মাস্কের ইন্টারনেট দেশীয় উদ্যোক্তাদের জন্য “পেটে লাথি”: আইএসপিএবি সভাপতি
ক.বি.ডেস্ক: সম্প্রতি ইলন মাস্কের স্টারলিংক স্যাটেলাইটের ইন্টারনেট সেবা বাংলাদেশে আসছে মর্মে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। স্পেস এক্স’র সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্টারলিংকের গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স ম্যানেজার জোয়েল মেরিথ ও গ্লোবাল লাইসেন্সিং অ্যান্ড অ্যাক্টিভেশন ম্যানেজার পার্নিল উর্ধাওরেস বাংলাদেশ সফর করেছেন। এই সফরে তারা আইসিটি প্রতিমন্ত্রী, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং বিটিআরসির অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তির সঙ্গে বৈঠক করেন এবং ইন্টারনেট সেবাদানের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন ডিভাইস দেন।
সফরে তারা কয়েকটি জায়গায় ইন্টারনেট সংযোগ এবং ডাউনলোড স্পিড দেখান।পরীক্ষাকালীন সময়ে ইন্টারনেট ডাউনলোড স্পিড ৫০০ এমবিপিএস পর্যন্ত রেকর্ড করা হয় বলে জানান বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. শাহজাহান মাহমুদ।
ইলন মাস্কের ইন্টারনেট দেশে চালু হওয়া প্রসঙ্গে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশনস অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) এর সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, দেশে ইলন মাস্কের ইন্টারসেবা চালু হলে দেশীয় উদ্যোক্তারা মুখ থুবড়ে পড়বে। যেখানে আমাদের মাসিক নূন্যতম বিল ৫০০ টাকা প্রদানই অনেক কষ্টসাধ্য সেখানে অন্যান্য দেশের মতো ব্যবহারকারীদের ১০০ ডলার পরিশোধ করতে হবে।
ইমদাদুল হক বলেন, আমরা দূর্গম জায়গাগুলোতে ইন্টারনেট সরবরাহের চেষ্টা করে যাচ্ছি। তা ছাড়া দূর্গম এলাকায় ইন্টারনেট সেবা পৌঁছাতে লোকাল অন্টারপ্রেনিউররাই যথেষ্ট। আমাদের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মাধ্যমেও সেবা পৌছানোর জন্য কাজ করছে সরকার। তাই মাস্কের ইন্টারনেট সেবার কোনো প্রয়োজনীয়তা দেখছিনা। ভারত ও পাকিস্তান এখনো মাস্কের সেবাকে অনুমোদন করেনি। যদি মাস্কের ইন্টারনেট সেবাকে দেশে অনুমোদন দেয়া হয় তাহলে দেশের সম্ভাবনাময় এই খাতটি পুরোপুরি বিদেশীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে, যা দেশীয় উদ্যোক্তাদের “পেটে লাথি” মারার মতো। খাত সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এই বিষয়ে আমরা অবশ্যই সরকারের সঙ্গে বসবো। তারপর, আলোচনা সাপেক্ষে পরবর্তী করনীয় ঠিক করবো।
গত বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) সন্ধ্যায় ঢাকায় বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের কার্যালয়ে ইলন মাস্কের মহাকাশ বিষয়ক সংস্থা স্পেসএক্সের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবা সম্পর্কে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এর নিকট একটি ডিজিটাল উপস্থাপনা পেশ করেছে। বিটিআরসি‘র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার ও বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ, বিটিআরসির কমিশনারবৃন্দ এবং মহাপরিচালকবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রচলিত ইন্টারনেট সেবা মুঠোফোন টাওয়ার ও সাবমেরিন কেবল নির্ভর হলেও স্টারলিংক কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা দেয়। স্টারলিংক এলে বিরূপ আবহাওয়ায় কতটা কাজ করবে, ডিভাইসগুলোর চুরি রোধ, সেবার বিনিময়ে ডলারের পেমেন্টের বিষয়গুলো কী হতে পারে সেসব বিষয় উপস্থাপনায় উঠে আসে। পাশাপাশি জননিরাপত্তার কারণে আইনি নজরদারির বিষয়েও আলোচনা হয়। ইন্টারনেট সেবার মাধ্যমে জনগণের কাছে কী যাচ্ছে, তাতে সরকারের নজর রাখার বিষয় ইত্যাদি উপস্থাপনাকালে উঠে আসে। দেশে ইন্টারনেট সেবার ক্ষেত্রে সংযোগগুলোর গেটওয়েতে সরকারের নজরদারি প্রযুক্তি বসানো থাকে। জাতীয় স্বার্থে সরকারের এই নজরদারির বিষয়, দেশের আইন, উদ্দেশ্যেসহ বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপনকালে উঠে আসে।
স্টারলিংককে বাংলাদেশে আসতে টেলিযোগাযোগখাতের নিয়ন্ত্রণকারি সংস্থা বিটিআরসি’র লাইসেন্স প্রয়োজন হবে। এই ক্ষেত্রে আইনি নজরদারিতে প্রযুক্তিগত ও নীতিগত বিষয় রয়েছে। এ ছাড়াও যেসব অঞ্চলের জন্য এই সেবা সেখানকার মানুষের খরচ বহনের সক্ষমতা, ডিজিটাল নিরাপত্তা, কমিউনিটি স্টান্ডার্ডসহ ইত্যাদি বিষয় জড়িত।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্যাটেলাইট কোম্পানিরই সক্ষমতা আছে দুর্গম অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা দেয়ার। স্টারলিংক এলে কী উপকার হবে, স্টারলিংকের সেবা দেশের বিদ্যমান কাঠামোকে কতটা চ্যালেঞ্জ করবে এগুলোও বিবেচ্য বিষয়। স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা হওয়ায় স্টারলিংক ব্যবহার করার জন্য অ্যান্টেনার প্রয়োজন হয়। যা অনেকটা ছোট আকারের ডিশের মতো। এই অ্যান্টেনা দিয়ে ভবনের যে কোনো প্রান্তে ইন্টারনেট সিগন্যাল পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানী লি. এর চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ জানান, পরীক্ষামূলক অনুমোদন সাপেক্ষেই দেশে মাস্কের ইন্টারনেট সেবার ডাউনলিংক করা হয়েছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার জানান, যাচাই-বাছাইয়ের পর আমরা ঠিক করবো স্টারলিংক এর স্যাটেলাইট আমরা ব্যবহার করবো কি না।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী গণমাধ্যমকে জানান, তিন মাস পর স্টারলিংক ইন্টারনেট ব্যবহারের বিষয়ে একটি চুক্তি হতে পারে।
তথ্যসুত্র: www.bvnews24.com