স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বৈষম্যমূলক কর কাঠামো অপসারণ করা উচিত
ক.বি.ডেস্ক: সরকারকে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট প্রক্রিয়ায় দেশি-বিদেশি সব প্রতিষ্ঠানের জন্য সমান খেলার ক্ষেত্র নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বৈষম্যমূলক কর কাঠামো অপসারণ করা উচিত। পাবলিক প্রকিউরমেন্টে সমান সুযোগের জন্য অন্যায্য ধারাগুলো সরানো প্রয়োজন। বাংলাদেশে ক্রয় প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে স্বার্থের সংঘাত একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয়। বিডের পরিমাণের পরিবর্তে ক্রয়ের সম্ভাব্য পুরস্কারপ্রাপ্তের ক্ষমতা বিবেচনা করা উচিত।
গতকাল রবিবার (১২ মে) ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ ( আইবিএফবি) আয়োজিত ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট-চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড অপরচুনিটিজ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব মতামত তুলে ধরেন।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড প্রকিউরমেন্ট স্পেশালিস্ট ড. জাফরুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইবিএফবি’র সভাপতি হুমায়ুন রশীদ। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি’র (বিপিপিএ) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শোহেলার রহমান চৌধুরী, আইবিএফবি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট এম এস সিদ্দিকী।
আলোচক ছিলেন আইবিএফবি’র উপদেষ্টা মুহাম্মাদ আবদুল মজিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ শাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির (বিএসিআই) উপদেষ্টা প্রকৌশলী এস এম খোরশেদ আলম, ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ফর ট্রান্সফরমার অ্যান্ড সুইচগিয়ারের (ম্যাটিএস) সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী রবিউল আলম।
প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, “বর্তমান সরকার প্রাথমিক পর্যায়ের ক্রয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ইলেকট্রনিক সরকারি ক্রয় চালু করেছে। ই-জিপি ক্রয় প্রক্রিয়াকে ১৮০ ডিগ্রি পরিণত করেছে। স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার পরিপ্রেক্ষিতে আরও অনেক উপায় রয়েছে। দেশে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে উচ্চ নৈতিকতার মানুষ প্রয়োজন।”
মোহাম্মদ শোহেলার রহমান চৌধুরী বলেন, “দেশে ১০০ ভাগ ক্রয় ব্যবস্থাকে ই-জিপি পদ্ধতিতে আনতে চাই। বিপিপিএ ক্রয় সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে ক্রমাগত সংশোধন করছে। বিদ্যমান তিন-পদক্ষেপের অভিযোগের সমাধানকে এক ধাপে নামিয়ে আনবে প্রতিকার সহজতর করার জন্য।”
ড. জাফরুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশে ক্রয় প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে স্বার্থের সংঘাত একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয়। সরকারী কর্মকর্তা বা তাদের পরিবারের সদস্যরা সংস্থায় একই ক্রয় প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করেন এমন উদাহরণ রয়েছে। বিপিপিএকে কোনো আইন বা নিয়ম প্রণয়নের আগে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে পরামর্শ করার আহ্বান জানান তিনি।”
মুহাম্মাদ আবদুল মজিদ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে সম্পদ ও সময়ের অপচয় কমাতে আর্থিক বছরে সংস্কার আনার সুপারিশ করেন। স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি বিদ্যমান বৈষম্যমূলক কর কাঠামোর পরিবর্তে দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর সমান কর আরোপের ওপর জোর দেন।
এম এস সিদ্দিকী সরকারকে পাবলিক আমদানিসহ সব পর্যায়ে অভিন্ন কর আরোপের আহ্বান জানান। ক্রয় প্রক্রিয়ায় দীর্ঘমেয়াদে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রতিযোগিতামূলক হওয়ার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন তিনি।
অধ্যাপক মুহাম্মদ শাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী কাজের পুরস্কার প্রদান প্রক্রিয়ায় সমতা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রকৌশলী এস এম খোরশেদ আলম পাবলিক প্রকিউরমেন্ট প্রক্রিয়ায় সর্বনিম্ন দরদাতাকে পুরস্কার দেয়ার ধারা বাতিল করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বিডের পরিমাণের পরিবর্তে ক্রয়ের সম্ভাব্য পুরস্কারপ্রাপ্তের ক্ষমতা বিবেচনা করা উচিত।
প্রকৌশলী রবিউল আলম প্রকল্পের পুরস্কার প্রক্রিয়ায় স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অসঙ্গতি দূর করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।-