স্মার্ট বাংলাদেশ এর আগামীর আয়োজন কি হতে পারে?

স্মার্ট বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ যা বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পথে একটি প্রগতিশীল উদ্যোগ। আগামীতে স্মার্ট বাংলাদেশ এর আয়োজনে প্রয়োজন হবে, যেখানে স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়া যাবে। ভবিষ্যতে যেসব দেশ প্রযুক্তি ব্যবহারে এগিয়ে থাকবে তারাই ব্যবসা-বাণিজ্য, আন্তর্জাতিক লেনদেন এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ এর হাত ধরে দেশকে এগিয়ে নিতে হলে বাংলাদেশকে প্রযুক্তি ব্যবহারে অনেক উন্নত হতে হবে এবং সেই উদ্যোগ সফল করতে হলে স্মার্ট বাংলাদেশ এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী এক কর্মপরিকল্পনা। দেশকে প্রযুক্তিগতভাবে এগিয়ে নেয়ার জন্য স্মার্ট বাংলাদেশ নামের স্লোগানের কী প্রয়োজন, প্রয়োজন অবশ্যই আছে, স্মার্ট বাংলাদেশ তো শুধু একটি স্লোগান নয়, আগামী দুই যুগ ধরে চলবে এমন এক বিশাল কর্মযজ্ঞের নাম স্মার্ট বাংলাদেশ।

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে চারটি মূলভিত্তি নির্ধারণ করা হয়েছে এবং এগুলো হচ্ছে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি। একটি স্মার্ট বাংলাদেশ সম্প্রসারণের ভূমিকা হতে পারে বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রযুক্তির ব্যবহার, যেমন: স্মার্ট সিটি পরিচালনা, জল ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য সেবা, বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রযুক্তি শিক্ষা এবং তথ্য প্রযুক্তির বিভিন্ন ব্যবহার করা। স্মার্ট বাংলাদেশে আগামীর আয়োজনে কি থাকতে পারে কিছু উপস্থাপন করার চেষ্টা করবো। লিখেছেন মো. সুমন মিয়া…..
‘স্মার্ট’ শব্দটি ইংরেজি। এর শাব্দিক অর্থ বুদ্ধিমান। ইংরেজিতে যদি বলি Stylish অথবা fashionable, যখন আমরা কোন প্রযুক্তি বা পণ্যকে ‘স্মার্ট’ বলি, তখন তা এমন একটি পণ্য বা প্রযুক্তি যা, প্রযুক্তিগতভাবে সুবিধাজনক, সহজ এবং উন্নয়নশীল হয়।
‘স্মার্ট দেশ’ হলো একটি সম্পূর্ণ প্রযুক্তিগত উন্নয়নশীল দেশ যেখানে প্রযুক্তি ব্যবহার করে জনগণের জীবন ও দৈনন্দিন কাজ সহজ ও সুবিধাজনক করা হয়। একটি স্মার্ট দেশ অনেকগুলো উন্নয়নশীল প্রকল্প সম্পাদন করে যেমন: সিস্টেম, সহজবোধ্য এবং আধুনিক প্রযুক্তিগত সুবিধা সরবরাহ করে। স্মার্টফোন, স্মার্টটিভি, স্মার্টহোম, স্মার্টওভেন ইত্যাদি। সংক্ষেপে বলা যায় যে স্মার্ট একটি পণ্য বা প্রযুক্তি হলো যেটি আমাদের জীবনকে সহজ এবং সুবিধাজনক করে তোলে এবং তার ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা আরও সমৃদ্ধ ও উন্নয়নশীল হতে পারি।
স্মার্ট বাংলাদেশ এর আগামীর আয়োজন কি হতে পারে?
স্মার্ট বাংলাদেশ প্রকল্প একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, যা সম্পূর্ণ একটি স্বপ্ন হতে পারে যদি সপ্ন সত্যি হয় তাহলে কি হবে আগামীতে এবং কি ঘটনা ঘটতে পারে।
বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং স্থানীয় পার্টনার সহযোগিতায় স্মার্ট সিটি উন্নয়ন হবে। একটি আধুনিক শহর যা সম্পূর্ণ প্রযুক্তির ভিত্তিতে হবে; স্মার্ট ফার্মিং এবং এগ্রোটেকনোলজি ব্যবহার করে কৃষি উন্নয়ন হবে। এটি বাংলাদেশের কৃষি খাতে একটি প্রাথমিক সেবা যা কৃষকদের উন্নয়নের সম্ভাবনার দিকে নজর চলে আসবে।
স্মার্ট হোম সিস্টেম যা ব্যক্তিগত জীবনে প্রযুক্তির ব্যবহার সহজ করে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে লাইফস্টাইল এবং কর্মসংস্থান উন্নয়ন করা হবে; স্মার্ট ক্রিকেট স্টেডিয়াম যা ক্রিকেট উন্নয়নে প্রযুক্তি ব্যবহার বেড়ে যাবে। এতে ক্রিকেট এবং সব ধরনের খেলার অভিজ্ঞতা বেড়ে যাবে। স্মার্ট মানব সম্পদ ব্যবস্থা যা স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা এবং কারগরী উন্নয়ন ঘটবে এবং সেই সঙ্গে কর্মসংস্থানে আর্থিক সম্পদের উন্নয়নও হবে।
স্মার্ট কৃষি যা কৃষি উন্নয়নে প্রযুক্তি ব্যবহার করে। কৃষিতে উন্নয়ন, পোকামাকড় সংস্কার এবং ফসল পরিচর্যার উন্নয়নে সহায়তা হবে; স্মার্ট পারিবারিক পরিকল্পনা যা পারিবারিক জীবনের উন্নয়নে প্রযুক্তি ব্যবহার করে জীবন মান উন্নত করা যাবে; স্মার্ট শিক্ষা যা শিক্ষা উন্নয়নে প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইন শিক্ষা, পাঠক্রম, শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিটা আরও উন্নত হবে; স্মার্ট সিটি পরিকল্প যা শহরের উন্নয়নে প্রযুক্তি ব্যবহার করে শহরের পরিবেশ উন্নয়ন হবে যা বিশ্ব মানের হবে।
স্মার্ট বাজার যা দৈনন্দিন কার্যক্রমের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিক্রয়ের প্ল্যাটফর্ম, ব্যবসায়িক উন্নয়ন এবং বিতরণ নির্ভরযোগ্যতার উন্নয়ন হবে; স্মার্ট কৃষি যা কৃষি উন্নয়নে প্রযুক্তি ব্যবহার করে চাষাবাদ এবং পশুপালন উন্নয়ন ঘটবে; স্মার্ট হেলথকেয়ার যা স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়ন হবে; স্মার্ট শিক্ষা প্রযুক্তির ব্যবহার যা শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়ন হবে; স্মার্ট নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা যা ইন্টারনেট সংযোগ উন্নত হবে; স্মার্ট বাংলাদেশ প্রকল্পে পরিবেশের উন্নয়ন হবে; যোগাযোগ ও ইন্টারনেটের সহজ ব্যবহার; স্মার্ট পাবলিক ট্রান্সপোর্টেশন উন্নয়ন এবং স্মার্ট মুদ্রা ব্যবস্থার উন্নয়ন।
একটি স্মার্ট দেশের জনগণ রাষ্ট্র থেকে কি পেতে পারে?
একটি স্মার্ট দেশের জনগণ রাষ্ট্র থেকে একটি নিরাপদ ও সুবিধাজনক জীবন পেতে পারে যেখানে প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন সেবা ও সুবিধা উপলভ্য হবে। উদাহরণস্বরূপ, স্মার্ট দেশে সকলের জন্য দোকান থেকে প্রযুক্তিগত মেশিন ব্যবহার করে সহজেই কেনাকাটা করা যাবে। এ ছাড়াও স্মার্ট দেশে মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে সেবা ও সুবিধা উপলভ্য করা যাবে, যেমন অনলাইন শিক্ষা, ডিজিটাল মেডিকেল সেবা, বিল পরিশোধ ইত্যাদি। সেইসঙ্গে স্মার্ট দেশে বিভিন্ন সেবা ও সুবিধা উপলভ্য করার জন্য নেটওয়ার্ক ইনফ্রাস্ট্রাকচার উন্নয়ন হলে এর সম্ভবত সমস্ত সুবিধা জনগণের পক্ষে থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন আগামী ২০৪১ সাল নাগাদ আমাদের দেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশের পর স্মার্ট বাংলাদেশের পরিকল্পনা এই শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্ত, কেননা উন্নত বিশ্বের দেশগুলো তো এরই মধ্যে স্মার্ট দেশে রূপান্তরিত হয়েছে, এমনকি অনেক উন্নয়নশীল দেশও স্মার্ট দেশে রূপান্তরের পথে অনেক দূর এগিয়ে গেছে, তাই দেশের উন্নতি এবং অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে হলে দেশকে অনেকটাই উন্নত বিশ্বের কাছাকাছি নিয়ে যেতে হবে।
স্মার্ট বাংলাদেশের আগামীতে কোনও বিশেষ আয়োজন হতে পারে যা বিভিন্ন প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রের সেমিনার, ওয়ার্কশপ এবং প্রদর্শনীসহ অন্যান্য কার্যক্রম হাতে নিয়ে ভবিষ্যত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে আমাদেরকেও কাজ করতে হবে।
লেখক: মো. সুমন মিয়া- নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার (বিডিকম অনলাইন লিমিটেড); লিস্টেট মাইক্রোটিক টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট