অন্যান্য টিপস

সাইবার ঝুঁকি কমানোর ১১ দুর্দান্ত সিকিউরিটি কৌশল

ভূঁইয়া মোহাম্মদ ইমরাদ (তুষার) আজকের ডিজিটাল যুগে শুধু ডেটা সুরক্ষাই নয়- ব্যবসার সুনাম, গ্রাহকের আস্থা এবং প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকার ক্ষমতা এখন সাইবার নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। বিশ্বজুড়ে সাইবার হুমকি দ্রুত বাড়ছে। র‍্যানসমওয়্যার, বিজনেস ইমেইল কম্প্রোমাইজ, ডেটা চুরি কিংবা সিস্টেম ধ্বংস কোনও সেক্টরই এখন নিরাপদ নয়। প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিদিনই নতুন ধরনের ঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছে।

সাইবার ডিফেন্স ম্যাগাজিনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে বিশ্বব্যাপী সাইবার অপরাধের ক্ষতি দাঁড়াতে পারে ১.২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রতিষ্ঠান ছোট বা বড় সবার ক্ষেত্রেই এটি বড় ঝুঁকি। এই ক্ষতি শুধু আর্থিক নয়; প্রতিষ্ঠানের সুনাম, গ্রাহকের আস্থা এবং ব্যবসার ধারাবাহিকতা সবকিছুকে ঝুঁকিতে ফেলছে। এই ঝুঁকি কমাতে সবচেয়ে কার্যকর হলো মজবুত সিকিউরিটি কন্ট্রোল। সঠিক কন্ট্রোলগুলো হ্যাক ঠেকায়, ক্ষতি কমায় এবং সাইবার ইন্স্যুরেন্সের ক্ষেত্রেও প্রতিষ্ঠানের অবস্থান শক্তিশালী করে।

এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা সর্বসম্মতভাবে একটি কথাই বলছেন, শুধু নিরাপত্তা টুল কিনলেই হবে না, মজবুত সিকিউরিটি কন্ট্রোল গড়ে তোলাই হলো সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরক্ষা। প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে এই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তৈরি করবে, কোন কোন কন্ট্রোলে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত- এসব বিষয় নিয়ে প্রস্তুত করেছি এই বিশেষ প্রতিবেদন। ঝুঁকি কমানোর জন্য ১১টি নির্ভরযোগ্য সিকিউরিটি কন্ট্রোল…

১. আইডেন্টিটি ও অ্যাকসেস ম্যানেজমেন্ট (আইএএম)
কার কোন সিস্টেমে কতটুকু প্রবেশাধিকার থাকবে তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করাই আইএএম-এর মূল লক্ষ্য।
অবহেলায় রাখা পুরোনো/স্টেল অ্যাকাউন্টই অনেক বড় হামলার প্রধান দরজা। এ কারণে নিয়মিত অডিট, শক্তিশালী পাসওয়ার্ড নীতি এবং সঠিক অনবোর্ডিং/অফবোর্ডিং অত্যন্ত জরুরি।

২. এন্ডপয়েন্ট সিকিউরিটি
অফিস বা বাসা সব ডিভাইসই আজ প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্কের অংশ। তাই প্রতিটি কমপিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল ও সার্ভার সুরক্ষিত থাকা আবশ্যক। পুরোনো বা নজরবিহীন ডিভাইসই হামলাকারীরা সবচেয়ে বেশি টার্গেট করে।

৩. মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (এমএফএ)
পাসওয়ার্ড ফাঁস হওয়া এখন খুবই সাধারণ ঘটনা। তাই শুধু পাসওয়ার্ডের ওপর নির্ভর করলে চলবে না। এমএফএ ব্যবহার করলে লগইনের সময় অতিরিক্ত যাচাই দরকার হয়, যা হামলাকারীদের প্রবেশ কঠিন করে তোলে।

৪. ভালনারেবিলিটি ম্যানেজমেন্ট
নিয়মিত স্ক্যান, প্যাচিং এবং সিস্টেম আপডেট ছাড়া সাইবার সুরক্ষা অসম্পূর্ণ। প্রতিষ্ঠানের সব অ্যাসেট কোথায় আছে জানা না থাকলে দুর্বলতা শনাক্ত করাও সম্ভব হয় না।

