। একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করলেই আমরা এর গুরুত্ব বুঝতে পারি। পাসওয়ার্ড বা সচেতনতা হচ্ছে গাড়ির ব্রেক এর মতো। ব্রেক করতে হয় কেবল নিরাপদ থাকার জন্যই নয়; গতি বাড়াতেও। ফাস্ট মুভ করতে হলেই ডিজিটাল সিকিউরিটি দরকার।
কাউছার উদ্দিন বলেন, কোভিড সময়ে আমরা শিশু ও এমন কিছু ব্যক্তিকে ইন্টারনেট বা ডিজটাল ডিভাইসে যুক্ত করেছি যা আরও অনেক পরে হতো। কিন্তু তাদের হাতে ডিজিটাল ডিভাইস তুলে দিলেও আমরা এগুলো ব্যবহারে সচেতন করতে পারেনি। তা ছাড়াও আমাদের শিক্ষিত মানুষেরাও এ বিষয়ে অসচেতন। আমার জানা মতে, খোদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরা প্রেমিকের সঙ্গে বিশ্বাসের প্রশ্নে ফেসবুকের পাসওয়ার্ড শেয়ার করেন। এমনকি একজন পুরুষ শিক্ষকও এভাবে আক্রান্ত হয়েছেন। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না পাসওয়ার্ড হচ্ছে টুথব্রাশের মতো। এটি সবাইর ব্যবহার করতে পারে না। তাই আমাদের এসব বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে সচেতনতায়।
২০২৩ সালে বাংলাভাষীদের জন্য ‘আমাদের বিশ্বকে সুরক্ষিত করি’ প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে জাতীয় কমিটি। অক্টোবরের চার সপ্তাহে সুরক্ষার মৌলিক চারটি বার্তা প্রচারের মাধ্যমে সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে যে, আপনার তথ্য সুরক্ষিত রাখার সব ধরনের উপায় আছে। মাত্র চারটি মূল পদক্ষেপ অনুসরণ করলে সাইবার নিরাপত্তা বজায় রাখা কঠিন হবে না। কয়েকটি ক্লিকের মাধ্যমে আপনি অনলাইনে আপনার তথ্য নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখতে পারেন।
বার্তাগুলো হলো- প্রথম সপ্তাহ (১-৭): মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন চালু করুন, দ্বিতীয় সপ্তাহ (৮-১৪): শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন, তৃতীয় সপ্তাহ (১৫-২১): ফিশিং চিনুন এবং রিপোর্ট করুন, চতুর্থ সপ্তাহ (২২-২৮): আপনার সফ্টওয়্যার আপডেট করুন।
জাতীয় কমিটির কর্মসূচি: মাসব্যাপী ক্যাম ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে সচেতনতার বার্তা সারাদেশে পৌঁছে দিতে যেকোনো ব্যক্তি/সংগঠনকে এই কর্মসূচিতে যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় কমিটি। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অনলাইনে www.cyberawarebd.com এ রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে বাংলা টুলকিটসহ বিনা মূল্যে বিভিন্ন উপকরণ পাবেন এবং এর মাধ্যমে প্রচারাভিযান করতে পারবেন।
তৃণমূল ছাড়াও জাতীয় পর্যায়ে কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- মাসব্যাপী সারাদেশে এসএমএস ক্যাম্পেইন, সারাদেশ থেকে সামাজিক সংগঠকদের কর্মশালা, সাইবার সুরক্ষা বিষয়ক আলোচনা সভা, প্রতি সপ্তাহে বিশিষ্টজনদের নিয়ে বিষয়ভিত্তিক ওয়েবিনার, স্যোশাল মিডিয়ায় ক্যাম্পেইন ইত্যাদি।
সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস অক্টোবর-২০২৩ এ পৃষ্ঠপোষক রবি, সফোস ও সাইবার প্যারাডাইজ। সহযোগী সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন, আইএসপিএবি, সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন এবং বাংলাদেশ সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটরস ফোরাম।