সাম্প্রতিক সংবাদ

স্বার্থান্বেষী কমিউনিকেশন মাফিয়াদের রোষানলে পড়েছি: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব

ক.বি.ডেস্ক: বিগত সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক লং ডিসট্যান্স টেলিকমিউনিকেশন সার্ভিসেস (আইএলডিটিএস) নীতি চালু করে। এই নীতি মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের (এমএনও) কার্যক্রমের সুযোগকে ব্যাপকভাবে সীমিত করে। তৎকালীন আওয়ামী সরকার মূলত রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে একের পর এক লাইসেন্স প্রদান করে, যারা এখনও সক্রিয় রয়েছে। এসব পথ বন্ধ করে টেলিকম পলিসি ২০২৫ এর মাধ্যমে প্রতিটি স্তরের সুবিধা গ্রাহকদের কাছে দৃশ্যমান করা হচ্ছে। তাই নতুন করে পলিসি করতে গিয়ে কতিপয় মিডিয়া এবং স্বার্থান্বেষী কমিউনিকেশন মাফিয়াদের রোষানলে পড়েছি।

আজ সেমাবার (৭ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত জরুরী সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এ সব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে আইসিটি সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, টেলিকম সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. জহিরুল ইসলাম, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, “বিটিআরসি এবং ডাক টেলিযোগাযোগ বিভাগ বর্তমানে একটি নতুন প্রজন্মের টেলিকম লাইসেন্স পলিসি নিয়ে কাজ করছে, যা আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) এবং জিএসএমএ সহ প্রত্যেক আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ সংস্থার প্রধানতম নির্দেশনা। এখানে বিশ্বে অপ্রচলিত এরকম লাইসেন্সসমূহকে ডিসকন্টিনিউ করার এবং বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ লাইসেন্সকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার একটা চেষ্টা হচ্ছে। বিটিআরসির মনিটরিংয়ের অক্ষমতার কারণে ভয়েস ট্র্যাফিকের আদান-প্রদান বা সুইচিং এবং রাউটিং পরিচালনাকারী ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ অপারেটররা (আইসিএক্স) বিগত সময়ে চুরি-জালিয়াতি করতে সক্ষম হয়েছে বলে মনে করছি।”

‘টেলিকম নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং রিফর্ম পলিসি-২০২৫’ প্রসঙ্গে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, “নতুন খসড়ায় সুস্পষ্ট উত্তর রয়েছে। এসএমই’দের প্রটেকশন করা, আইএসপিদের যথাসম্ভব ডিরেগুলেট করে লাইট টাচ লাইসেন্সের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। আমরা তাদেরকে (আইএসপি) পুরোপুরি ডিরেগুলেট চেয়েছিলাম, কিন্তু তারাই (আইএসপি) আবার এটা চাচ্ছে না। কারণ, তারা (আইএসপি) লাইসেন্সের বিপরীতে ব্যাংক থেকে ঋণের সুবিধাটা পেতে চায়। সেজন্য তারা পুরোপুরি ডিরেগুলেট হতে চায় না। তাদের অনুরোধেই আমরা একটা লাইট টাচ লাইসেন্সের আওতায় তাদের এনেছি। এ ছাড়া, ডেটা সেন্টার, ক্লাউড পলিসি থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে আমরা ডিরেগুলেশনে গিয়েছি।”

“আমরা সার্ভিস লেয়ারে, ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার লেয়ারে, ইন্টারন্যাশনাল লেয়ারে- সবখানেই তাদের বড় ধরনের ক্যাপিং করার চেষ্টা করেছি। ইন্টারন্যাশনাল লেয়ারে বলা হয়েছে সর্বোচ্চ ৪৯ শতাংশ, ন্যাশনাল লেয়ারে সর্বোচ্চ ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশ মালিকানা রাখতে পারবে, এটা এখনও নেগোশিয়েবল। আমরা ৫৫ শতাংশ প্রস্তাব করেছি, বিদেশিরা আরও বাড়ানোর জন্য পুশ করছে। দুটো অপারেটর হান্ড্রেড পার্সেন্ট বিদেশি হওয়া সত্ত্বেও আমরা সেখানে বলেছি, ৮০ শতাংশের বেশি মালিকানা রাখতে পারবে না বিদেশিরা।”

আইসিএক্স স্তর না থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ডেটা স্ট্রাকচারের অনেকগুলো স্তরে সামান্য বিনিয়োগ করে, সামান্য ভ্যালু অ্যাডিশন করে যারা অনেক অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিল, তাদেরকে আমরা বাদ দেয়ার বিবেচনা করছি। অর্থাৎ, সামান্য কিছু টাকার ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেপ্লয় করে যারা অনেক টাকা সরিয়ে নিচ্ছিল এই খাত থেকে, আমরা সেই লাইসেন্সগুলো যৌক্তিকভাবে রিমুভ করার চেষ্টা করেছি। বাংলাদেশে যে পলিসি আছে এ ধরনের পলিসি বিশ্বের কোথাও নেই। আইসিএক্স নামে যে লাইসেন্সগুলো আছে বা নিক্স নামে একটা লাইসেন্স আছে, এই ধরনের লাইসেন্স বিশ্বের কোথাও নেই।

“এগুলো হয়েছে ২০০৭-২০০৮ সময়ে বিটিআরসির মনিটরিংয়ের অক্ষমতা ছিল, সেই কারণে কোম্পানিগুলো চুরি-জালিয়াতি করেছে। সেগুলোকে অজুহাত করে কয়েক কোটি টাকার যন্ত্রপাতি স্থাপন করে কয়েকশ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। সে ধরনের স্তরগুলো যারা কোনো ভ্যালু অ্যাড করে না, তাদের সরিয়ে দিয়ে আমরা লাইসেন্সিং স্ট্রাকচারটা আধুনিক করছি। আইসিএক্স স্তর থাকার জন্য গ্রাহকের প্রতি কলে প্রতি মিনিটে ৫ পয়সা করে খরচ বেড়ে যায়। আমরা মোবাইল অপারেটরদের অনুরোধ জানাব যেন তারা গ্রাহকের কলের রেট এডজাস্ট করেন।”

নতুন নীতিমালার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, “২০১৫ সাল থেকে আইটিইউ এবং জিএসএমএ একটি সহজ লাইসেন্সিং ব্যবস্থা নিয়ে বাংলাদেশের সরকারকে ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে চাপ দিচ্ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার সেটা করেনি। যেহেতু আমাদের সংস্কারের মন মানসিকতা আছে, সেজন্য আমরা বিষয়টাতে গুরুত্ব দিচ্ছি। আওয়ামীলীগের নেতাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে রাজস্ব আয়ের উৎস থেকে লাভবান করাই ছিলো এই পরিবর্তনের মূল লক্ষ্য।”

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *