কিভাবে নিশ্চিত কোয়ান্টাম এপোকেলিপ্স থেকে বাংলাদেশ কোয়ান্টাম নিরাপদ করা যায়?
মুজতবা সাত্তার: কোয়ান্টাম কম্পিউটিং বা কিউসি, কম্পিউটিংয়ের একটি উদীয়মান প্রযুক্তি যেখানে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নীতি ব্যবহার করা হয়। তত্ত্বগতভাবে, সমস্যা সমাধানে কোয়ান্টাম কম্পিউটার অবিশাস্য দ্রুতগতিতে তথ্য বিশ্লেষণ ও প্রক্রিয়াকরণ করে, যা দ্রুততম সুপার কম্পিউটারের বছরের পর বছর লেগে যেতে পারে। কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর যে ৩টি বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্যের সাহায্যে কোয়ান্টাম কম্পিউটার দ্রুত তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে, সেগুলো হলো…..
১। সুপারপজিশন: বর্তমান প্রযুক্তির কম্পিউটারে ‘বিট’ নামক তথ্য একক ব্যবহার করা হয় যা 0 অথবা ১ এই দুইটি অবস্থায় থাকতে পারে। এর বিপরীতে কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে ‘কিউবিট’ নামক কোয়ান্টাম তথ্য একক ব্যবহার করা হয়। কিউবিটগুলো একই সঙ্গে ‘0’ এবং ‘1’ অবস্থায় থাকতে পারে, যা সুপারপজিশন নামে পরিচিত, ২এন ( ২ টু দ্যা পাওয়ার এন = কিউবিটস বা কোয়ান্টাম বিটস এর সংখ্যা)।
২। এন্ট্যাঙ্গলমেন্ট: এটি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের একটি বিস্ময়কর ধারণা, যা বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্যার আলবার্ট আইনস্টাইনকে বিভ্রান্ত করেছিল। তিনি এটিকে ‘Spooky Action at Distance’ (ভৌতিক দূর দৃষ্টি) বলে অভিহিত করেছিলেন। এটি দুটি বা ততোধিক কোয়ান্টাম কণার মধ্যে বিশেষ ধরণের এক বন্ধন, যেখানে এক কণার অবস্থা পরিমাপ করলে তাৎক্ষণিকভাবে অন্য কণার অবস্থাও নির্ধারিত হয়ে যায়।
৩। কোয়ান্টাম ইন্টারফারেন্স (তরঙ্গ-কণা দ্বৈততা): এটি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের আরেকটি তত্ত্ব যেখানে একটি কোয়ান্টাম কণা একই সাথে তরঙ্গের মতো এবং কণার মতো আচরণ করতে পারে।
যদিও কোয়ান্টাম কম্পিউটার বর্তমান কম্পিউটারগুলোকে সম্পূর্ণভাবে প্রতিস্থাপন করবে না, তবে ব্যবহৃত হবে অত্যন্ত জটিল, বৃহৎ ও বিশেষ ধরণের সমস্যা সমাধানে। সেই সঙ্গে এ ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রিত ইলেক্ট্রনগুলোর বিশেষ কোয়ান্টাম বৈশিষ্ট্য ধরে রাখতে তাদেরকে তরলীকরণ রেফ্রিজারেটরে মাইনাস (-) ২৭৩ ডিগ্রী সেন্ট্রিগ্রেট তাপমাত্রায় শীতলীকরণ করে রাখতে হয়।
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং
স্মার্ট বাংলাদেশে বিনির্মাণের পথে পৃথিবীতে তথ্যপ্রযুক্তিতে যে নতুন নতুন উদ্ভাবন ঘটছে সে সম্পর্কে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সালে ঘটে যাওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সাইবার হ্যাকিং ডাকাতি ঘটনা বিবেচনা করুন। শীর্ষ পর্যায়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকার পরেও ঘটেছে, যা এটি ছিল অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এবং এরকম আরও ঘটনা ঘটতে পারে নিকট ভবিষ্যতে। এখন আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হবে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং নিরাপত্তা অথবা কোয়ান্টাম-প্রতিরোধী নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিকে, যা আমাদের, বিশেষ করে নীতি নির্ধারকদের বুঝতে হবে এবং দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে এখন থেকেই।
কীভাবে প্রযুক্তি দ্রুত পরিবর্তিত হয়েছে তার একটি উদাহরণ দেয়ার জন্য, আমাদের Shor’s Algorithm সম্পর্কে জানতে হবে, যাকে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এর মুকুটমণি বলা হয়। এটি কীভাবে ক্লাসিক্যাল নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করেছে? ক্লাসিক্যাল নিরাপত্তা এনক্রিপশন (RSA) একটি নির্দিষ্ট বড় সংখ্যার মৌল গুণনীয়ক (prime factors) খুঁজে বের করার উপর নির্ভর করে, তাই না?
সুতরাং যে কেউ যদি কোনও নির্দিষ্ট বড় সংখ্যার মৌল গুণনীয়ক খুঁজে পেতে পারে, সেই ব্যক্তি পৃথিবীর যেকোন (RSA) এনক্রিপশন ভাঙতে পারবে। এখন আপনি যদি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ক্লাসিক্যাল সুপার কম্পিউটারকে যথেষ্ট বড় একটি সংখ্যা দেন, তাহলে এমনকি কয়েক বিলিয়ন বছর চেষ্টা করার পরেও এটি মৌল গুণনীয়ক খুঁজে পেতে ব্যর্থ হবে। সেইজন্যই এটিকে ক্লাসিক্যাল নিরাপত্তা ব্যবস্থার এনক্রিপশন পদ্ধতি হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ক্ষেত্রে বিষয়টি এতটা কঠিন নয়। Shor’s Algorithm এর সাহায্যে তাত্ত্বিকভাবে যে কোনও বড় সংখ্যার মৌল গুণনীয়ক (প্রাইম ফ্যাক্টর) কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পাওয়া যেতে পারে। যদিও বর্তমানে কার্যকরভাবে এটি সম্ভব নয়। কারণ এখনো পর্যন্ত কোয়ান্টাম কম্পিউটারে যথেষ্ট পরিমাণের কিউবিট নেই।
বর্তমানে কিউবিটের সংখ্যা (১,১২১+ / ১৬০০+) এর মধ্যে সীমাবদ্ধ। তবে আইবিএম, গুগল এবং অন্যান্য কোয়ান্টাম কম্পিউটার ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিগুলো দ্রুত এগিয়ে চলেছে। কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এর সামর্থ্য আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে তারা কাজ করছে। ফলে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভাঙার মতো শক্তিশালী হয়ে উঠতে খুব বেশি সময় লাগবে না এমন আশঙ্কা রয়েছে।
এটি একটি বড় নিরাপত্তা হুমকি, তাই না?
প্রতিটি সমস্যার যেমন সমাধান রয়েছে, ঠিক তেমনি কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এর জন্যও রয়েছে কোয়ান্টাম-প্রতিরোধী নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ভবিষ্যতের জন্য নিরাপদ থাকতে এবং প্রস্তুত থাকতে, এই নিরাপত্তা ব্যবস্থার মূল বিষয়গুলো আমাদের জানা খুবই জরুরী।
প্রায় তিন বছর আগে ইউরোপ উপলব্ধি করে যে তারা কোয়ান্টাম ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের কাছে শীর্ষ স্থান হারিয়েছে। এই অবস্থান পুনরুদ্ধারের জন্য তারা দ্রুত ২ বিলিয়ন ইউরোরও বেশি অর্থ বিনিয়োগ করেছে এবং এখনও তা অব্যাহত রেখেছে। জাপান, মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর এবং এমনকি ভারতও কোয়ান্টাম কম্পিউটিং সক্ষমতার পথে এগিয়ে চলেছে।
কৃষি নির্ভর দেশ হিসাবে বাংলাদেশের জন্য কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে ফলন বৃদ্ধি রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ এবং কৃষি পণ্যের গুণমান উন্নয়নে এটি বিপ্লব ঘটাতে পারে। এ ছাড়াও, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং অণুকণা নকশা ও নিরীক্ষণে সহায়ক হতে পারে, যা বিভিন্ন শিল্পে প্রয়োগ করে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব।
কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের প্রভাব কেবল কৃষি ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। রসায়ন, অর্থনীতি, ক্রিপ্টোগ্রাফি, ঔষধ, জীববিজ্ঞান, মৌলিক পদার্থবিজ্ঞান ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর বিস্ময়কর প্রভাব রয়েছে। এ তালিকা আরও দীর্ঘ করা যায় রসায়ন, অর্থনীতি, ক্রিপ্টোগ্রাফি, ঔষধ, জীববিজ্ঞান, মৌলিক পদার্থবিজ্ঞান। এটা অনস্বীকার্য যে, সত্যিকারের ডিজিটাল বাংলাদেশে বিনির্মানে, আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বৃহত্তর পর্যায়ে সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তিতে কাজ শুরু করেছি। এই প্রযুক্তির সঙ্গে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এর গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