৫. ইমেইল সিকিউরিটি
ফিশিং এখনও হামলার সবচেয়ে প্রচলিত মাধ্যম। এআই চালিত ফিশিং ইমেইল এখন আরও বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠছে, তাই উন্নত ইমেইল ফিল্টার, ইউআরএল স্ক্যানিং এবং পোস্ট-ডেলিভারি সিকিউরিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৬. প্রিভিলেজড সেশন ম্যানেজমেন্ট
অ্যাডমিন অ্যাকাউন্টই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অংশ। হ্যাকাররা যদি অ্যাডমিন-লেভেল এক্সেস পায়, সরাসরি সিকিউরিটি সিস্টেম বন্ধ করে র‍্যানসমওয়্যার ছড়িয়ে দিতে পারে। তাই অ্যাডমিন কার্যক্রম রেকর্ডিং ও মনিটরিং অপরিহার্য।

৭. অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট
প্রতিষ্ঠানের কোন ডেটা কোথায় সংরক্ষিত আছে, কোন ডিভাইস কাজ করছে এসব না জানা থাকলে দ্রুত তদন্ত বা পুনরুদ্ধার অসম্ভব। অ্যাসেট তালিকা নিয়মিত আপডেট রাখা তাই মূল শর্ত।

৮. নেটওয়ার্ক সেগমেন্টেশন ও আর্কিটেকচার
হ্যাকার সিস্টেমে ঢুকলে সাধারণত প্রথম লক্ষ্য থাকে ল্যাটারাল মুভমেন্ট। নেটওয়ার্ক সেগমেন্টেশন করলে হামলাকারীরা এক সিস্টেম থেকে আরেকটিতে সহজে যেতে পারে না, ফলে দ্রুত শনাক্ত করা যায়।

৯. এক্সটেন্ডেড ডিটেকশন অ্যান্ড রেসপন্স (এক্সডিআর)
ডজন খানেক সিকিউরিটি টুল আলাদা আলাদা মনিটর করার বদলে এক্সডিআর সবকিছুকে এক প্ল্যাটফর্মে এনে দ্রুত সতর্কতা ও বিশ্লেষণের সুযোগ দেয়। এআই চালিত অ্যানালিটিক্স হামলা শনাক্তকে আরও নির্ভুল ও দ্রুত করে।

১০. ব্যাকআপ ও ব্যবসায়িক ধারাবাহিকতা
ব্যাকআপ থাকলেই হয় না সেগুলো কার্যকর, সুরক্ষিত এবং নিয়মিত পরীক্ষা করা থাকতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান আক্রমণের পর বুঝতে পারে তাদের ব্যাকআপ অসম্পূর্ণ বা ব্যবহারযোগ্য নয়। ব্যাকআপ অবশ্যই অফলাইন বা সেগমেন্টেড হওয়া উচিত।

১১. নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি ও ট্রাফিক কন্ট্রোল
ফায়ারওয়াল, আইপিএস, ডিএনএস ফিল্টারিং এবং ওয়েব গেটওয়ে এসব মিলে নেটওয়ার্কের প্রধান প্রতিরক্ষা লেয়ার তৈরি হয়। পুরোনো বা ভুলভাবে কনফিগার করা ফায়ারওয়াল থেকেই বড় ঝুঁকি তৈরি হয়। জিরো ট্রাস্ট নেটওয়ার্ক অ্যাকসেস (জেডটিএনএ) এখন আধুনিক সুরক্ষা স্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

সাইবার সিকিউরিটি শুধু প্রযুক্তির বিষয় নয় এটি মানুষের দক্ষতা, নীতি, প্রক্রিয়া এবং টুলের সমন্বয়ে গঠিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাইবার সিকিউরিটি কোনও একদিনের কাজ নয়। এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। উপরের ১১টি কন্ট্রোল একসঙ্গে বাস্তবায়ন করতে পারলে প্রতিষ্ঠান হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি কমাতে, ক্ষতির পরিমাণ সীমিত রাখতে, দ্রুত পুনরুদ্ধার করতে এবং সাইবার ইন্স্যুরেন্সের সুবিধা বাড়াতে পারবে। প্রযুক্তি যত উন্নত হবে, সাইবার অপরাধীর কৌশলও তত জটিল হবে। তাই প্রয়োজন নিয়মিত আপডেট, দক্ষ টিম ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *