প্রতিবেদন

স্মার্ট টেকনোলজিসের হাত ধরে বাংলাদেশেই তৈরি হবে অনার স্মার্টফোন

ভূঁইয়া মোহাম্মদ ইমরাদ (তুষার): বাংলাদেশের প্রযুক্তি অঙ্গনে বড়সড় অগ্রগতির ঘোষণা, বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি ব্র্যান্ড অনার এবার বাংলাদেশে স্মার্টফোন উৎপাদন কারখানা গড়তে আনুষ্ঠানিকভাবে এগিয়ে আসছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তিপণ্য আমদানীকারক, পরিবেশক ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান স্মার্ট টেকনোলজিস (বিডি) লিমিটেড- এর সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে কালিয়াকৈরের স্মার্ট হাইটেক পার্কে ‘অনার হাইটেক ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট’ নির্মাণের পথ খুলে গেল।

সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন অনার এর সাউথ ইস্ট এশিয়ার প্রেসিডেন্ট জর্জ ঝাও এবং স্মার্ট টেকনোলজিস (বিডি) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অনার- এর হাইটেক স্মার্টফোন ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট গড়ে তোলার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হলো। এই উদ্যোগ শুধু নতুন কারখানা নয়, বরং বাংলাদেশের প্রযুক্তি শিল্পকে জাগিয়ে তোলা একটি মাইলফলক, যার মাধ্যমে দেশে আসছে বহুল প্রত্যাশিত বিনিয়োগ, তৈরি হবে দক্ষ কর্মীবাহিনী এবং সবার জন্য আরও সাশ্রয়ী মূল্যে আন্তর্জাতিক মানের স্মার্টফোন।

বাংলাদেশে তৈরি হবে অনার স্মার্টফোন!
হাইটেক পার্কে নির্মিতব্য এই অত্যাধুনিক কারখানায় অনার- এর জনপ্রিয় স্মার্টফোনগুলোই তৈরি হবে বাংলাদেশের মাটিতে। স্থানীয় বাজারে পাওয়া যাবে আরও প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে এবং ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ মানের নিশ্চয়তায়। এটি দেশের স্মার্টফোনপ্রেমীদের জন্য নিঃসন্দেহে দারুণ একটি খবর। স্থানীয় সক্ষমতা জোরদার করাসহ দেশের ক্রেতাদের জন্য উন্নত মোবাইল প্রযুক্তি সহজলভ্য করতে অত্যাধুনিক এ কারখানা স্থাপন করবে অনার।

হাজারও মানুষের কর্মসংস্থান, তৈরি হবে দক্ষ টেক ওয়ার্কফোর্স
এই উদ্যোগ কেবল ডিভাইস উৎপাদন নয়, এটি বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য বিশাল সম্ভাবনার দরজা খুলে দিচ্ছে। ইলেকট্রনিক্স অ্যাসেম্বলি, কোয়ালিটি কন্ট্রোল, আধুনিক ম্যানুফ্যাকচারিং টেকনোলজি প্রতিটি ক্ষেত্রেই তরুণরা হাতে–কলমে শিখবে অত্যাধুনিক টেক স্কিল। তৈরি হবে ভবিষ্যতের একটি যোগ্য, দক্ষ ও আন্তর্জাতিকমানের কর্মীবাহিনী। একই সঙ্গে কয়েক হাজার মানুষের জন্য নতুন আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

সাশ্রয়ী মূল্যে বিশ্বমানের অনার ডিভাইস
দেশেই উৎপাদন শুরু হলে অনার তার পণ্যের মূল্য আরও কম রাখতে পারবে। এর ফলে বাংলাদেশের মানুষ বৈশ্বিক মানের স্মার্টফোন হাতের নাগালেই পাবে। এটিই প্রকৃত ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি, যেখানে প্রযুক্তি বিলাসিতা নয়, সবার জন্য সহজলভ্য। ২০২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে যাত্রা করে অনার। অনার এর বৈশ্বিক লক্ষ্য, অনার আলফা প্ল্যানের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ, ক্রেতাকেন্দ্রিক উদ্ভাবনের পাশাপাশি বিশ্বুজুড়েই সকল ক্রেতাদের জন্য জন্য নতুন সুযোগ তৈরির ওপর। বাংলাদেশে নতুন এ কারখানা স্থাপন যৌথ প্রবৃদ্ধি ও অংশীদারিত্ব নিয়ে ব্র্যান্ডটির কার্যক্রমকে আরও দৃঢ় করবে।

জর্জ ঝাও বলেন, “বাংলাদেশের বাজার অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ও দ্রুতবর্ধনশীল। এই অংশীদারিত্বের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে ডিভাইস উৎপাদনের করে আমরা অনারের বৈশ্বিক এআই উদ্ভাবনকে বাংলাদেশের আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাই। এই উদ্যোগ আমাদের স্থানীয় প্রতিভার বিকাশ, উৎপাদন এবং স্থানীয় পর্যায়ে উচ্চমানের ডিভাইস সরবরাহ নিয়ে অঙ্গীকারেরই প্রতিফলন।”

মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, “এটি বাংলাদেশকে ম্যানুফ্যাকচারিং হাবে রূপান্তরের বড় পদক্ষেপ। এই উদ্যোগ বাংলাদেশের প্রযুক্তিখাতে একটি বড় পরিবর্তনের সূচনা করবে। এটি শুধু একটি চুক্তি নয়; বরং দেশকে শক্তিশালী টেক ম্যানুফ্যাকচারিং কেন্দ্রে রূপান্তর করার অঙ্গীকার। এই উৎপাদন সুবিধা নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে, স্থানীয় সক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে এবং দেশের প্রযুক্তিগত অগ্রযাত্রায় অবদান রাখবে। এ অংশীদারিত্বের মাধ্যমে আমরা দেশেই বিশ্ব মানসম্পন্ন পণ্য তৈরির অপেক্ষায় রয়েছি। সামনে আরও চ্যালেঞ্জ আছে, কিন্তু আমরা প্রস্তুত। এই পথে এগিয়ে যেতে সবার সমর্থনই সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।”

বাংলাদেশের প্রযুক্তি শিল্পে শুরু হলো নতুন অধ্যায়
অনার-এর এই বিনিয়োগ স্মার্টফোন বাজারে যেমন ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে, তেমনি দেশের টেক ইকোসিস্টেমকে আরও শক্তিশালী করবে। বাংলাদেশের প্রযুক্তিখাতে বড় মাত্রার এই উদ্যোগ কেবল নতুন বিনিয়োগই নয়, বরং দেশের স্মার্টফোন শিল্পকে আঞ্চলিক উৎপাদনকেন্দ্র হিসেবে এগিয়ে নেয়ার সম্ভাবনা তৈরি করবে। বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার একটি সম্ভাবনাময় উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে ওঠে আসছে, এই চুক্তি সেই যাত্রার বড় ভিত্তি। এর মাধ্যমে উপকৃত হবে দেশের ক্রেতারা। বৈশ্বিক উদ্ভাবন ও স্থানীয় সক্ষমতার সমন্বয়ের মাধ্যমে এ কারখানা থেকে উৎপাদিত ডিভাইসগুলো ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেবেল যুক্ত হবে।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *