আইসিএক্স ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার নয়, আধুনিকায়নের দাবি

ক.বি.ডেস্ক: টেলিকম খাতে যেকোনো সংস্কার বাস্তব পরিস্থিতি ও অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে হয়। বিটিআরসি ও সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের প্রতি আমাদের দাবি হলো বর্তমান আইসিএক্স-ভিত্তিক ব্যবস্থাকে আরও আধুনিকায়ন এবং সুশৃঙ্খল করতে হলে তা করা হোক, তবে এটি বাতিল করে পুরো খাতকে নৈরাজ্যে ঠেলে দেয়া আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে। টেলিকম খাতে শৃঙ্খলা বজায় রেখে প্রযুক্তিনির্ভর, তথ্যভিত্তিক ও কর্মসংস্থানবান্ধব সংস্কারই হওয়া উচিত। একটি টেকসই, সাশ্রয়ী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক টেলিকম ব্যবস্থা গঠনে আইসিএক্স অপরিহার্য।
বাংলাদেশের টেলিকম খাতে আইসিএক্স (ইন্টার কানেকশন এক্সচেঞ্জ) ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে চলমান বিতর্কের প্রেক্ষিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আইসিএক্স অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব আইসিএক্স অপারেটরস অব বাংলাদেশ (এআইওবি)। ভয়েস ট্রাফিকের জন্য কেন্দ্রীয় আন্তঃসংযোগ ব্যবস্থা হিসেবে আইসিএক্স গত প্রায় দেড় দশক ধরে স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান ও দেশীয় বিনিয়োগ সংরক্ষণের মাধ্যমে একটি স্থিতিশীল অবকাঠামো গড়ে তুলেছে।
আজ বুধবার (৩০ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে এআইওবি আয়োজিত ‘নতুন নীতিমালার নামে আইসিএক্স ধ্বংস নয়, সম্ভাবনার দ্বার খুলুন ও কর্মসংস্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংগঠনটির নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এআইওবি’র মহাসচিব লেফটেন্যান্ট কর্নেল আমিনুর রহমান (অব.), কোষাধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. খুরশিদ আলম (অব.), প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ আহমেদ উর রহমান (রোমেল) সহ টেলিযোগাযোগ খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। সভাপতিত্ব করেন এআইওবি’র পরিচালক ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান (অব.)।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা বলেন, ভয়েস স্তরে সরলীকরণের নামে যে প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে, তা বাস্তবতা বিবর্জিত এবং জাতীয় নিরাপত্তা, আয়কর রাজস্ব, দেশীয় উদ্যোক্তাদের ভবিষ্যৎ এবং সাধারণ গ্রাহকের কল সেবার মান-তিনটি ক্ষেত্রেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বর্তমানে অবৈধ ভিওআইপি, কল রেট বৃদ্ধি ও কল ড্রপের সমস্যা আইসিএক্স নয়, বরং মোবাইল অপারেটরদের অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্ক কাঠামো ও বাজার নিয়ন্ত্রণের কারণে হচ্ছে।
এই খাতে অতি সাম্প্রতিক টেকনোলজির উন্নয়নের জন্য ১৩০ কোটি বিনিয়োগ করা হয়েছে, যা আগামী এক দশক সেবা দেয়ার মতো সক্ষম। এই খাতে ইতোমধ্যেই প্রায় ৫০০ জনের বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি ২০২৪ সালে বিটিআরসির নির্দেশনায় আইপি টেকনোলজি উন্নয়ন ও এসএমএস ইন্টারকানেকশনর জন্য ১৩০ কোটি টাকার দেশীয় বিনিয়োগ হয়েছে। এটি তুলে দিলে কর্মসংস্থানের ওপর বড় আঘাত আসবে এবং ইতিবাচক বিনিয়োগ প্রবণতা থমকে যাবে বলে মনে করে এআইওবি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, দেশে বর্তমানে ৫০টির বেশি ভয়েস সেবাদাতা সংস্থা রয়েছে। যদি দ্বিপাক্ষিক সংযোগের অনুমতি দেয়া হয়, তাহলে বড় অপারেটরদের একচেটিয়া আধিপত্য তৈরি হবে এবং ছোট অপারেটররা টিকতে পারবে না। তদুপরি, সরকারি রাজস্ব হারানো, আন্তর্জাতিক কলের নিরাপত্তা হুমকি ও অবৈধ ভিওআইপি ফের বাড়ার ঝুঁকিও তৈরি হবে।