অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের দাবি
ক.বি.ডেস্ক: ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সামগ্রিক দাবি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ই-কমার্স খাতকে সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ তৈরি করে দেয়ার জন্য ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের কিছু দাবি সম্বলিত আবেদন হস্তান্তর করা হয়। গত ২৬ নভেম্বর আইসিটি উপদেষ্টা, আইসিটি সচিব, বাণিজ্য সচিব, মহাপরিচালক বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগ এবং ই-ক্যাব এর প্রশাসক বরাবর বেশ কিছু দাবি সম্বলিত আবেদন হস্তান্তর করা হয়। প্রত্যেকেই তার নিজস্ব অবস্থান থেকে বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুবেশততার সঙ্গে বিবেচনার আশ্বাস দেন।
ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের দাবির বিষয়বস্তু ছিল কোটা সংস্কার এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন জুলাই-আগস্ট ট্রাজেডি এবং ইন্টারনেট শাটডাউনের ফলে সামগ্রিকভাবে অনলাইনের ওপর নির্ভরশীল বিশেষ করে ফেসবুক উদ্যোক্তা, ই-ক্যাবের ২৭০০ এর অধিক সদস্য এবং ইন্ডাস্ট্রির ৩.৫ লাখেরও বেশি এসএমই উদ্যোক্তা এবং প্র্যায় ৩৫ লাখের মতো মানুষের জীবন ও জীবিকার জন্য করণীয় প্রসঙ্গে।
ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সামগ্রিক দাবিগুলো-
ই-কমার্স খাতের উদ্যোক্তাদের স্বার্থে মৌলিক অধিকার হিসেবে নিরবিচ্ছিন্নভাবে স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট নিশ্চিত করা। সেটি ব্যবসায়ী এবং ভোক্তা দুই পক্ষের জন্যই নিশ্চিত করতে হবে। ডিজিটাল বা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ই-কমার্স বা অনলাইন ব্যবসাকে ইন্ডাস্ট্রি বা শিল্প হিসেবে ঘোষণা দেয়া।
ই-কমার্স ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা সহজীকরণ করা। ই-কমার্সের গুরুত্ব এবং এর অবদান সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। ই-কমার্স খাতের জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা।
ট্রেড লাইসেন্স ক্যাটাগরিতে ই-কমার্স বা অনলাইন ব্যবসাকে সংযুক্ত করা। চলমান বছরের ট্রেড লাইসেন্স রিনিউর ক্ষেত্রেও শুধুমাত্র রিনিউয়াল ফি নেয়া, উৎসে কর কর্তন বাদ দিয়ে। চলতি অর্থ বছরের ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক সমস্ত ভ্যাট ট্যাক্স মওকুফ করা। ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ভ্যাট ট্যাক্স মওকুফ করা। ফেসবুক অ্যাড এর জন্য প্রদত্ত ১৫% ভ্যাট সহ।
আগামী ১২ মাসের জন্য ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের ব্যবসা সংক্রান্ত এবং ব্যক্তিগত সমস্ত লোনের ইন্টারেস্ট মওকুফ করা অথবা একেবারে নমিনাল পর্যায়ে নিয়ে আসা। লোনের ইনস্টলমেন্টগুলোকে শুধুমাত্র মূল টাকাগুলো নিয়ে লোনকে সচল রাখা। এটিকে আমরা “টুয়েলভ মানথ পেমেন্ট হলিডে” হিসেবে আখ্যা দিতে পারি।
ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের জামানতবিহীন লোনের ব্যবস্থা করা। চিরাচরিত অফলাইন ব্যবসার মতো ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের অনেক সময় মেশিনারি, স্টাবলিশমেন্ট অনেক সময় থাকে না। এদের থাকে টেকনোলজি, গুড উইল, কাস্টমার ডাটা, কুরিয়ার ডাটা, ফেসবুক লাইক বা রিচ অথবা ওয়েবসাইটের গ্রহণযোগ্যতা। এগুলো বিবেচনা করেই লোনের ব্যবস্থা করা।
ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে এসএমই উদ্যোক্তা হিসেবে সরাসরি আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থা করা। ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহৃত কার্ড, অনলাইন ট্রানজেকশন, এমএফএস এর ট্রানজেকশনগুলো আগামী ৬ থেকে এক বছর পর্যন্ত চার্জ মওকুফ করা।
পৃথিবীর প্রায় অন্যান্য দেশে যেখানে ই-কমার্স গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে সেখানেই ই-কমার্স ক্যাশলেস হয়েছে। বাংলাদেশে এখনও ক্যাশ অন ডেলিভারিতে হয়। কিন্তু ক্যাশলেস করার জন্য বাংলাদেশের এমএসএস কোম্পানিগুলোর মাধ্যমেই লেনদেন বেশি করাতে হলে ই-কমার্সের ক্ষেত্রে এমএমএস কোম্পানির সার্ভিস চার্জ ০.৫ টাকাতে নামিয়ে আনা এবং পেমেন্টগেটওয়ের চার্জও ০.৬ টাকার মধ্যেই রাখার ব্যবস্থা করা। এটির ইফেক্ট আল্টিমেটলি কাস্টমার পাবে প্রাইস কমে যাবে।
সেন্ট্রাল লজিস্টিক ট্রাকিং সিস্টেম এর মাধ্যমে সবার সেলস, ব্যবসায়ের গ্রোথ এবং কোম্পানি সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়ার ব্যবস্থা করা। ডিজিটাল মার্কেটিং এ ফেসবুক অ্যাড এর ক্ষেত্রে অ্যাড লিমিট প্রত্যেকটা ই-কমার্স ব্যবসায়ীর জন্য বাৎসরিক মিনিমাম ৩০,০০০ ডলার করে দেয়া উচিত।
দেশীয় পণ্য দেশের বাইরে প্রচার-প্রসারের জন্য ক্রস বর্ডার ই-কমার্সকে উন্মুক্ত করে দেয়া উচিত, সেক্ষেত্রে কুরিয়ার চার্জ ভ্যাট ট্যাক্স এর বিষয়গুলোকে ক্রস বর্ডারের জন্য শিথিল করা যেতে পারে। বাংলাদেশের ইন্টারন্যাশনাল পোস্টাল সার্ভিসকে আরও বেশি যুগোপযোগী এবং গ্রহণযোগ্য করে ক্রস বর্ডারকে উৎসাহিত করা উচিত।
ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া এবং ব্যবসা পুনরায় নতুন উদ্যমে চালু করতে সহায়তা করার জন্য সরকারি অনুদান বা সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা। ভাঙচুরের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়িক অবকাঠামো পুনর্নির্মাণে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করা।
বর্তমান বাস্তবিক প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে ই-কমার্স বা এসএমই উদ্যোক্তা যারা বিজনেস করছেন তারা যে বিশাল পরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন বিগত সময় হয়েছেন এবং সামনের দিনগুলোতে হবেন এবং তার যে প্রভাব ৩৫ লাখ লোকের ওপর পড়বে এ থেকে সহসাই উত্তরণের উপায় নেই। যদি না সরকার,অংশীজন এবং বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিজেদের দাবিগুলো তুলে না ধরা হয়। আগামী দিনগুলোতে যে পরিমাণ ক্ষতির ধাক্কায় পড়বে ছোট উদ্যোক্তাগন তাতে অনেকের টিকে থাকা এবং ব্যবসা থেকে ছিটকে পরে বেকার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকবে। যদি না সরকার এবং অংশীজন থেকে সহযোগিতার হাত প্রসারিত হয়।
লেখক: মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক মৃধা (সোহেল মৃধা)- প্রতিষ্ঠাতা কিনলে ডটকম, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ই-ক্যাব