ডিজিটাল ব্যাংকের দৌড়ে কে নেই?
ক.বি.ডেস্ক: ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানির মধ্যে। একক কিংবা জোটবদ্ধভাবে ডিজিটাল ব্যাংকের মালিকানা পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েব পোর্টালে ৫২টি আবেদন জমা পড়েছে। দেশের ইতিহাসে ব্যাংকের জন্য এত আবেদন আর কখনো পড়েনি। আবেদনকারীদের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক, বীমা প্রতিষ্ঠান, মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়াও এই দৌড়ে নাম লিখিয়েছে বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটরেরা, রাইড শেয়ারিং, ফুড ডেলিভারি, তথ্য প্রযুক্তি সেবাদানকারী, ওষুধ কোম্পানিও রয়েছে।
ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে করা আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রযুক্তির মাধ্যমে আর্থিক সেবার এ উদ্যোগে দক্ষতা, পরিপূর্ণ অংশীদারিত্ব আর সাইবার সিকিউরিটির মতো বিষয়গুলোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে গ্রাহক পর্যন্ত সব জায়গায় স্বচ্ছতার পাশাপাশি গ্রাহকদের আস্থা বাড়াতে জোরেসোরে কাজ করতে হবে।
ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পাওয়ার দৌড়ে কে নেই? মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে আছে তথ্য প্রযুক্তি সেবাদানকারী উদ্যোগ, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, এমনকি ওষুধ কোম্পানি ও ঢেউশিট উৎপাদনকারী কোম্পানিও। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, আবেদনগুলো চূড়ান্ত যাচাই-বাছাই চলছে।
ডিজিটাল ব্যাংকে বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে ‘ডিজি টেন পিএলসি’ নামে দশ ব্যাংকের জোট। সিটি ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংক মিলিয়ে এই দশ ব্যাংকের জোট। এই ১০টি ব্যাংক সব মিলিয়ে ১২৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বিনিয়োগের কথা জানিয়েছে।
ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের আবেদন করেছে জোটবদ্ধভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী, রূপালী, অগ্রণী ও জনতা ব্যাংক। ইউসিবি’র মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী কোম্পানি উপায়ের নেতৃত্বে ‘উপায় ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি’ নামে জোট আবেদন করেছে। এই জোটে আছে বেসরকারি ব্যাংক এনআরবিসি ও মেঘনা ব্যাংক।
আবেদনকারীদের মধ্যে আছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি আরামিট, যারা মূলত সিমেন্টের ঢেউশিট উৎপাদন করে। আছে ওষুধ খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবাদানকারী কোম্পানি জেনেক্স ইনফোসিস, মোবাইল ফোন অপারেটর বাংলালিংক। এ ছাড়া ব্র্যাক ব্যাংক তাদের প্রতিষ্ঠান বিকাশ ডিজিটাল ব্যাংকের ৫১ শতাংশ শেয়ার পেতে বিনিয়োগ করার কথা জানিয়েছে।
আবেদনের তালিকায় আছে রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান পাঠাও-ও। তাদের প্রস্তাবিত ব্যাংকের নাম ‘পাঠাও ডিজিটাল ব্যাংক’। সম্প্রতি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স পেয়েও তা ফিরিয়ে দিয়ে এখন ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য আবেদন করেছে মোবাইলে আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান নগদ। প্রতিষ্ঠানটি তাদের ব্যাংকের প্রস্তাবিত নাম দিয়েছে নগদ ডিজিটাল ব্যাংক।
নগদ টাকার ব্যবহার কমিয়ে এনে ও লেনদেন আরও সহজ করতে সরকারের ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’ গড়ার উদ্যোগে ডিজিটাল ব্যাংক চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বেশ কয়েক বছরের প্রস্তুতি শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক লাইসেন্সের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু করে গত জুন থেকে।
ডিজিটাল ব্যাংকে শাখা, উপশাখা, এটিএম বুথ বা কোনো স্থাপনা নেই। গ্রাহককেও যেতে হবে না ব্যাংকের কোন শাখায়। শুধু মোবাইল ফোনে অ্যাপ ব্যবহার করেই ২৪ ঘন্টা লেনদেন করা যাবে। মোবাইল বা অ্যাপ ব্যবহার করে গ্রাহকরা ডিজিটাল ব্যাংকে লেনদেন করতে পারবেন। গ্রাহকদের সশরীরে ব্যাংকের কোনো শাখায় যেতে হবে না। জাতীয় পরিচয়পত্রসহ নিজস্ব তথ্যাদি আপলোড করে গ্রাহক হিসাব খুলতে পারবেন। একইভাবে ঋণ নেয়ার জন্যও প্রয়োজনীয় নথিপত্র আপলোড করে ঋণের আবেদন করতে পারবেন।
যারা বেতন-ভাতা বা ব্যবসার টাকা গ্রহণ করবেন, তারা অনলাইনে নিজের হিসাব নিতে পারবেন। অন্য ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবহার করেও টাকা জমা করা যাবে। আবার অন্যদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠিয়ে দেয়ার পাশাপাশি অন্য ব্যাংকের এটিএম বুথ বা এজেন্টদের সেবা ব্যবহার করে নগদ অর্থ উত্তোলন করা যাবে। ডিজিটাল ব্যাংক ছোট আকারের ঋণ দিতে পারবে, বড় বা মাঝারি শিল্পে কোনো ঋণ দিতে পারবে না। বৈদেশিক বাণিজ্যের লেনদেনের জন্য ঋণপত্রও খুলতে পারবে না এসব ব্যাংক। প্রযুক্তিনির্ভর সেবা হওয়ায় এসব ব্যাংকের কোনো কোনো সেবা দিন রাত ২৪ ঘণ্টাই পাওয়া যাবে।