কোয়ান্টাম মেশিন লার্নিং এবং এআই এর সম্ভাবনা অত্যন্ত বিশাল। একে সাধারণ কথায় বলতে গেলে, এটি ক্লাসিক্যাল কম্পিউটিং মেশিন লার্নিং এবং এআই এর চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, কারণ…
বিশাল ও জটিল ডাটা সেট বিশ্লেষণ: কোয়ান্টাম কম্পিউটারগুলো অত্যন্ত দ্রুত গতিতে বিশাল ও জটিল ডাটা সেট বিশ্লেষণ করতে পারে। এটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন, জিনোমিক্স, আবহাওয়া পূর্বাভাস এবং আর্থিক মডেলিংয়ে বিপ্লব ঘটাতে পারে।
নতুন ও উন্নত অ্যালগোরিদম উদ্ভাবন: কোয়ান্টাম মেশিন লার্নিং নতুন ধরনের অ্যালগোরিদম উদ্ভাবনে সহায়ক হতে পারে, যা ক্লাসিক্যাল মেশিন লার্নিং পদ্ধতির চেয়ে আরও কার্যকর হবে।
অপ্টিমাইজেশনের সমস্যা সমাধান: কোয়ান্টাম মেশিন লার্নিং জটিল অপ্টিমাইজেশনের সমস্যাগুলি আরও দ্রুত ও সঠিকভাবে সমাধান করতে পারে। এটি লজিস্টিক্স, সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা এবং ফিনান্সিয়াল মার্কেটে বিশেষভাবে উপকারী হতে পারে।
এই কারণেই কোয়ান্টাম মেশিন লার্নিং এবং এআই এর দিকে আমাদের বিশেষ দৃষ্টি দেয়া উচিত। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য এই ক্ষেত্রে গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ করা ভবিষ্যতে অত্যন্ত লাভজনক হবে। এটি আমাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে এবং টেকসই উন্নয়ন অর্জনে সহায়ক হবে। এ ছাড়াও কোয়ান্টাম ইন্টারনেট হল সম্পূর্ণ নতুন দিগন্ত। স্মার্ট বাংলাদেশ হিসাবে এই প্রযুক্তি বিপ্লবে এগিয়ে থাকতে আমাদের এ সম্পর্কে জানতে হবে।
‘ ’
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং একটি নতুন প্রযুক্তি এবং এর সুবিধা লাভ করতে হলে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা জরুরি। কোয়ান্টাম-প্রস্তুত কর্মশক্তি গড়ে তোলার জন্য নীতিনির্ধারকদের আমি বিশেষভাবে আহবান জানাই, কারণ এটি খুবই সম্ভব। আমি পৃথিবীতে ৪৭তম ব্যক্তি যে ‘‘IBM Certified Associate Developer – Quantum Computation using Qiskit v0.2X’’ সার্টিফিকেট অর্জনকারী। আমার আত্মবিশ্বাস রয়েছে যে, বিজ্ঞান ও গণিতে মোটামুটি দক্ষতা রয়েছে, দ্বাদশ শ্রেণীর যেকোনো শিক্ষার্থীকে আমি প্রশিক্ষণ প্রদান করে আমার মতো সার্টিফিকেট অর্জন নিশ্চিত করতে পারবো।
এখানে উদাহরণ দেয়া যায়, যুক্তরাষ্ট্রের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য কোয়ান্টাম শিক্ষার একটি উদ্যোগ ((https://q12education.org /) নেয়া হয়েছে। এ উদ্যোগটি নেয়া হয়েছে হোয়াইট হাউজ এর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পলিসি এবং ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন দ্বারা গঠিত কনসোর্টিয়াম Q-12 মাধ্যমে। তারা যুক্তরাষ্ট্রে K-12 শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কোয়ান্টাম শেখার সরঞ্জাম সহজলভ করে তুলবে এবং আগামী প্রজন্মের কোয়ান্টাম নেতৃত্ব তৈরিতে ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশের নীতি নির্ধারকদের কেন কোয়ান্টাম কম্পিউটিং সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞান থাকা জরুরি?
বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট বাংলাদেশ হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমাদের ক্রমাগত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বব্যাপী চলমান প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলাতে হবে। কোয়ান্টাম কম্পিউটিং হল এমনই একটি নতুন প্রযুক্তি, যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটানোর সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, এর সুবিধা লাভ করতে এবং সম্ভাব্য সমস্যাগুলি এড়াতে নীতি নির্ধারকদের কোয়ান্টাম কম্পিউটিং সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞান থাকা জরুরি। এখানে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হলো….
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: কোয়ান্টাম কম্পিউটিং নতুন আবিষ্কার এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে গতিশীল করতে পারে। এটি বুঝতে পারলে নীতি নির্ধারকরা এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে একটি প্রতিযোগী অবস্থানে নিয়ে যেতে পারবেন।
কৌশলগত গুরুত্ব: বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এর কৌশলগত গুরুত্ব বুঝতে নীতি নির্ধারকদের জ্ঞান থাকা জরুরি।
সুযোগ সনাক্তকরণ: কোয়ান্টাম কম্পিউটিং কৃষি, ঔষধ, জ্বালানি, এবং তথ্যপ্রযুক্তি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের অগ্রগতি ত্বরানোর সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। নীতি নির্ধারকরা যদি এই প্রযুক্তি বুঝতে পারেন, তাহলে তারা এই সুযোগগুলি কাজে লাগানোর জন্য কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারবেন।
সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলা: কোয়ান্টাম কম্পিউটিং বর্তমান এনক্রিপশন পদ্ধতি ভাঙতে সক্ষম হতে পারে। নীতি নির্ধারকদের যদি এই ঝুঁকি সম্পর্কে জ্ঞান থাকে, তাহলে তারা কোয়ান্টাম-প্রতিরোধী এনক্রিপশন ব্যবস্থা গ্রহণের মতো প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিতে পারবেন।
দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা: কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এর সুবিধা লাভের জন্য দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন রয়েছে। নীতি নির্ধারকরা শিক্ষা ব্যবস্থায় কোয়ান্টাম কম্পিউটিং বিষয়ে কোর্স চালু করা এবং প্রশিক্ষণ কার্যक्रमের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য উদ্যোগ নিতে পারেন।
গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ: কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এখনও গবেষণা পর্যায়ে রয়েছে। নীতি নির্ধারকরা গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগের মাধ্যমে এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে পারেন।
গুরুত্বপূর্ণ চূড়ান্ত সারসংক্ষেপ
তথ্যের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষায় ব্যবহৃত বহুল প্রচলিত বর্তমান এনক্রিপশন পদ্ধতি, যেমন RSA/DH/ECC অ্যালগরিদমগুলো খুব শীগ্রই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে। কারণ কোয়ান্টাম কম্পিউটারগুলো প্রতিনিয়ত শক্তিশালী হয়ে ওঠছে, এই অ্যালগরিদমগুলো ভাঙতে প্রয়োজনীয় সক্ষমতা (কিউবিট সংখ্যা) অর্জন করতে আর সর্বোচ্চ ২ থেকে ৫ বছর সময় লাগবে। পৃথিবীর বেশিরভাগ প্রযুক্তি বিশ্লেষকগণ এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন। আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (এনএসএ) এর বিশেষজ্ঞগণ ২০২৪ সালের ২রা এপ্রিল, মতামত প্রকাশ করেছেন যে, ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এর প্রায়োগিক ব্যবহার ব্যাপকভাবে শুরু হবে।
আইবিএম এর কোয়ান্টাম নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান আমার সঙ্গে এক বৈঠকের সময় উল্লেখ করেন, গ্রাহক পর্যায়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা সিসকো সঙ্গে এক বৈঠকের সময় আইবিএম গ্লোবালের চেয়ারম্যান ভবিষ্যৎবাণী করেছেন যে, আগামী ৩ বছরের মধ্যে কোয়ান্টাম কম্পিউটারগুলো ব্যবহার করে সাইবার আক্রমণ শুরু হয়ে যাবে, যা তথ্য নিরাপত্তায় ব্যাপক হুমকি তৈরি করবে। তাই অ্যাপল ইতিমধ্যেই আইম্যাসেজ এর জন্য কোয়ান্টাম-প্রতিরোধী ক্রিপ্টোগ্রাফি তৈরি করেছে, এ ছাড়াও এনআইএসটি (https://www.nist.gov/ ) এই নিরাপত্তা হুমকি প্রতিরোধে ইতিমধ্যেই ৪টি কোয়ান্টাম নিরাপদ ক্রিপ্টো অ্যালগরিদম নিয়ে কাজ শুরু করেছে।
লক্ষ্য: বিক্রেতার প্রদত্ত সলিউশনের জন্য, যেখানে আমাদের ক্লায়েন্টদের সোর্স কোডগুলিতে অ্যাক্সেস নেই, সেখানে আমরা হ্যান্ডশেকিংগুলি সম্পন্ন করা হয়েছে তা বোঝার জন্য শেষ পয়েন্টগুলি পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হতে পারি এবং এর ফলে ডায়নামিক ক্রিপ্টোগ্রাফি বিশ্লেষণ, নীতি সমৃদ্ধকরণ এবং দুর্বলতা অগ্রাধিকার।
কোয়ান্টাম নিরাপদ করার প্রক্রিয়া সংযুক্ত করা হয়েছে আবিষ্কার: সমস্ত ক্লাসিক্যাল ক্রিপ্টোগ্রাফিক ফাংশন আবিষ্কার করতে যা তাদের নিজস্ব লিখিত সমাধানের সোর্স কোডে ব্যবহার করা হয়েছে, সেইসঙ্গে দুর্বলতা সনাক্তকরণ এবং একটি CBOM (সামগ্রীর ক্রিপ্টোগ্রাফিক বিল) প্রস্তুত করা।
রূপান্তর: কোয়ান্টাম নিরাপদ প্রতিকারের চটপটে রূপান্তর, সেইসাথে কোয়ান্টাম নিরাপদ প্রতিকার প্যাটার্ন (প্রক্সি, টিএলএস, ভিপিএন ইত্যাদি), এনক্রিপশন, কী এবং Certificate management ইত্যাদি।
এমতাবস্থায় জরুরি বাস্তবতা এটাই যে আমাদেরকে খুব দ্রুতই কোয়ান্টাম নিরাপত্তা হুমকি প্রতিরোধের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে এবং তা আগামী ২ থেকে ৫ বছরের মধ্যেই। এখন প্রশ্ন হলো, এতো অল্প সময়ে কিভাবে তা করা যেতে পারে? এজন্য আমাদের প্রয়োজন সামগ্রিক ও সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা, আমাদের প্রয়োজন স্মার্ট বাংলাদেশ কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ইনোভেশন, গবেষণা ও কর্মশক্তি কেন্দ্র (SBQIRC) গঠন করা। তাহলেই আমরা প্রযুক্তির এই যুগান্তকারী পরিবর্তন (Paradigm Shift) এর সঙ্গে নিজেদেরকে অভিযোজিত করে, জাতি হিসেবে নিজেদেরকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে সমর্থ হবো।
লেখক: মুজতবা সাত্তার- আইবিএম সার্টিফাইড অ্যাসেসিয়েট ডেভেলপার (Quantum Computation using Qiskit v0.2X)। প্রয়োজনে: https://www.linkedin.com/in/anonto/