আইডিয়াথন প্রতিযোগিতা
বাংলাদেশের স্টার্টআপদের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম বিকশিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ-দক্ষিণ কোরিয়া যৌথভাবে আয়োজন করে ‘আইডিয়াথন প্রতিযোগিতা’। গত সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতাটি আইসিটি বিভাগের আইডিয়া প্রকল্পের উদ্যোগে তিন মাস ধরে এই আয়োজনের সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়।
বাংলাদেশ-দক্ষিন কোরিয়া যৌথভাবে আয়োজিত এই আয়োজনের সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান গত বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) ঢাকার আগারগাঁও আইসিটি টাওয়ারের বিসিসি অডিটরিয়ামে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক। গেস্ট অব অনার ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং-কিউন এবং আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) নির্বাহী পরিচালক পার্থপ্রতিম দেব, দক্ষিন কোরিয়ার কোরিয়া প্রোডাক্টিভিটি সেন্টারের (কেপিসি) পরিচালক স্যাংগন পার্ক, বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর এবং স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিনা এফ জাবিন। সভাপতিত্ব করেন আইডিয়া প্রকল্পের পরিচালক সৈয়দ মজিবুল হক।
জুনাইদ আহ্মেদ পলক বলেন, এই মুজিব শতবর্ষে আইসিটি বিভাগ ১০০ টি ইনিশিয়েটিভসহ বিভিন্ন ইভেন্ট আয়োজন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে এবং এর মধ্যে বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য আইডিয়াথন একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৭০ ভাগ জনগণ আমাদের দেশে যাদের বয়স ৩৫ এর নিচে তারাই আমাদের আগামী ২০ বছরের নেতৃত্ব দিবে। এই তরুণ প্রজন্মই ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে লেবার বেইজড্ ইকোনোমি থেকে ডিজিটাল ইকোনমিতে পরিবর্তন করতে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করবে। দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন উন্নয়নে সহযোগী হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়াকে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং ভবিষ্যতেও তাদের এসকল সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে তিনি অনুরোধ করেন।
লি জ্যাং-কিউন বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া এবং বাংলাদেশের মধ্যকার এই পার্টনারশীপ দুই দেশের সম্পর্ককে অবশ্যই আরও উন্নত করবে। বিজয়ী ৫ স্টার্টআপকে শুভেচ্ছা জানাই। দক্ষিণ কোরিয়া এই বিজয়ী স্টার্টআপদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। প্রয়োজনীয় ট্রেইনিং, কনসাল্টিং এবং নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে আগামী ৬ মাস এই বিজয়ী স্টার্টআপদের উপযুক্তভাবে তৈরি করার লক্ষ্যে দক্ষিণ কোরিয়া কাজ করবে।
এন এম জিয়াউল আলম বলেন, আমরা এনালগ থেকে ডিজাটাল যুগে প্রবেশ করেছি এবং ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজির দিকে যাচ্ছি। এই পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে আমরা খাপ খাইয়ে নিয়েছি। আজকের তরুণ প্রজন্মের সেই পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার সক্ষমতা আছে, তাদের মানুসিকতা আছে এবং সেইভাবে তারা গড়ে উঠছেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী তথা মুজিব শতবর্ষে ‘লেটস স্টার্ট ইউ আপ’ স্লোগানে আয়োজিত আইডিয়াথন প্রতিযোগিতায় দেশের ৮টি বিভাগের বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যালামনাই ক্লাব, কমিউনিটি এবং ইন্ডাস্ট্রির বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সক্রিয় অংশগ্রহণের ফলে প্রাথমিকভাবে আবেদনের সংখ্যা দাড়ায় ৩১৪৭টি। উদ্যোক্তাদের আবেদন গ্রহণের পর প্রথম স্ক্রিনিংয়ে প্রাপ্ত ৩৮৯টি আবেদনের থেকে ২য় স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে ১১৮টি আবেদনকে বাছাই করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে ১০ জন করে ২টি প্যানেলে মোট ২০ জন অভিজ্ঞ বিচারকের মাধ্যমে টপ ৩০টি টিম ফাইনাল রাউন্ডের জন্য নির্বাচিত হয়। বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রি থেকে ৮ জন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪ জন এবং দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ৪ জনের সমন্বয়ে গঠিত মোট ১৬ জন সদস্যের একটি অভিজ্ঞ ও দক্ষ বিচারকদল এই প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। বিচারকগণ চূড়ান্ত নির্বাচন শেষে সেরা ৫টি বাংলাদেশি স্টার্টআপকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করেন। বিজয়ীদলগুলো হল- ছবির বাক্স (আরিফ রহমান, আরাফাত রহমান, ইবনুল ইসলাম, সুমিত আদনান এবং ইমতিয়াজ আহমেদ); কৃষিয়ান (এহসান আহমেদ এবং মো: মামুনুর রেজা); চার ছক্কা লিমিটেড (নওরীন হক হৃদি, আসফাকুল আজম, ইয়াসির হাসান টাকি এবং রুকসার আলম); এএনটিটি রোবোটিক্স লিমিটেড (থাজিড ইবনে রউফ উদয়, রাফিদ উদ্দিন ভূইঁয়া নেহাল, নাজিব আহমদ, শুভদ্বীপ দাস এবং সাবাব মাহমুদ) এবং রক্ষী লিমিটেড (আবরার মাসুম শান্ত, প্লাবন শেখ, আবরার গালিব, মোহাম্মদ ফয়সাল ও ফাহিম হাসনাইন ফাহাদ)।
বিজয়ী স্টার্টআপগণ দক্ষিণ কোরিয়াতে ৬ মাসের বিশেষ প্রশিক্ষণ, ইনকিউবেশন, ফান্ডিং, আন্তর্জাতিক পেটেন্টসহ কপিরাইট ও ট্রেডমার্ক পাবার সহযোগিতা পাবে। বিজয়ী ৫টি স্টার্টআপ টিমের প্রতি টিম হতে ২ জন করে মোট (৫ x ২=১০ জন) দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠেয় প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করবেন। এই প্রতিযোগিতায় সেরা ৩০টি টিমই বিশেষ মেন্টরিং গ্রহণ করে। বিজয়ী ৫ স্টার্টআপ টিমকে সম্মাননা ক্রেস্টসহ বিশেষ সনদপত্র প্রদান করা হয়। এ ছাড়া টপ ৩০টি স্টার্টআপকে ক্রেস্টসহ টিমের প্রত্যেক সদস্যকে অর্থাৎ মোট ১১১ জনকে সনদপত্র প্রদান করা হয়। আইডিয়াথন প্রতিযোগিতার সহ-আয়োজক কোরিয়া প্রোডাক্টিভিটি সেন্টার (কেপিসি) এবং কোরিয়া ইনভেনশন প্রমোশন অ্যাসোসিয়েশন (কাইপা)। পার্টনার আইসিটি বিভাগ, বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিল, দক্ষিণ কোরিয়ার মিনিস্ট্রি অব জাস্টিস এবং গ্লোবাল স্টার্টআপ ইমিগ্রেশন সেন্টার।