এটুআই’র সঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর

ক.বি.ডেস্ক: আইসিটি বিভাগের এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রোগ্রাম এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ দেশের লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর শিখনযাত্রাকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে। দু’টি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে শক্তিশালী ডিজিটাল দক্ষতা সংযোজন, আধুনিক শিক্ষণ সরঞ্জামের প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি এবং শ্রেণিকক্ষ থেকে কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার পথ সহজ ও উন্মুক্ত করতে কাজ করবে।
এর ফলে উভয় পক্ষ একাডেমিক মানোন্নয়ন, প্রয়োজনীয় ডিজিটাল দক্ষতা লাভ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্নাতকদের জন্য টেকসই কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে লক্ষ স্থির করেছে। এটুআই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্সে ডিজিটাল ও তথ্যপ্রযুক্তি সক্ষমতা সংযোজনের দিকনির্দেশনা দেবে। প্রোগ্রামের বিশেষজ্ঞরা সিলেবাস পর্যালোচনা, নতুন মডিউল নকশা এবং অনলাইন শিক্ষায় কোর্স প্রণয়নে শিক্ষকদের সঙ্গে কাজ করবেন।
এটুআই ভবিষ্যৎ শিক্ষণ মডেল নিয়ে যৌথ গবেষণা, সফট স্কিলস অর্জনে উৎসাহিতকারী পলিসি তৈরী এবং ব্লেন্ডেড শিক্ষণ-পদ্ধতিতে শিক্ষকদের দক্ষ করে তুলতেও সহায়তা করবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অংশীদারিত্বের একাডেমিক দিকে নেতৃত্ব দেবে। বিশ্ববিদ্যালয় তার সংযুক্ত কলেজ নেটওয়ার্কে পাঠ্যক্রম সংস্কার, ডিজিটাল ব্যবস্থা ও ই-সেবার বিস্তারিত কৌশল প্রণয়ন করবে।
আজ শনিবার (২৪ মে) ঢাকার আইসিটি টাওয়ারে এটুআই প্রোগ্রামের প্রকল্প পরিচালক মো. রশিদুল মান্নাফ কবীর এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ এই স্মারকে স্বাক্ষর করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। বিশেষ অতিথি ছিলেন আইসিটি সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এটুআই এজেন্সির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া; দক্ষতা উন্নয়নে শিক্ষা অনলাইনে (দীক্ষা) প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. কবির হোসেন; জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান ও অধ্যাপক মো. নুরুল ইসলাম; এটুআই-র ফিউচার অক এডুকেশন বিভাগের প্রধান মো. আফজাল হোসেন সারোয়ার। সঞ্চালনা করেন এটুআই-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজমেন্ট প্রধান আবদুল্লাহ আল ফাহিম।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, “আমাদের প্রথম কাজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক প্রক্রিয়াগুলো ডিজিটাল করা, যাতে শিক্ষার্থীরা সহজে ও বিলম্ব ছাড়াই সনদ, ট্রান্সক্রিপ্ট ও অন্যান্য নথি পেতে পারে। আমরা পাঠ্যক্রমেও পরিবর্তন আনব, যাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলসহ আধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত হয়। শিক্ষার্থীদের মুখস্থ বিদ্যার বেশি কিছু প্রাপ্য; তাদের ধারণা অনুসন্ধান, সমস্যা সমাধান ও নতুন মূল্য সৃষ্টির সুযোগ দরকার, যাতে তারা দেশের কল্যাণে অবদান রাখতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “অগ্রগতি নির্ভর করে শিক্ষকদের দক্ষতার ওপর। ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ শিক্ষকদের ব্লেন্ডেড শিক্ষণ-পদ্ধতি ব্যবহারে সক্ষম করবে, যেখানে অনলাইন উপকরণ শ্রেণিকক্ষের আলোচনাকে সমর্থন করবে। আমরা দীক্ষা ও মুক্তপাঠের মতো প্রকল্পসমূহকে আরও উন্নত ও আধুনিক করব, যাতে প্রতিটি শিক্ষার্থী নিজস্ব গতিতে শিক্ষালাভ জোরদার করতে পারে। শিক্ষকদের আত্মবিশ্বাস বাড়লে শিক্ষার্থীদের সক্ষমতাও বাড়ে।”
শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, “অনেক বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসমূহ আধুনিক প্রত্যাশার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একাডেমিক পরিবেশ ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছিল। ডিজিটাল রূপান্তর আর ঐচ্ছিক নয়। এটুআই-এর সহায়তায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি উচ্চশিক্ষায় নতুন মানদণ্ড স্থাপন করতে পারে।”
অধ্যাপক ড. আমানউল্লাহ বলেন, “বিশ্বের বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি হিসেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতি বছর দশ লাখের বেশি স্নাতক তৈরি করে। দেশের প্রায় সত্তর শতাংশ উচ্চশিক্ষা আমাদের আওতায়। আমাদের শিক্ষকরা নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেন, অবকাঠামোও উন্নতি করছে, তবে আমাদের পাঠ্যক্রম বর্তমান বিশ্বের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ন নয়। এটি আমাদের শিক্ষাকে শিল্পক্ষেত্রের প্রয়োজনের সঙ্গে সামঞ্জস্য আনয়ন করতে এবং শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সেতুবন্ধন মজবুত করতে সহায়তা করবে। এই অংশীদারিত্ব কাগজে আটকে রাখব না। কয়েক মাসের মধ্যেই আমরা যৌথ উদ্যোগ চালু করব, নতুন কোর্স পরীক্ষা করব এবং শিক্ষার্থীদের তাদের পড়াশোনার সঙ্গে মিলিয়ে ইন্টার্নশিপে স্থান দেব।”